আর্তনাদের কি কোনো পরিভাষা হয়? কিংবা হাজারটা পরিভাষা করে দিলেও আমাদের প্রথাগত সাধের সমাজের কানে কি সে-ই আর্তনাদ পৌঁছায়? মৃতদেহ কি কখনও দেখায় নিজের পরিচয়পত্র? কিংবা দেখালেও এই ভদ্রলোকের সমাজ, এই শান্তির সমাজ তা মনে রাখবে? প্রশ্নগুলো দার্শনিকের জিজ্ঞাসার মতো লাগছে কি? হতে পারে; কারণ দর্শন মানে তো ‘দেখা’ও— দেখতে দেখতে এইসব প্রশ্ন মাথার ভেতরে কাজ করে; রাষ্ট্রযন্ত্র-সমাজযন্ত্র-আমলাতন্ত্র-আইনতন্ত্র-মাধ্যমতন্ত্র ইত্যাদির মাথায় না করলেও যাঁরা সাধারণ মানুষ, যাঁদের চিন্তা করার ক্ষমতা এখনও বর্গা দেয়া হয়নি; তাঁদের কাছে এখনও ইয়াসমিন এক জীবন্ত প্রশ্নবোধক চিহ্ন। গত পঁচিশ বছরে এই প্রশ্নবোধক চিহ্নটি আরও বড়ো হয়েছে, সঙ্গে জড়ো হয়েছে আরও অনেক প্রশ্ন। যতোই এড়িয়ে যেতে চাই না কেনো, ইয়াসমিনের সে-ই মৃতদেহটি এখনও আমাদের দাঁড় করিয়ে রাখে প্রগতি-গণতন্ত্র-মধ্যম আয়সহ আরও কিছু প্রপঞ্চের সামনে। আমরা স্তব্ধ হই কয়েক মুহূর্তের জন্য আবার যেহেতু স্তব্ধতাই শেষ কথা নয়, তাই আমরা আবারও ফিরে আসি স্বাভাবিক জীবনে। ভুলে থাকার বিশুদ্ধ অভিনয় করতে করতে আমরা পেরিয়ে যাই চব্বিশে আগস্ট। ১৯৯৫ থেকে ২০২০— এই পঁচিশ বছরে আমরা মুখোমুখি হই আরও শত শত ইয়াসমিনের, সাময়িক উন্মাদনায় একবার ফিরে তাকাই আমাদের আপনজন নারীদের দিকে। এই প্রতীকী ফিরে তাকানোতেই আমরা দেখতে পাই, বাঙলার নারীরা সকলেই ইয়াসমিনের মৃতচক্ষু থেকে গড়িয়ে পড়া জল বয়ে বেড়াচ্ছেন বিগত পঁচিশ বছর ধরে। নিতান্ত অনিচ্ছায় আমরা আবারও প্রশ্নের মুখোমুখি হই— আগামি পঁচিশ বছরের দৃশ্যপটও কি তবে এই থাকবে?
পাশবিকতার সুরতহাল
১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট। দিনাজপুর জেলার উত্তর গোবিন্দপুরের আদিবাসী বাসিন্দা সাঁওতাল দিনমজুর সুরেনের বাড়ির পাশ দিয়ে চলে গেছে দিনাজপুর শহরমুখী প্রশস্ত মহাসড়কটি। সে-ই মহাসড়কেই প্রায় ভোরের দিকে গাড়ি থামিয়ে রাস্তার পাশে নিচু সড়কে একটি লাশ ফেলে যায় পুলিশ। সে-ই পুলিশ ভ্যানটির নম্বর ছিলো ‘দিনাজপুর ম- ০২০০৭’।
এই ভ্যানটি রাত ০৩-১৫ মিনিটে যখন দশমাইলের মোড়ে টহল দিচ্ছিলো, তখনই ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী ‘হাসিনা পরিবহন’ (জ-১৪৮৫) এসে থামে দশমাইল মোড়ে। ঐ গাড়ির সুপারভাইজার খোরশেদ আলম এক নারীকে সঙ্গে নিয়ে বাস থেকে নেমে আসে তার পূর্ব-পরিচিত পানের দোকানে। পান দোকানদারের নাম জোবেদ আলী। নারীর নাম ইয়াসমিন। সে নিঃস্ব হয়ে সে-ই মধ্যরাত্রিতে কেবল এইটুকু জানিয়েছিলো— তার কাছে কোনো টাকা-পয়সা নেই, সে দিনাজপুরে মা-বাবার কাছে যেতে চায়। বাস থেকে কেবল ইয়াসমিন নয়, সঙ্গে নেমেছিলো জয়ন্ত কুমার চক্রবর্তী নামে এক তরুণ। সে-ও দিনাজপুর যাবার জন্য বাসের অপেক্ষায় জোবেদ আলীর দোকানে এসে বসে। শেষ রাতের দিকে অপরিচিত দুজন যুবক-যুবতীকে দেখে স্থানীয় সকলেরই নানাবিধ অনুভূতিতে আঘাত লাগতে থাকে। পুরুষতন্ত্র কল্পনায় অনেক কিছু সাজিয়ে নেয়। ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’- এর দেশে এসকল কল্পনায় তারা কাতর বোধ করে। সুতরাং সকলেই ঘিরে ধরে ইয়াসমিন এবং জয়ন্ত কুমার চক্রবর্তীকে। নানা রকম প্রশ্ন করে তাদের অনুভূতি আরও টনটনে হয়ে ওঠে। আর আগুনে ঘি ঢালার মতো স্থানীয় জনতার টনটনে অনুভূতিতে মৃদু টোকা দিয়ে এসে হাজির হয় আইনের রক্ষক (!) পুলিশ বাহিনী। অতএব, আর কোনো কথা বলার নেই। আইনের রক্ষকরা ইয়াসমিনকে তুলে নেয় গাড়িতে। প্রতিশ্রুতি দেয় তাকে বাড়ি পৌঁছে দেবার। কিন্তু ধর্ষিত-মৃত ইয়াসমিনের ঠিকানা হয় দশমাইলের মোড় থেকে কয়েকমাইল দূরের ঝোপে।
এই ঘটনায় স্থানীয় দফাদার আহাম্মদ আলী দিনাজপুর থানায় একটি ডায়রি রুজু করেছিলেন, যার নম্বর ‘জি ডি ৯৫৮’। কিন্তু আইনের রক্ষকরা আইন ছেড়ে যাবেন কোথায়? পুলিশ বলে কথা! সুতরাং ‘জি ডি ৯৫৭’ টি করে ধর্ষক পুলিশ সদস্য— এস আই মইনূল হক ও কনস্টেবল অমৃতলাল। গণমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দুটো জিডি নথিভুক্ত হবার মাঝে মাত্র পাঁচ মিনিটের পার্থক্য। ধর্ষক পুলিশ সদস্যরা তাদের জিডিতে লেখে—
হাইওয়ে ডিউটি শেষ করে দিনাজপুর আসবার পথে রাত অনুমান ৪-৩০ মিনিটের সময় দশমাইল মোড়ে একটি মেয়েকে ঘিরে জিজ্ঞাসাবাদরত এক জটলা দেখা যায়। সেখান থেকে জানা যায় মেয়েটি দিনাজপুর যেতে চায়। মেয়েটিকে দিনাজপুরে পৌঁছে দেবার জন্য গাড়িতে তোলা হয়। গাড়ির সামনে এস আই মইনূল হক ও পেছনে কনস্টেবল ছত্ত্বার বসেছিলো। গাড়িটি ৪০০-৫০০ গজ যাবার পর মেয়েটি হঠাৎ চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দেয়। গাড়ি থামিয়ে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় মেয়েটিকে আবার গাড়িতে তুলে নেয়া হয়। গাড়িটি কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে যাবার পর মেয়েটির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে কনস্টেবল ছত্ত্বারের ডাকে গাড়ি থামানো হয়। পরীক্ষা করে বোঝা যায় মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। তখন হতবিহ্বল হয়ে মেয়েটিকে রাস্তার পাশে ফেলে টহল গাড়ি দিনাজপুর থানায় চলে আসে।
কেবল এখানেই ঘটনা থেমে নেই। পুলিশ এই মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করায় দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ মোহসীনের হাতে। মৃত্যুর কারণ হিশেবে সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়—
বাহ্যিক লক্ষণসমূহ দেখে মনে হয় কোনো উচ্চস্থান হইতে পতনজনিত কারণে মৃত্যু ঘটিতে পারে।
রাষ্ট্র-সমাজের সে-ই পুরোনো বদঅভ্যাস
ইয়াসমিনকে নির্মমভাবে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে ২৫ আগস্ট, ১৯৯৫ থেকেই। স্থানীয় পুলিশদের বিরুদ্ধে দিনাজপুরের জনগণ আন্দোলনে একজোট হতে শুরু করেন। আন্দোলন ক্রমেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে পুলিশও ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শুরু করে। সঙ্গে ঘৃণ্যভাবে তাল মিলাতে তাকে স্থানীয় প্রশাসন আর তত্কালীন বিএনপি সরকার। দিনাজপুরের তৎকালীন এসপি স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানায়—
মেয়েটি পতিতা ছিলো। তার বাড়ি সেতাবগঞ্জে
তৎকালীন পুলিশের এই বক্তব্যের সঙ্গে বর্তমানকে মেলালে আমরা বুঝতে পারি, পুলিশের মানসিকতার পরিবর্তন খুব একটা হয়নি। তাছাড়া, নিহত ইয়াসমিন প্রসঙ্গে পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক মন্তব্য তো তৎকালীন প্রশাসনেরই মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। আজ পঁচিশ বছর পরও এই মানসিকতার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আমাদের চোখে পড়ে না। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ঘটিয়ে অপরাধ ধামাচাপা দিতে সহজেই তার চরিত্রের ওপর হামলে পড়ে অপরাধীরা। গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন নিপীড়নের শিকার নারীদের ক্ষেত্রে আমরা একই ঘটনা প্রত্যক্ষ করছি। সম্প্রতি মেজর সিনহার বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ক্ষেত্রেও তার দুই সহকর্মী সম্বন্ধে যা তা বলা হচ্ছে। বিশেষ করে শিপ্রা দেবনাথ সম্পর্কে স্বয়ং পুলিশ সদস্যদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ধরনের মন্তব্য করছে, তা থেকেই স্পষ্ট অনুমেয় যে, ইয়াসমিনদের মৃতদেহ মাটিতে মিশে গেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধ করা ব্যক্তিমানসের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই নির্যাতনের বিচারের চেয়েও নির্যাতিতের প্রতি আঙুল তোলার প্রবণতাই এই রাষ্ট্রের বেশি। রাষ্ট্র-মানসিকতার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উৎকট মানসিকতা। ফলে ক্যালেন্ডারের হিশেবে আমরা এগিয়েছি বটে কিন্তু মানবিক চিন্তাধারা আর অপরাধীর বিচারের প্রশ্নে আমরা আগের মতোই রয়ে গেছি। এসব কারণেই দু একটি ক্ষেত্রে অপরাধীর বিচার হলেও নিপীড়নের শিকার নারী আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন না। কেননা, আদালতের বিচার হতে হতে সমাজ-সামজিকতা আর রাষ্ট্র ভিকটিমকেই এক ধরনের অদৃশ্য কাঠগড়ায় আটকে রাখে। ফলে সে বেঁচে হয়তো থাকে কিন্তু মৃত্যুর চেয়েও কঠিন হয়ে পড়ে এই বেঁচে থাকা।
আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে ইয়াসমিনের বিষয়ে পুলিশের নির্লজ্জ মিথ্যাচারে মারমুখী হয়ে উঠেছিলো জনতা। সারাদেশে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় আন্দোলন। দিনাজপুরে জনরোষ তীব্র হলে প্রশাসন আইনকে ব্যবহার করে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে। জারি করে কারফিউ। কিন্তু আন্দোলনরত জনতা ন্যায্য বিচারের দাবিতে কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে আসে। আন্দোলন ঠেকাতে ইয়াসমিনের মতো আরও অনেকের ট্যাক্সের টাকায় কেনা সরকারি গুলি খরচ করে প্রশাসন। এতে সামু, কাদের ও একজন রিকশাচালকসহ মোট সাতজন প্রাণ হারান। এতে আন্দোলন তীব্রতর হয়।
স্থানীয় মহিলা এমপি, তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বোন খুরশীদ জাহানও ঘটনা ধামাচাপা দিতে নানারকম মিথ্যাচার করতে থাকে। আন্দোলনরত জনতা তাকে দিনাজপুরে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পুরো ঘটনায় নির্লিপ্ততার চূড়ান্ত দৃশ্য দেখিয়ে ‘বিশ্ব নারী সম্মেলন’- এ যোগ দিতে চলে যায় বেইজিং।
এদিকে পুলিশের অপতত্পরতা বাড়তেই থাকে। তারা দিনাজপুর রেলস্টেশন রোডের কয়েকজন যৌনকর্মীকে ডিবি অফিসে নিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করে যে— নিহত ইয়াসমিন আসলে তাদেরই সহকর্মী বানু। কেবল এখানেই শেষ নয়; আসল বানুকে পুলিশ ৫৪ ধারায় আটক করে তিনমাস জেলে আটকে রাখে। যৌনকর্মীদের স্বীকারোক্তি গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করে পুলিশ আবারও ইয়াসমিনকে যৌনকর্মী প্রমাণের চেষ্টা করে। কিন্তু জনগণ ইয়াসমিনের মৃতদেহ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের দাবি জানায়।
অবশেষে ২৭ আগস্ট দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট সেলিনা সাহাদাতকে মৃত ইয়াসমিনের লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখেই ২৫ নভেম্বর, ১৯৯৬ সালে অবশেষে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন, বিশেষ আদালতের বিচারক আব্দুল মতিন এই মামলার বিচারের সাক্ষ্য গ্রহণের কাজ শুরু করেন। তারও প্রায় আট বছর পর, ২০০৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর রংপুর জেল কারাগারে দণ্ডিত আসামীদের মধ্যে জীবিত দুই আসামী— মইনূল হক ও আব্দুস ছত্ত্বারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
আজ ও আগামীর বাঙলাদেশ
১৯৯৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পঁচিশ বছর। এই পঁচিশ বছরে বাঙলাদেশের ছবিটা অনেকখানি বদলেছে। নাগরিকরা নানামাত্রায় আধুনিক হয়েছেন। বিভিন্ন খাতে বাঙলাদেশ একটু একটু করে এগিয়েছে। চারপাশে ইতিবাচকতার হাহাকার! এসব হাহাকার যখন কান পেতে শুনি, তখনই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ইয়াসমিনের মৃতদেহটি। নিজেই নিজেদের প্রশ্ন করি— এখনও কি ইয়াসমিনের সেই নিরাপত্তাহীনতার চোরাবালিতেই আটকে আছে না বাঙলাদেশ? ১৪২২ সালের পহেলা বৈশাখে (২০১৫ ইংরেজি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে পুলিশের নাকের ডগার ওপর দিয়ে নারীর ওপর ঘটে যাওয়া নারকীয় তাণ্ডবের কোনো বিচার হয়েছে কি? সিসি ক্যামরোর ফুটেজে যে অমানুষদের ছবি পাওয়া গেলো, তা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন অনেকেই। কিন্তু কোথায় বিচার! মাইক্রোবাসে, চলন্ত গাড়িতে নারীর ওপর চালানো পাশবিক নির্যাতনের খবর যেনো এখন আমাদের গা সওয়া! পঁচিশ বছর আগেও প্রশাসন ধর্ষকদের পক্ষে সাফাই গেয়েছে, এখনও প্রশাসন ধর্ষকদের ‘দুষ্টু ছেলে’ বলে মৃদু ভৎসর্না করে দায় সারে। পঁচিশ বছর আগেও নির্যাতনের শিকার নারীকে যৌনকর্মী বানানোর অপচেষ্টা হতো, যেনো যৌনকর্মী মাত্রেই ধর্ষিতা হতে বাধ্য! আর এখন, তথাকথিত শিক্ষিতরা ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক ও চলনকে দায়ি করে। পঁচিশ বছর আগেও ধর্ষিতা ইয়াসমিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্লজ্জ নির্লিপ্ততা আমরা দেখেছি; আজও নারীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রে একই রকম হিমশীতলতা; যেনো ধর্ষণ-হত্যার প্রশ্নে নির্লিপ্ততাই যুগে যুগে প্রধানমন্ত্রীদের ভাষ্য।
ইয়াসমিন হত্যা দিবসের এই পঁচিশ বছরে দাঁড়িয়ে অনাগত সময়টাকে যতোই কল্পনা করি, কেবলই শিউরে উঠি। দেখতে পাই— সবাই ছুটছে, দৌড়োচ্ছে, প্রগতি আর শান্তির কথা বলছে; কিন্তু প্রত্যেকেই পেরিয়ে যাচ্ছে ইয়াসমিনদের শব— ১৯৯৫, ১৯৯৬… ২০০২, ২০০৩… ২০১৫… ২০২০… ২০৪০… দৃশ্যত কতো আলো চারপাশে, কার্যত কী ভীষণ অন্ধকার!