প্রজন্মের মননে গেরিলা তৎপরতার কলাকৌশল

বই না বলে গেরিলা অপারেশনের ম্যানুয়াল বলাই বরং ভালো— অন্তত আমার বিবেচনায়। তবে এই প্রচেষ্টা সম্মুখসমরে নয়, প্রজন্মের বিভ্রান্তিকর মগজে আর প্রায় ক্ষয়ে-যাওয়া মননের অলিতে-গলিতে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমরা বুঝি, গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের পায়ের তলার মাটি কেমন আলগা হয়ে গেছে। নরম পলিমাটির বদলে সেখানে ফাঁদ পেতেছে বিভ্রান্তির চোরাবালি। আশাবাদী অগ্রজেরা…

রক্তবমির দাগ

না। পৃথিবীতে আর কোনো কলেরা হাসপাতাল পাওয়া যাবে না, যেখানে শ্রী ঋত্বিককুমার ঘটকের রক্তবমনের চিকিৎসা হতে পারে। এই উজ্জ্বল চক্ষু মাতাল দণ্ডিত বন্দীর মতো তাঁর সৃষ্টির চাবুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সভ্যতার সদর দরজায়— এবং আমরা, এই কসমোপলিটন পৃথিবীর বাসিন্দারা, এই ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীর শবযাত্রায় অংশগ্রহণের পূর্বে তাঁর সৃষ্টির দিকে তাকাতে পারি এবং নির্দ্বিধায় সাহসী হতে পারি…

‘বইয়ের’ বই কই?

ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক— বইয়ের সঙ্গে কিন্তু আমাদের জীবনের অনেকখানি সময় কাটে। কেউ বই পড়তে ভালোবাসেন, কেউ বই বেঁচতে ভালোবাসেন। আজকাল অবশ্য একটি সৌখিন শ্রেণি তৈরি হয়েছে, যারা বই সাজিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। বিষয়টি চমকপ্রদ। বই আমাদের চিন্তার সৌন্দর্য বর্ধনের সঙ্গে সঙ্গে ঘরেরও সৌন্দর্য বর্ধন করছে। উপযোগিতা বাড়ছে। এটাও তো একটি প্রাপ্তি। স্কুলে পড়ার সময়…

বইমেলা খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন

অমর একুশে বইমেলা বাঙালির এক অলৌকিক পবিত্র আয়োজন। একুশের সূর্যমুখী চেতনাকে ধারণ করে বইমেলা আমাদের মাথা নত না করার এক দৃপ্ত প্রত্যয়। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা উদ্বেল হই বইমেলার তরঙ্গে, আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে নতুন বইয়ের প্রতীক্ষা। সারা বছর এই একটি মেলার জন্য কেবল লেখক-প্রকাশকরাই নন; আগ্রহ নিয়ে বসে থাকেন সারাদেশের নানা প্রান্তের মানুষ। গণমাধ্যম…

আড্ডার বই চাই

গতকাল ছিলো বুদ্ধদেব বসুর জন্মবার্ষিকী। এই প্রসঙ্গেই আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে মোনে হলো— বাঙালির কোনো আড্ডা নেই। ছোটোবেলা আমাদের কাছে আড্ডা মানে ছিলো যাচ্ছেতাই ব্যাপার। একেবারে উচ্ছন্নে না গেলে কেউ আড্ডাবাজিতে নাম লেখায় না। খানিক বড়ো হয়ে বুদ্ধদেব বসুর আমার যৌবন পড়ে দেখলাম, নাহ— ব্যাপারটা মোটেই খারাপ না যেহেতু ইংরেজি বিভাগের ডাকসাঁইটে ছাত্রও নিয়মিত…

রবীন্দ্র-উপন্যাসের যাত্রা: বউ ঠাকুরানীর হাট

রবীন্দ্রনাথ কে? এ প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে হলে রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হবে, তাঁর সামগ্রিক সৃষ্টিসত্তার কাছে নিজেকে মেলে ধরতে হবে। এটা এই জন্য যে- রবীন্দ্রনাথ নিজেকে বিকশিত করেছেন ক্রমে ক্রমে, কুসুমের মতো; তিনি ধীর লয়ে অবগাহনের সঙ্গীত হয়ে উঠেছেন এবং ক্রমান্বয়ে সুরের ধারায় সৃষ্টি করেছেন নবতর তরঙ্গ। তাই, রবীন্দ্রনাথই একমাত্র বাঙালি, যাঁকে খুঁজে পড়তে হয় এবং পড়তে…

‘শব্নম’: বিরহিনী নিশীথিনীর অশ্রুশিশির

ভালোবাসার বৃষ্টি নাকি ভেজায়। মানে ভিজতে হয়। চেতনার রঙে সবুজ পান্নার শরীরে জমে ভালোবাসার শিশির; হৃদয়জ এবং তার চেয়েও বেশি কিছু, কিন্তু মোহনীয় নয়- মোহ নেই সে-ই ভালোবাসার প্রবাদ শরীরে। এমন ভালোবাসার নির্যাস পেতে হলে হৃদয়কে ‘হৃদয়’ করে গড়ে তুলতে হয়। কেবল হৃদয় হলেই হয় না, তাকে দার্শনিক করে গড়ে তুলতে হয়, কখনো ছাঁচে ফেলে,…

‘কবি’- তারাশঙ্করের তর্পণ ও তপস্যার দর্পণ

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাঙলা কথাসাহিত্যের এক প্রাতঃস্মরণীয় নাম। একালে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের আগ্রাসী তৎপরতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে মানব অস্তিত্বকে; নৈরাজ্য-নৈরাশ্য-অনিশ্চয়তা-ক্লেদ-শঙ্কা আর মনস্তাপে বৃহদাংশ মানুষ খনন করেছে আত্মপ্রতারণার নির্বিঘ্ন বিবর। অপরদিকে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ইতিবাচক দৃষ্টান্ত অধিকার সতর্ক একাংশ মানুষকে করেছে আশাবাদে সন্দীপিত, প্রাণিত করেছে স্বপ্নময় আলোকময় ভবিষ্যত রচনায়। তবুও প্রত্যাশার বিপরীতে নিরাশার আধিপত্যই মহাসমরোত্তর বিশ্বমানসের প্রবল ও…

একাত্তরের দিনগুলি: দগ্ধ ও কোমল মৃত্তিকার ইতিহাস

একটি দিনলিপি। প্রাত্যহিক জীবনের ভাষায় রচিত। বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ এক অর্জনের ইতিহাস এ দিনলিপির বিষয়বস্তু। এটি কোনো মহাকাব্য নয়; এর অন্তঃস্রোতে যখন তখন শিল্পের মহাবাদল নেমে আসেনি। এবং তারপরও- এটি সকল মহাকাব্যের অতীত, বান-ভাসানো এক মহার্ঘ শিল্পের প্রণয়োচ্ছ্বাসে ঋদ্ধ, বিদগ্ধ। বাঙলা ১৩৯২ সনের ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬) মাসে এটি প্রথম প্রকাশিত হয় এবং এখনও নতুন। বৈশাখ, ১৪১৭…