এ বছর বর্ষাটা বেশ জেঁকে বসেছে। একেবারে আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি-জলের গান। আকাশ অন্ধকার করে, মেঘলা গলির কিনারা ঘেঁষে বৃষ্টি এসে নামছে আমাদের প্রাত্যহিক বারান্দায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যা থেকে রাত্রি। তারপর রাত্রির সুগভীর সুনশান ভেদ করে আবার শুরু হয় বৃষ্টি। এ যেনো পুরো সময় জুড়ে থাকা বৃষ্টির সাহানা সুর- আলিঙ্গন করে রাখে আমাদের একেবারে নিত্য নবীনা মায়ের মতোন।
এ রকম বৃষ্টি যখন ঘরে-বাইরে, হৃদয়ে-বন্দরে নিবিড়তায় ছেয়ে থাকে- তখন ঘরের কোণে বসে কিংবা গরম চায়ের আড্ডায় আমরা প্রায়ই বলে থাকি- এবারে বর্ষাটা যা হচ্ছে- শীতটা এবার কম হবে। অনেকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়; সে কী! তুমি কী করে বললে?
আমরা তখন চট করে বলে দিই- উনো বর্ষায় দুনো শীত। এর অর্থ হলো, যে বছর বৃষ্টি কম হয়, সে বছর শীতের থাকে প্রবল প্রতাপ। আবার বর্ষার প্রতাপে শীত পড়ে ঝিমিয়ে। এ খনার বচন আমাদের সে-ই পুরোনো পড়া। মাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়েছিলাম, পল্লী- সাহিত্য প্রবন্ধে। কী অসাধারণই না ছিলো সে-ই প্রবন্ধটি। কতো আদরের কথা, বাঙলা মায়ের কোলের কথা সে-ই প্রাঞ্জল প্রবন্ধে আমাদের চোখের সামনে মেলে ধরেছিলো অচেনা এক সুখপাখির মতো। মদিনা বিবির কথা, রঁমা-রঁলার কথা, ময়মনসিংহ গীতিকার নির্যাস- ছোট্ট সে-ই প্রবন্ধের মধ্যে কী ছিলো না?
সেই আমাদের প্রথম পল্লী-সাহিত্যের হাতেখড়ি। ফোকলরের বড়ো বড়ো কথা আমরা বুঝতাম না, যা ভাবতাম, তা সত্যিকার অর্থে ভাবনাও ছিলো না- ছিলো বালখিল্যতা; তবুও মনের কোণে লুকিয়ে ছিলো পল্লী-সাহিত্যের জন্য মমতা। ওটুকু মমতা না বুঝেই জন্মেছিলো, চাঁদের আলো যেমন সন্তর্পণে এসে পড়ে নদীর বুকে- সে রকম।
আমাদের জন্য পল্লী-সাহিত্য প্রবন্ধটি লিখেছিলেন জ্ঞানতাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। প্রবন্ধের শুরুতে লেখক পরিচিতি পড়ে আমরা আশ্চর্য হয়ে যেতাম- কতো বিদ্বান মানুষের লেখা আমরা পড়ি, নিজেদের বেশ বড়ো মনে হতো। পরে দেখলাম সত্যিকারের বড়ো মানুষরা ছোটোদের জন্য ছোটোদের মতোই লিখেন। স্টিথ থমসনের সংজ্ঞা ছাড়াও ফোকলোরের উপস্থাপনা হয়ে উঠে প্রাণবন্ত। পাখির শীস, বাউলের গান, ধান ভাঙার গীত, খনার বচনের আলো-আঁধারেও আমি ঠিক চিনে নিতে পারি আমার পল্লী-সাহিত্যকে। যিনি হাত ধরে চিনিয়েছিলেন- তিনি ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তাঁর কতোগুলো পরিচয় দেবো? তাঁকে বোঝার কতোটুকু ক্ষমতাই বা আছে আমার? তিনি ছিলেন এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাতত্ত্ববিদ, জ্ঞানতাপস, ভাষাবিদ, গবেষক, লোকবিজ্ঞানী, অনুবাদক, পাঠ-সমালোচক, সৃষ্টিধর্মী সাহিত্যিক, কবি, ভাষা-সৈনিক। জ্ঞানপ্রদীপ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন বাঙলা ভাষার গবেষণায় অদ্বিতীয়। তিনি ছিলেন একটি কাল, একটি শতাব্দী, একটি জাতি, একটি সংস্কৃতি; অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, ধর্মবেত্তা ও সূফীসাধক। আর সবকিছুর উর্ধ্বে তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক বাঙালি, তাঁর হৃদয়ের আরশিতে বাঙালির যে অবয়বটি ধরা পড়ে- তা তুলনারহিত।
এই ১০ জুলাই তাঁর জন্মদিন; আর ১৩ জুলাই তাঁর প্রয়াণ দিবস। এই ক্ষণজন্মা মানুষটির জন্য রইলো হৃদয় মন্দিরের নৈবেদ্য।
জ্ঞানানন্দ সংগ্রামী থেকে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাবা-মার পঞ্চম সন্তান। তাঁর বাবা মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন ইংরেজ আমলে সরকারি জরিপ বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তাঁর মাতা হরুন্নেছা খাতুনের শিক্ষার প্রতি ছিলো প্রচণ্ড আগ্রহ। তিনি বাড়িতে তাঁর পরিবার ও পেয়ারা গ্রামের অন্যান্য নারীদের শিক্ষা দিতেন। প্রথম দিকে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নাম রাখা হয় মুহম্মদ ইব্রাহীম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পিতার পছন্দে আকিকা করে তাঁর নাম পুনরায় রাখা হয় মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। পরিবারে তিন বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে শহীদুল্লাহ ছোটোবেলায় ছিলেন দারুণ আমুদে ও আত্মভোলা। বাড়ির সবাই আদর করে তাঁকে ডাকতেন ‘সদানন্দ’ বলে। গ্রামের পাঠশালায় পণ্ডিত মশাইরা তাঁকে ডাকতেন ‘সিরাজ দৌলাহ’ নামে। কিন্তু তিনি নিজের নাম রেখেছিলেন ‘জ্ঞানানন্দ সংগ্রামী’।
শিক্ষা তোমার নাম কী?
ছোটোবেলায় ঘরোয়া পরিবেশে শহীদুল্লাহ উর্দু, ফার্সি ও আরবি শেখেন এবং গ্রামের পাঠশালায় সংস্কৃত পড়েন। পাঠশালার পড়া শেষ করে ভর্তি হন হাওড়া জেলা স্কুলে। স্কুলের ছাত্র থাকতেই বই পড়ার এবং নানা বিষয়ে জানার প্রতি ছিলো তাঁর দারুণ নেশা। হাওড়া স্কুলের স্বনামখ্যাত ভাষাবিদ আচার্য হরিনাথ দে’র সংস্পর্শে এসে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষা শেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। স্কুলজীবন থেকেই তিনি আরবি-ফার্সি-উর্দুর পাশাপাশি হিন্দি ও উড়িয়া ভাষা পড়তে শিখেছিলেন। ১৯০৪ সালে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে সংস্কৃতসহ প্রবেশিকা পাশ করেন। এরপর কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে ১৯০৬ সালে এফ.এ পাশ করেন। অসুস্থতার কারণে অধ্যয়নে সাময়িক বিরতির পর তিনি কোলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন ১৯১০ সালে। বাঙালি মুসলমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম অনার্স নিয়ে পাস করেন।
কিন্তু সংস্কৃতের শিক্ষক সত্যবৃত সামশ্রমী একজন মুসলমান ছেলেকে সংস্কৃতের শাস্ত্র ‘বেদ’ পড়াতে কিছুতেই রাজি হলেন না। ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করা সত্ত্বেও সংস্কৃত পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেখে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি দিল্লি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, শহীদুল্লাহকে সংস্কৃত ভাষা পড়তে দেয়া হোক, অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর জন্য একটি সাবজেক্ট চালু করে তাকে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হোক। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদালতের দ্বিতীয় নির্দেশ অনুযায়ী ‘ভাষাতত্ত্ব বিভাগ’ নামে নতুন একটি অনুষদ চালু করে। ফলে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯১২ সালে এ বিভাগের প্রথম ছাত্র হিসেবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর দু বছর পর ১৯১৪ সালে তিনি আইনশাস্ত্রে বিএল ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯২৬ সালে তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ইউরোপ গমন করেন। বাঙলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদাবলী বিষয়ে গবেষণা করে ১৯২৮ সালে তিনি প্যারিসের সোরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এ বছরই ধ্বণিতত্ত্বে মৌলিক গবেষণার জন্যে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা লাভ করেন।
আঠারো শতকের মুসলিম সমাজ, পারিবারিক ঐতিহ্য ও পৈত্রিক পেশা থেকে বেরিয়ে ব্যতিক্রমী মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষা ও জ্ঞানচর্চায় ব্রতী হন। ভাষাবিজ্ঞানের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তিনি সচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন, আয়ত্ত করেছিলেন বাইশটি ভাষা। তিনি বাঙলা, উর্দু, ইংরেজি, হিন্দি, সংস্কৃত, পালি, আসাম, উড়িয়া, আরবি, ফার্সি, হিব্রু, আবেস্তান, ল্যাটিন,তিব্বতি, জার্মান, ফরাসি, প্রাচীন সিংহলি, পশতু, মুন্ডা, সিন্ধী, মারহাটী, মৈথালী ইত্যাদি ভাষা জানলেও ভাষার ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সানন্দে বলতেন, আমি বাঙলা ভাষাই জানি।
যে জীবন জ্ঞানের সে জীবনেই কর্ম গড়ে মাহাত্ম্যের সৌধ
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯১৪ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সিতাকুন্ডু উচ্চ বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন ওকালতি ব্যবসা করেন। তিনি বশিরহাট মিউনিসিপ্যালিটির ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিনেশ চন্দ্র সেনের অধীনে শরৎচন্দ্র লাহিরী রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে সে বছরের ২ জুন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাঙলা বিভাগে প্রভাষক পদে স্থায়ী চাকুরিতে যোগদান করেন। একইসঙ্গে নিখরচে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত মুসলিম সাহিত্য-সমাজের সভাপতি নিযুক্ত হন। পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে ১৯২৮ সালে দেশে ফিরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙলা ও সংস্কৃত বিভাগে প্রভাষকের এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষকের পূর্বপদে যোগদান করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি রীডার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। একই বছর তিনি সংস্কৃত ও বাঙলা বিভাগের অধ্যক্ষ এবং পরে ১৯৩৭ সালে স্বতন্ত্র বাঙলা বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৪৪ সালের ৩০ জুন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙলা বিভাগ থেকে রীডার ও অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং একইসঙ্গে উক্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ছয় বছর কলা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগে বাঙলা সাহিত্য ও বাঙলা ভাষা গড়ে তোলার জন্য মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি সেখানে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে (ফরাসি ভাষার) খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের অস্থায়ী প্রাধ্যক্ষের এবং ফজলুল হক হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর এমেরিটাস নিযুক্ত হন। অধ্যাপনার বাইরে তিনি করাচির উর্দু উন্নয়ন সংস্থার উর্দু অভিধান প্রকল্প, ঢাকায় বাঙলা একাডেমির ‘পূর্ব পাকিস্তান ভাষার আদর্শ অভিধান প্রকল্প’ এবং ‘ইসলামি বিশ্বকোষ প্রকল্প’ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সদস্য, ইসলামিক একাডেমির কার্যনির্বহি কমিটির সদস্য, বাংলা একাডেমির বাঙলা পঞ্জিকার তারিখ বিন্যাস কমিটির সভাপতি, আদমজি সাহিত্য পুরস্কার ও দাউদ সাহিত্য পুরস্কার কমিটির স্থায়ী চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সম্পাদক ছিলেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা ও সম্মলনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মাদ্রাজে Seminar on Traditional Culture in South-East Asia -তে তিনি UNESCO -র প্রতিনিধিত্ব করেন এবং এর চেয়ারম্যান মনোনীত হন।
ভাষা আন্দোলন ও ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করে। এর প্রতিবাদে প্রথম লেখনি ধারণ করেন ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যা প্রবন্ধে বলেন-
পাকিস্তান ডোমিনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের মাতৃভাষা বিভিন্ন, যেমন পশতু, বেলুচি, পাঞ্জাবী, সিন্ধী এবং বাংলা; কিন্তু উর্দূ পাকিস্তানের কোন অঞ্চলেই মাতৃভাষা রূপে চালু নয়। … যদি বিদেশী ভাষা বলিয়া ইংরেজী ভাষা পরিত্যক্ত হয়, তবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ না করার পক্ষে কোন যুক্তি নাই। যদি বাংলা ভাষার অতিরিক্ত কোন দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা গ্রহণ করিতে হয়, তবে উর্দূ ভাষার দাবী বিবেচনা করা কর্তব্য। … বাংলাদেশের কোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার পরিবর্তে উর্দূ বা হিন্দী ভাষা গ্রহণ করা হইলে, ইহা রাজনৈতিক পরাধীনতারই নামান্তর হইবে। ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ পাকিস্তানের প্রদেশসমূহের বিদ্যালয়ে শিক্ষার বাহনরূপে প্রাদেশিক ভাষার পরিবর্তে উর্দূ ভাষার স্বপক্ষে যে অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন আমি একজন শিক্ষাবিদরূপে উহার তীব্র প্রতিবাদ জানাইতেছি।
এই প্রতিবাদ অচিরেই ছড়িয়ে পড়ে শুরু করেছিলো রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের। ডক্টর শহীদুল্লাহ রয়ে গেলেন বিতর্কের কেন্দ্রে। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতির অভিভাষণে তিনি বলেন,
আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশী সত্য আমরা বাঙালি। এটি কোন আদর্শের কথা নয়; এটি একটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙ্গালীত্বের এমন ছাপ রেখে দিয়েছেন যে মালল-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি দাড়িতে ঢাকবার কোন জো-টি নেই।
১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা দিবসে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের ছাত্রদের আহ্বানে তিনি হাসিমুখে এগিয়ে এসে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার মাঝে সশরীরে উপস্থিত থেকে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি; এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে পুলিশি হামলায় টিয়ার গ্যাসে নিগৃহীত হয়েছেন।
মনন ও আধুনিকতার সত্যিকারের রূপ
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জীবন-দর্শনের ভিত্তি ছিলো ইসলামি বিশ্বাস। তিনি যেমন পারিবারিকভাবে ইসলামিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন, ঠিক তেমনি তাঁর সাংসারিক জীবন এবং কর্মক্ষেত্রের সর্বত্র ইসলামের প্রতিফলন ঘটেছিলো। তিনি কখনো ধর্মীয় রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা এবং ধর্মের অপব্যবহারকে প্রশ্রয় দেননি। স্ব-ধর্মে নিষ্ঠাবান থেকে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রচেষ্টা করে গেছেন আজীবন। ১৯৫০ সালে ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে তা প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়ে সুধীজনেরা যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তার খসড়া ছিলো তাঁরই রচনা। বছরের শেষ দিকে আঞ্জুমান-ই-ইশা আৎ-ই-ইসলাম নামে ইসলাম প্রচার সমিতি গঠন করেন তিনি।
বাঙালি মুসলমান সমাজে নারীর ধর্মসম্মত অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি অত্যন্ত উদ্যেগী ছিলেন। তাঁর মতে, পর্দা দু রকম; এক রকম হলো- ইসলামিক পর্দা, সেটি হচ্ছে মুখ হাত-পা ছাড়া সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখা, আর এক রকম হলো- অনৈসলামিক পর্দা, সেটি মেয়েদের চার দেয়ালের মধ্যে চিরজীবনের জন্যে কয়েদ করে রাখে। ইসলামি পর্দায় বাইরের খোলা হাওয়ায় বেরুনো কিংবা অন্যের সঙ্গে দরকারি কথাবার্তা বলা মানা নয়; তবে অনৈসলামী পর্দায় এসব হবার জো নেই। সবার প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে এই অনৈসলামীক পর্দা সরিয়ে দিতে। তা না হলে সবার নারী হত্যার মতো মহাপাপ হবে। নারী যে মসজিদে যেতে পারে, পুরুষের ইমামতিতে নামাজ আদায় করতে পারে এবং শুধু প্রাচীন আরবে নয়, মুসলিম আমলের বাঙলাদেশেও যে এ প্রথা প্রচলিত ছিলো-তিনি তার প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন এবং ঢাকায় নারীদের জামাতে তিনিই প্রথম ইমামতি করেছিলেন।
তাঁর দীর্ঘ জীবনে তৎকালীন পরিবর্তনশীল সামাজিক রুচির যে ধারা চলছিলো তার সাথে তিনি সহ-অবস্থান নীতি গ্রহণ করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষক থাকাকালীন তিনি ছাত্রদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন। আবার Traditional culture of East Pakistan গ্রন্থে তিনি Folk Dance, Folk Music, Folk Arts সম্পের্ক প্রবন্ধ লিখেছেন; শুধু তাই নয়, একটি প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন,
Educated and talented dancers of our country can draw profitable on these indigenous dances and add new color and life to the art of dancing.
স্বদেশী আন্দোলনে তাঁর অবদান
স্বদেশী আন্দোলনের সময় চারদিকে যখন বিদেশী পণ্য বর্জনের ডাক শুরু হয়ে গেছে; ঠিক তখন থেকেই তিনি সাহেবি প্যান্ট-কোর্ট ছেড়ে দিয়ে খদ্দর কাপড়ের আচকান, পায়জামা ও পাঞ্জাবী পরিধান শুরু করে দিলেন। তিনি মনে করতেন, দেশি জিনিস ব্যবহার করলে দেশে পয়সাটা থাকে আর বিদেশী জিনিস ব্যবহারে দেশের পয়সাটা বিদেশে চলে যাবে।
আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর চিন্তার প্রতিফলন
জ্ঞানতাপস এই শিক্ষাবিদ নিজে যেমন আজীবন জ্ঞান সাধনা করেছেন, তেমনি শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন। আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার একজন কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনি। কেবল সমালোচনাই করেননি, তিনি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য নানা ধরনের দিক-নির্দেশনাও রেখে গেছেন। তৎকালীন সরকারের অনুমোদিত নিউস্কীম মাদ্রাসা, ওল্ডস্কীম মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষা এই তিন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেন তিনি। তাঁর মতে, এই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষাক্ষেত্রে কেবল গণ্ডগোলই সৃষ্টি করেছে এবং মুসলমান সমাজে অনৈক্য এনেছে। এই শিক্ষাব্যবস্থায় মুষ্টিমেয় মানুষের অধিকার তিনি কখনো মেনে নিতে পারেননি। তাই শিক্ষার কথা যখনই বলেছেন তখনই তিনি সার্বজনীন শিক্ষার অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তা ঘোষণা করেছেন। দেশের প্রতিটি নাগরিকের ষোলো বৎসর বয়স পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন করা সরকারের আশু কর্তব্য বলে তিনি বিবেচনা করতেন। মাদ্রাসা শিক্ষার বর্তমান প্রণালীকে তিনি সময় ও শক্তির অপচয় বলে মনে করতেন। শিক্ষাক্ষেত্রে যে একটিমাত্র ব্যবস্থার পরিকল্পনা তাঁর ছিলো, সেখানে ধর্মশিক্ষার একটা বিশিষ্ট স্থান ছিলো।
বাঙলা ভাষার গবেষণায় তিনি হিমালয়সম
বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটি নিজস্ব আসন আছে। এই দুই ক্ষেত্রেই তিনি কিছু মৌলিক ধারণার পরিচয় দিয়েছেন। ১৯২০ সাল থেকে নানা প্রবন্ধ লিখে তিনি নিজের যে বক্তব্য তুলে ধরতে থাকেন তার চূড়ান্ত ও ধারাবহিক রূপ দেখা যায় তাঁর বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত (১৯৫৬) গ্রন্থে।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এক স্বতন্ত্রধর্মী গবেষক ছিলেন। তাঁর গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিলো জটিল দিকের গ্রন্থিমোচন এবং নবতর ব্যাখ্যা। বাঙলা লোকসাহিত্যের প্রতিও তিনি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। গবেষণাগ্রন্থের পাশাপাশি তিনি সাহিত্য এবং শিশু সাহিত্যের অনেক মৌলিক গ্রন্থও রচনা করেন। তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন। বাঙলার গঠন অনুসারে তিনিই প্রথম ১৯৪৩ সালে বাংলা ব্যাকরণ রচনায় হাত দেন। তাঁর অবিস্মরণীর কৃতিত্ব হলো বাংলা একাডেমি থেকে দু খণ্ডে প্রকাশিত বাংলা ভাষার আঞ্চলিক অভিধান সম্পাদনা। তিনিই প্রথম ১৯৪০ সালে ভারতের মুসলিম শিক্ষা কংগ্রেসে পূর্ব বাঙলায় ভাষা চর্চা উন্নয়ন ও গবেষণার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রস্তাব করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকার কার্জন হলে অনুষ্ঠিত পূর্ববঙ্গ সম্মেলনে তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বাংলা একাডেমি’ রাখার প্রস্তাব করেন।
অন্য আলোর গান
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যখন বাঙলা ভাষার প্রথম সহজবোধ্য বাংলা ব্যাকরণ লিখলেন তখন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুশি হয়ে তাঁকে একটি চিঠি লিখেন। ওই চিঠিতে তিনি বলেন-
আপনার বাংলা ব্যাকরণখানি পড়ে বিশেষ সন্তুষ্ট হয়েছি। ব্যাকরণখানি সকল দিকেই সম্পূর্ণ হয়েছে। এতে ছাত্রদের উপকার হবে। বইখানি আমার শান্তি নিকেতনের বাংলা বিভাগের অধ্যাপকদের দেব। তাঁরা তা শ্রদ্ধাপূর্বক ব্যবহার করবেন।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ শিশু-কিশোরদের জন্য আঙুর পত্রিকা বের করার পর একে স্বাগত জানিয়ে পশ্চিম বাংলার বিখ্যাত লোকসাহিত্যিক ড. দীনেশ চন্দ্র সেন বলেন,
আপনার মত এত বড় পণ্ডিত, যাহার বিদ্যার পরিধি আয়ত্ত করিবার সাধ্য আমাদের নাই, যিনি বেদ-বেদান্তের অধ্যাপক, ফার্সি ও আরবী যার নখদর্পণে, যিনি জার্মান ব্যাকরণের জটিল বুহ্য ভেদ করিয়ে অবসর রঞ্জন করে-তিনি একটি ‘আঙুর’ হাতে নিয়া উপস্থিত!
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও তাঁর পরিবার
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জীবনসঙ্গীর নাম মরগুবা খাতুন। তিনি সাত পুত্র ও দুই কন্যার জনক। মাহযূযা খাতুন, আবুল ফযল মুহম্মদ সফীয়্যুল্লাহ, মাসব্দরা খাতুন, আবুল কালাম মোস্তফা ওলিয়ুল্ল্যাহ, আবুল করম মাহমুদ যকীয়্যুল্লাহ, আবুল জামার মহামেদ তকীয়্যুল্লাহ, আবুল বয়ান মুজতাবা নকীয়্যুল্লাহ, আবুল ফসল মুতাওয়াক্কিল ববীয়্যুল্লাহ, আবুল খায়ের মুর্তজা বশীরুল্লাহ।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন আজীবন ছাত্র এবং আজীবন শিক্ষক। সারাটি জীবন শুধু জ্ঞানের পিছু ছুটেছেন এবং জ্ঞান বিলিয়ে দিয়েছেন সবার মাঝে। অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খাঁ ও আবুল কাশেম সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মিরপুরে প্রতিষ্ঠা করেন বাঙলা কলেজ। মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণেই শিক্ষক তিনি; একই কারণে দেশপ্রেমিক এবং মনেপ্রাণে বাঙালি।
জীবনের ওপার সন্ধ্যায় যা আছে
জীবনভর ভাষা ও সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ এই জ্ঞানতাপস পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘প্রাইড অফ পারফরম্যান’ এবং ১৯৬৭ সালে ফরাসি সরকার তাঁকে ‘নাইট অফ দি অর্ডারস অফ আর্ট লেটার্স’ পদকে ভূষিত করেন। আজীবন উদ্যমী এই মানুষটি সর্বদা ছিলেন কর্মচঞ্চল। ১৯৬৭ সালে ২৭ ডিসেম্বর প্রথম সেরিব্রাল থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হন এই জ্ঞানানন্দ প্রবাদপুরুষ। জীবন সায়াহ্নে যখন হাসপাতালের বিছানায়, তখন ডান হাতের লেখার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। খুব দুঃখিত হয়ে বললেন, ‘ভালো হয়ে নিই, আমার বাম হাতে লেখার অভ্যাস করবো’। ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই সুদীর্ঘ কর্মজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে তাঁর। ঐতিহাসিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল সংলগ্ন মূসা খাঁন মসজিদের পশ্চিম পাশে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
শেষ নাহি যে
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাঙলা ভাষা ও বাঙলা ব্যাকরণের জন্য যা করেছেন তা প্রবাদ প্রতিম। বাঙলা ভাষাকে এবং বাঙলার ক্রোড়ে লালিত আজন্ম সুধা বিধৌত শিল্প-সাহিত্যকে তিনি সুউচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। কিন্তু আমাদের দুর্বলতা এবং কাপুরুষতা এতোটাই রূঢ় যে এই মহামনীষী এখন বছরের দুইদিন সংবাদপত্রের শেষ পাতায় মাত্র এক কলাম দু-ইঞ্চি জায়গা পান- তাও সব পত্রিকায় পান না। এটা আসলে আমাদেরই অপমান এবং আমরাই এতে ছোটো হই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি তাঁর মেধা ও শ্রম উজাড় করে দিয়েছেন। কিন্তু একবার তাকাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে- এতো বছরেও সেখানে ফোকলোর বিভাগ খোলা হলো না; মনে প্রশ্ন জাগে- কেনো? অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকই বিভাগটি খোলা হয়েছে এবং এ বিভাগের মাধ্যমে ফোকলোর নিয়ে ভালো কাজও হচ্ছে। আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
জ্ঞান-তাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সড়ক নামকরণ করা হয়েছে আনন্দবাজারের রাস্তাটির। হায় রে বেহাল দশা! মাদকের রাজ্যে বুড়ি চাঁদও সেখানে লজ্জা পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের কতোজন শিক্ষার্থী জানে এই মহান মানুষটির সম্বন্ধে? এ অজ্ঞতা আমাদের লজ্জা এবং আমরা নির্লজ্জের মতো একে ধারণ করছি।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ঘুমিয়ে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলস্থ মুসা খানের মসজিদের পাশেই। প্রতিদিন হয়তো চেনা-অচেনা নানা পাখি তাঁকে গান শুনিয়ে যায়, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। আর দূরে কোথাও কোনো এক তরুণ গবেষক হয়তো বুকের তোরঙ্গে তুলে রাখা মমতার স্পর্শে গবেষণার আকাশগঙ্গা সাজায় বাঙলা ভাষাকে নিয়ে। পাখি আর গবেষকের এই গল্পে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কিংবদন্তী হয়ে থাকেন। আজ থেকে হাজার বছর পরেও থাকবেন। এবং তারও হাজার বছর পরে। ইতিহাসের ঘরে প্রদীপ জ্বালালে এর চেয়ে বড়ো কোনো সত্য আর চোখে পড়ে না।