কারও ভালো লাগার দায় থেকে লেখাটি লিখছি না। ভালো যে লাগবে না, তা তো শিরোনামেই আমি উল্লেখ করেছি। বাঙলা নববর্ষ নিয়ে ভাবতে গেলে আমার মনে হয়, আমাদের নববর্ষ উদযাপনের ধারটি বদলে যেতে পারতো। বাঙালির ইতিহাস কেবল উদযাপনের নয়, বাঙালির ইতিহাস এক গভীর দার্শনিক চিন্তার ইতিহাস। বাঙালির সবটুকু মহিমান্বিত ধারায় এক অভূতপূর্ব চিন্তারেখা খেলা করে। সেই চিন্তার দার্ঢ্যতাই আমাদের পথ দেখায়, সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমরা যদি আমাদের সামগ্রিক ইতিহাসের প্রেক্ষণে চোখ রাখি, তাহলে দেখতে পাবো- কতোটা গভীর দর্শন খেলা করে আমাদের সাহিত্য-শিল্প আর জীবনাচরণে। কিন্তু তার কোনোটাই আজ অবশিষ্ট নেই, নেই দর্শনের ছোঁয়া। আমরা এখন কেবল উদযাপনের রীতিবদ্ধ ফ্রেমে বন্দী। আমাদের সামনের পথ কী হবে, তা খুঁজে দেখতে হবে আমাদের অতীতের ইশতেহার থেকে। এ বাক্য কেবল আপ্তবাক্যই নয়, এ বাক্য আমাদের ভবিষ্যতের একটি দিকরেখা। আমাদের রাজনীতি, আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা, আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পথরেখা- সবকিছু উৎসরিত হয়েছে একটি ঐশ্বর্যমণ্ডিত মানব-সংলগ্ন মৃত্তিকা থেকে। এ কথা কেউ মানুক আর না মানুক, এ কথাই সত্য যে, আমরা আমাদের নিজস্ব ভাবনার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছি। আমাদের পথ আমরা হারিয়েছি। আমাদের স্বপ্ন এখন স্বপ্নদোষে আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের মাঝে প্রেম নেই, অশ্লীলতা আর চিন্তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে; আমাদের মাঝে রাজনীতি নেই, কেবল দুর্নীতি আর সারমেয়পনা রয়েছে; আমাদের এখন বিশ্ববিদ্যালয় নেই, কেবল ছাত্র-হত্যার ভাগাড় আর কূপমণ্ডুক কিছু দালান-কোঠা রয়েছে; আমাদের কোনো সংস্কৃতি নেই, কেবল নন্দনকানন আর ললিতকলা আওড়ানো কিছু ভাঁড় রয়েছে। আমাদের শিক্ষকদের অধিকাংশই এখন দালাল, গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকাংশই মিডিওকার, সংস্কৃতিকর্মীদের প্রায় সবাই আমোদ-প্রমোদের দালাল, সাহিত্যিক-শিল্পী যারা, তারাও এখন মোটামুটি বরাহনন্দনের কাতারে নাম লিখিয়েছে। আমাদের জাতীয় জীবনে ধর্ম আছে, দর্শন নেই; নেতা আছে, সততা নেই; উৎসব আছে, প্রাণ নেই; লক্ষ লক্ষ সনদধারী অন্ধ আছে, একজন প্রতিভাবান-জ্ঞানী স্বপ্নচারী নেই। রাষ্ট্র এখন বৃদ্ধ আর আটকুঁড়ে লোকে পরিপূর্ণ। কোথাও প্রেরণা নেই, দ্রোহ নেই, স্পর্ধা নেই, বিপ্লব নেই। বেশ্যালয় থেকে বিচারালয় পর্যন্ত বৃদ্ধ, অকেজো আর নষ্ট পুঁজে বেড়ে ওঠা কিছু আপোষকামী লোক, কোনো সাহসী, সোজা মেরুদণ্ডের তরুণ নেই। সারা বাঙলাদেশ এখন এক বিনয়ের আস্তাকুঁড়, কোথাও স্পর্ধা নেই, কোথাও দ্বিমত পোষণ করা নেই। সকলেই মেনে নিচ্ছে, কেউ প্রতিবাদ করছে না; কেউ বলছে না- এটা মানি না, এটা মানা যায় না। সবখানেই মেনে নেবার প্রতিযোগিতা। যে যতো বেশি মানতে পারছে, সে ততোবেশি বিনয়ী। সে ততোবেশি ভালো আর সেই ততোবেশি লাভবান। রাষ্ট্র এখন বিনয়ীদের ধরে ধরে আনছে। বিনয়ীরা কখনও মানুষ হয় না, এরা হয় অভিনেতা এবং নিম্নমানের অভিনেতা। এরা মানুষ হয়ে থাকার ভান করে। সুযোগ বুঝে কথা বলে। এদের কদর আছে টেলিভিশনের টক শো থেকে শিল্পকলার অডিটোরিয়াম পর্যন্ত। স্পর্ধা নেই, আঙুল তুলে কথা বলার লোক নেই, মাথা উঁচু করে তর্ক করার মানুষ নেই, দ্বিমত করে না কেউ, পাছে সমস্যা হয় কিছু। দাস হয়ে যাবার একটি প্রবণতা আমাদের মাঝে এখন প্রকট। ধর্মগুরু দেখলেই আমরা তাদের দাস হয়ে যাচ্ছি, রাজনৈতিক নেতার দাস হচ্ছে সারা বাঙলার প্রায় সব মানুষ, টক শোজীবীদের দাস হচ্ছে কেউ কেউ, কোথাও কোথাও আছে মিডিয়ার দাস। দাসত্ব এখন আমাদের কাছে পরোম পূজনীয়। দাস হতে পেরে আমরা গর্বিত হই। রবীন্দ্রনাথ পড়ে আমরা শো- পিস হয়ে যাচ্ছি, মানুষ হতে পারছি না; নজরুল পড়ে আমরা মুসলমান হয়ে গেছি, মানুষ হতে পারছি না। সুকান্তের কবিতা পড়ে আমরা পার্টি মেম্বার হচ্ছি, সত্যিকারের বিপ্লবী হচ্ছি না। আমরা বেমালুম ভুলে গেছি, আমাদের পূর্বসুরী ছিলেন সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন আহমেদ বা প্রীতিলতার মতো শিখরসম মানুষেরা- যাঁরা কোনোদিন কারও তাঁবেদারি করেননি, বরং উচ্চকণ্ঠে স্পর্ধা দেখিয়েছেন, আঙুল তুলে কথা বলেছেন।
এই প্রেক্ষিতে আমাদের উৎসবগুলো আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আগেই বলেছি, আমাদের উৎসবগুলোকে আমরাই বানিয়েছি কিছু উদযাপন; এর ভেতরে নেই কোনো দার্শনিক সত্য, নেই কোনো উচ্চকিত বোধ। অথচ উৎসবগুলোর পেছনে আছে হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাস-লালিত দর্শন আর নির্যাস। নববর্ষ আমাদের প্রাণের উৎসব। প্রতিটি বাঙালি এই উৎসবেই নিজেদের আত্ম-প্রতিকৃতি দেখে- দেখে পুরাতনী চোখে, দেখে নতুনের চোখে। একটি বছরের বিদায়, নতুন বছরের আগমন- এই সরল সত্যের বাইরেও নববর্ষ উদযাপনের রয়েছে গভীর অনুষঙ্গ। কীভাবে? না, কেবল এই জন্য নয় যে, এর উৎসটা বড্ডো গভীরে প্রোথিতো। বরং এই জন্য যে, আমরা দেখেছি নববর্ষ উদযাপনকে সব সময়ই বাধাগ্রস্থ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে মৌলবাদী অপগোষ্ঠী। প্রশ্ন আসতে পারে, এ থেকে কী প্রমাণিত হয়? প্রমাণিত হয় যে, বাঙলার মানুষের যে চিরায়ত ইতিহাস আর দর্শন- সেই দর্শনের বিরুদ্ধ অবস্থান মৌলবাদীদের। ধর্ম কতোটুকু সত্য, সে প্রশ্নের আলোচনা অন্য; কিন্তু ধর্ম কতোটুকু মানব-সংলগ্ন, তার আলোচনা করা যেতেই পারে। একটি জাতির পরিচয় নির্ধারিত হয় তার নৃ-তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে, কখনোই কোনো ধর্মীয় বিশ্লেষণে নয়। বাঙলাদেশে মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা আছেন, কিন্তু তার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মাবলম্বীদের কোনো মিল নেই। কিন্তু বাঙলাদেশের মানুষের কৃষ্টির সঙ্গে মেলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কৃষ্টি। অর্থাৎ ধর্ম নয়, জাতিগত ইতিহাসই একটি জাতির জন্য পরিচয় নির্ধারক। কিন্তু মৌলবাদী অন্ধ গোষ্ঠী সব সময়ই এ পরিচয়কে মুছে দিতে চেয়েছে। তারা জানে, মানুষের কাছে দর্শনের শক্তি উন্মোচিতো হলেই, মানুষ তা গ্রহণ করলেই, আর তাকে ফেরানো যাবে না অন্ধ যূপকাষ্ঠে। মানুষ তখন আলোর সন্ধান করবে। ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব আরবে যেভাবে হয়েছে, আমাদের ভূ-খণ্ডে সেভাবে হয়নি। আমাদের ভূ-খণ্ডে ইসলাম মিশেছে এদেশের মানুষের সঙ্গে- সূফী সাধকদের হাত ধরে। অর্থাৎ ধর্ম এখানে সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে গেছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্ধকার দেশগুলোতে এখনও ইসলাম হলো হাতিয়ার। তারা ইসলাম দিয়ে পীড়ন করে, তারা ইসলাম দিয়ে মানুষ হত্যা করে। পাকিস্তানিরা সেই ইসলামকে ধারণ করে। বাঙলাদেশের জামাত-শিবিরও সে পীড়ণের ইসলামকে ধারণ করে। কারণ, ইসলাম শান্তির ধর্ম হলে তার মূল কাজ হলো শান্তিময় মণিমুক্তোর সঙ্গে। সেই শান্তিময় মণিমুক্তো হলো আমার জাতির ঐতিহ্য লালিতো আলো- অর্থাৎ আমার সংস্কৃতি। বাঙলাদেশের ইসলামের সাধকগণ কখনোই পহেলা বৈশাখ বা আমাদের সাংস্কৃতিক উৎসবগুলোকে অস্বীকার করেননি, করেননি কারণ, তাঁরা জানেন- আমার জাতিগত সংস্কৃতি ধর্ম বিযুক্ত; ধর্ম এখানে কার্যত শূন্য ভূমিকা পালন করবে। করেছেও তাই। চৌদ্দশ বছরের আগের ইসলাম যে অকেজো এবং মোটামুটি বাতিল, এ বিষয়ে আলোচনা করতে খুব বেশি জ্ঞানী হতে হয় না, সামান্য সাধারণজ্ঞান থাকলেই হয়। মধ্যপ্রাচ্যে আমরা দেখেছি, কোরআন নিয়ে নানা রকমের গবেষণার নামে, কোরআনের নানা রকম ব্যাখ্যা করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের কাছে, সেটা গুরুত্ব বহন করে না। তারা ধর্মকে একটি আচারের আর বিশ্বাসের ফ্রেমে রাখেন, এবং আমাদের রাষ্ট্র চমৎকারভাবে এই স্বপ্নটা দেখেছিলো যে- ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। সেই প্রেক্ষিতেই হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধ। যেহেতু পাকিস্তান একটি ব্যর্থ এবং অন্ধ রাষ্ট্র, যেহেতু পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটাই হলো একটি মধ্যযুগীয় বর্বর রাষ্ট্র, সেহেতু জাতিগত ধারণায় বা সাংস্কৃতিক ধারণায় তার সঙ্গে আমাদের সহ-অবস্থান চলে না। আর বর্বরদের শোষণ-নির্যাতন তো আছেই। সেই প্রেক্ষিতেই হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আমরা নতুন রাষ্ট্র পেয়েছি ধর্মনিরপেক্ষতার রাষ্ট্র হিশেবে, গণতন্ত্রের রাষ্ট্র হিশেবে, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিশেবে। কিন্তু জামাত-শিবির সে মধ্যপ্রাচ্যের অন্ধ-অনুগত ধর্ম কপচিয়ে, পাকিস্তানের মতো একটি নোংরা রাষ্ট্রের ভূতকে আমাদের মধ্যে বিষের মতো ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করেছে বিগত বিয়াল্লিশ বছর ধরেই। আমাদের রাজনৈতিক রথি-মহারথিরা সে জামায়াতের মল-মূত্র পান করেছে, কিন্তু তাদের নিষিদ্ধ করেনি। বাঙলাদেশেটা এমনিতেই হতাশায় নিমজ্জিত নয়, এর পেছনে নানা কারণ আছে। আমাদের আফসোস, এই হতাশা থেকে উত্তরণের জন্য এমন একজনও নেই যে, চিৎকার করে সত্য কথাটা বলবে। সবাই বিনয়ী আর মিনমিনে। রাজনীতিবিদরা চূড়ান্ত মাত্রায় আপোস করছে প্রতিদিন। বিকিয়ে দিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ইসলামী ব্যাঙ্ক হয়ে উঠছে তাদের প্রধান অর্থনৈতিক আশ্রয়। ইবনে সিনার এক্স-রে রিপোর্টে চিকিৎসা চলছে সেকুলারিজমের। সত্যি সেলুকাস!
আমাদের হতাশাটা আরও গভীর ও তমসাচ্ছন্ন হয়, যখন দেখি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর আচরণও হয়ে যাচ্ছে প্যাকেজ টুরিজম কোম্পানীর মতো। এদের প্রতি বছর কিছু নির্ধারিত বিষয় থাকে- এর বাইরে এরা কিছু করতে পারে না, কার্যত চায় না। অথচ, এদের প্রতি মানুষ আস্থা রাখতে চায়। প্রতিবছর বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এলেই আমার মনে পড়ে ১৪০৮ সালের পহেলা বৈশাখের কথা। ২০০১ সালের সেই দিনে কুৎসিত মৌলবাদী চক্র বোমা হামলা চালায় রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। দশজন নিহত হন, ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু এরপর থেকে প্রতিটি বর্ষবরণ অনুষ্ঠাইে আমরা দেখি, সবাই যেনো নিশ্চুপ। যেনো ভুলে যেতে চায়, ১৪০৮ সালে একটা পহেলা বৈশাখ হয়েছিলো। সেখানে হিংস্র থাবা বসিয়েছিলো মৌলবাদী অপগোষ্ঠী। এর বিচারের দাবিও করে না কেউ, এমনকি ‘ছায়নট’-ও না! এখানেই আশ্চর্য হবার বিষয়। যে চেতনা আর বোধের পাটাতনে দাঁড়িয়ে ছায়ানট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখান থেকে তো বিদ্রোহ উৎসরিত হবার কথা। তীব্রতম দ্রোহের মশালে প্রজ্জ্বোলিত রবীন্দ্রনাথের সৌম্য মুখ-দর্শনের কথা। প্রতি বর্ষবরণেই তো উচিৎ ছিলো সেই ভয়াল বর্ষবরণটিকে স্মরণ করা। সেই মানুষগুলোকে কাছে ডাকা। কিন্তু সেই ক্ষতস্থান বেমালুম ভুলে গেলো ছায়ানট? না কি ক্ষতস্থানে এনাসথেসিয়া করানো হয়েছে? অতো ব্যথা বোধ আর নেই।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, শিল্পটা কার জন্য? এ বিতর্ক পুরোনো। আমার কাছে শিল্প হলো শৈল্পিক সরণিতে দাঁড়িয়ে মানুষের চোখে চোখ রাখা। শিল্পীর দ্রোহে শিল্প থাকবেই। একই সঙ্গে শিল্পী কাজ করবেন মানুষের জন্য- তাও হবে শৈল্পিক ধারায়। কিন্তু ছায়ানটের এই মূঢ় নীরবতা আমাদের ব্যথিত করে। মনে হয়, এরা যেনো রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী কিংবা তাসের দেশ পড়েননি। কেবল চার আনার পাঠকদের মতো শেষের কবিতা পড়ে রবীন্দ্রনাথকে বেশ একজন প্রেম প্রেম মানুষ বলে ঠাওড়েছেন। কিন্তু তাও তো হচ্ছে না। প্রেমের জন্যও তো একটি অনবদ্য আর সব মাড়িয়ে যাবার হৃদয় লাগে। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয়, ‘ছায়ানট’- এর হৃদয়ও নেই। থাকলে এতোগুলো মানুষ- যারা নিহত হয়েছেন, এতোগুলো মানুষ- যারা আহত হয়েছেন; তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলো না? মনে পড়লো না তাদের কথা কোনো বর্ষ বরণেই? ছায়ানট কি জানে, এখনও মৌলবাদী শক্তি প্রতিদিন চোখ রাঙায়, আমাদের ট্যাক্সের টাকায় জঙ্গি তৎপরতার হুমকি দেয়। ছায়ানট কি মনে করে লড়াইটা শেষ? যদি তাই হয়, তবে বলতে বাধ্য হচ্ছি- রবীন্দ্রনাথকে ফ্রেমবন্দী করে, অ্যাকাডেমিক আলোচনায় আর শাড়ি-পাঞ্জাবির নীতি নির্ধারণীতে বড়োজোর চোখ খোলে, মন খোলে না। ওতে মানুষের এই ভাবটা আসে যে, ছায়ানটে যাচ্ছি, কখনও এই বোধটা আসে না যে- মানুষ হয়ে জন্মেছি। আমাদের সামনে এখনও দীর্ঘ ব্যাপ্ত পথ। মৌলবাদী অপশক্তিকে প্রতিদিন মনে করিয়ে দিতে হবে, যে আঘাত তুমি করেছো, আমি পাল্টাঘাতে প্রতিশোধ তুলবো। যে হিংস্রতা তুমি দেখিয়েছো, আমি কবিতা আর গান দিয়ে তার জবাব দেবো। বর্শা-বল্লম কোনোদিন বাঙালির হাতিয়ার ছিলো না, বাঙালির হাতিয়ার তার সংস্কৃতি। মৌলবাদকে উচিৎ জবাব দিতে হলে, আমাদের লড়াইয়ে নামতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। আমার সংস্কৃতি, আমার সাহিত্য, আমার শিল্পের হাত ধরে। ছায়ানট ভবনটা তো ছোট্ট একটা জায়গা, ওখানে তো সংস্কৃতি ডানা মেলে না। বাঙালি সংস্কৃতি আকাশের নিচে, মানুষের যূথবদ্ধতায় ডানা মেলে। যতোবার ছায়ানট মনে করবে, তারা ভুলে থাকবে সেই আক্রান্ত বর্ষবরণটি, ততোবার ছায়ানট এক পা দু পা করে আসলে ভুলেরই অতলে প্রবেশ করবে। বিচ্ছিন্ন হবে গণ-মানুষের চেতনা থেকে। হয়ে উঠবে প্রাসাদ শিল্পী। বাঙলাদেশে প্রাসাদ শিল্পীরা আর যাই করুক কোনোদিন মানুষের মননে রবীন্দ্রনাথকে পৌঁছে দিতে পারে নি। কারণ রবীন্দ্রনাথ সস্তা, ভীরু আর বাতিলদের সম্পত্তি নন।