১৬ আগস্ট ১৯৭৫: কী বলেছিল সেদিনের গণমাধ্যম?

পনেরোই আগস্ট ১৯৭৫। এক ঘোর কৃষ্ণপক্ষ নেমে এসেছিল বাঙলাদেশের বুকে। জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার যে নারকীয় ঘটনা সেদিন ঘটেছিল, তার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। কিন্তু পঁচাত্তর-পরবর্তী সময় থেকেই বাঙলাদেশে সবচেয়ে প্রচলিত কথা হচ্ছে, “কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল।” সন্দেহ নেই, এ কথাটির মাঝেই রয়েছে একটি বড়ো রকমের ফাঁকি। কারণ, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বেতার…

বাংলাদেশি হত্যা ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক স্বেচ্ছাচার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবারও সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন বাংলাদেশি তরুণ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদভাষ্যে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইস শহরের হ্যাম্পটন অ্যাভিনিউর ১১০০ ব্লকের বিপি গ্যাস স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশি আরেক তরুণ সাঈদ ফয়সালকে কেমব্রিজের চেস্টনাট স্ট্রিটে গুলি করে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ বা সন্ত্রাসীদের…

ফেইসবুক অ্যালগরিদম ও কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

গত দুই দশকেরও কম সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে যে সংখ্যক ব্যবহারকারী সক্রিয় হয়েছেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় তা এক বিস্ময়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সব শ্রেণির মানুষকে কথা বলার বা মত প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে— এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একই সঙ্গে তাদের নিজস্ব বিধি-বিধান আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অ্যালগরিদম কোথাও না কোথাও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি…

বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো

চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের হিসাব অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন। এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে কোনো একটি প্ল্যাটফর্মে ক্রমাগত সক্রিয় রাখার ইতিহাস মানব সভ্যতার ইতিহাসে আর নেই। হয়তো ডিজিটাল দুনিয়ায় ভবিষ্যতে এমন পরিসংখ্যান আরও তৈরি হবে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, আজকের পৃথিবীতে এসব যোগাযোগমাধ্যম সামাজিক, রাজনৈতিক,…

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর: প্রকৃত মধ্যবিত্তের সন্ধানে

বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেরও প্রায় ছিয়াশি বছর আগে ব্রিটিশ আমলাদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় জনগণকে অপ্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। নব-প্রতিষ্ঠিত সেই সংগঠনের তরুণ নেতৃত্বের উদ্দেশে ব্রিটিশ আমলা অ্যালেন অক্টেভিয়ান হিউম একটি চিঠিতে লিখেছিলেন— “এদেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা বুঝতে পারছে না…

ছায়ারোদ্দুরের বাঙলাদেশ

২০০৪ সালের কোনো এক রৌদ্রদগ্ধ দুপুরের কথা মনে পড়ে। সম্ভবত সে বছরই আমার প্রিয় ব্যান্ড রেনেসাঁর নতুন একটি অ্যালবাম রিলিজ হলো একুশ শতকে রেনেসাঁ শিরোনামে। তখনও আমাদের ক্যাসেটে গান শোনার দিনগুলো শেষ হয়ে যায়নি। ওই অ্যালবামের একটি গান— সে সময়ে যে বাঙলাদেশের ছবিটা আমরা প্রতিদিন খবরের কাগজে দেখতাম— তার সঙ্গে কী অবলীলাক্রমে মিলে গিয়েছিল। ‘হে বাংলাদেশ/ তোমার…

সাইবার জিহাদ মোকাবেলায় বাঙলাদেশ

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ওয়েবিনারের ধারণাপত্র বাঙলাদেশের রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, প্রশাসন ও নাগরিক সমাজ সকলেই আজ এই মর্মে একমত যে, ধর্মীয় উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো গত কয়েক বছরে তাদের অপকর্মের পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে। ধর্মকে ব্যবহার করে বাঙলাদেশের উগ্রবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো যে প্রকাশ্য সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর তৎপরতার কারণে তার অনেকটাই এখন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।…

আদর্শের সমীকরণে রাজনৈতিক লেখচিত্র

বাংলাদেশের সামনে এখন দু’টো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। একটি মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী, অন্যটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণ কতটা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অনুগামী আর কতটুকুই বা তার বিচ্যুতি—, উল্লিখিত দু’টো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তার বিচার করতে পারবো। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে নানা টানাপড়েনের পরও মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের কাছে এই সত্য সুস্পষ্ট যে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক…

থামিল কালের চিরচঞ্চল গতি

আমাদের শাহীন রেজা নূর ভাইয়ের জাহাজটি এবার বন্দর ছেড়ে গেল। যাঁকে ঘিরে একদিন আবর্তিত হয়েছিল আমার মতো সামান্য কলমচির ঘোরলাগা বিকেল সন্ধ্যাগুলো, আজ তাঁর স্মৃতিসমগ্র ছড়িয়ে আছে চারপাশে— ব্যথাতুর বিষণ্ন, অথচ সদা হাস্যময়। কেননা তুড়ি মেরে জীবনকে তাড়িয়ে নেয়ার ডাকনামই তো ছিল শাহীন ভাই। এ কারণেই বুঝি বসন্তবরণের মাহেন্দ্রক্ষণে প্রকৃতি তাঁর জন্য রচনা করেছে এই…

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের রাজনীতি

সম্প্রতি কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরায় প্রচারিত একটি ডকুড্রামা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান ও তার পরিবারকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই ডকুড্রামাতে প্রধানমন্ত্রীকেও যুক্ত করা হয়েছে নানাভাবে। কিন্তু ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ মূলধারার গণমাধ্যমেও আল–জাজিরার নির্মিত এই ডকুড্রামার নানা মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তির সমালোচনা হচ্ছে তথ্য-প্রমাণসহ। যদিও জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যে কোনো গণমাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানের কপিরাইট…

এই বাংলার ইতিহাস আপনারা জানেন না?

লেখার শিরোনামটি শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের দেয়া একটি সংবাদ শিরোনামের অংশ। ১৯৬৪ সালের ১৩ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রথম পাতা জুড়ে প্রকাশিত হয়েছিল ‘জুলুম প্রতিরোধ দিবসে’ আওয়ামী লীগের জনসমাবেশের একটি ছবি। জনসমুদ্রের সামনে বক্তব্য রাখছেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার ঠিক উপরেই উদ্ধৃতিচিহ্নের ভেতরে দুটো কমা ও দুটো হাইফেন সহযোগে শিরোনাম নির্ধারণ করেছিলেন সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন। জনসভায় দেয়া…

তেসরা নভেম্বর ও তিনটি রাজনৈতিক সমীকরণ

১৯৭৫ সালের পনেরোই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ৮০ দিন পরই কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চারনেতাকে। ঘাতকচক্র, প্রেক্ষাপট, হত্যার ধরণ ও উদ্দেশ্য— সবই এক। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট থেকে তেসরা নভেম্বর অব্দি সময়টি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ভয়াবহ সময়। অন্যায়, অবিচার, খুনী ও ষড়যন্ত্রকারীদের দম্ভ— সব মিলিয়ে ওই ৮০ দিন…

ধর্ষণের বিচার ও ধর্ষণ-মনস্তত্ত্বের চিকিৎসা

একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশে। রাজপথ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মূলধারার গণমাধ্যমসহ সবক্ষেত্রে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন মানুষ। করোনা মহামারীর সময়ে প্রতিটি সচেতন মানুষ যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করছেন। ইতোমধ্যে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে অপরাধীদের। এই পর্যন্ত চিত্রটি আমাদের পরিচিত। ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি বা কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের পরও একইভাবে সোচ্চার হয়েছিলেন…

তৎকালীন সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

ওই মহামানব আসে… — ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গানটি রচনা করেছিলেন। খ্রিষ্টিয় পঞ্জিকা অনুযায়ী তারিখটি ছিলো— ১৪ এপ্রিল, ১৯৪১— অর্থাৎ রবীন্দ্র প্রয়াণের ঠিক ১১৬ দিন আগে। বিদায় বেলার জানালায় দাঁড়িয়ে ভৈরবী রাগের এই গানটি তবে রবীন্দ্রনাথের ভবিষ্যত-দর্শন? কেননা, গানটি রচনার প্রায় ৩০ বছর পর এর একটি অলৌকিক দৃশ্যায়ন ঘটেছে সদ্য স্বাধীন বাঙলাদেশে। ১৯৭২…

সেই অবিনাশী উচ্চারণ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ যদি একটি মহাকাব্য হয়, তবে তার প্রবেশদ্বার হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সেই অবিনাশী উচ্চারণ। একটি মুখবন্ধ—যার মধ্যে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি স্তর-উপস্তর ব্যাখ্যা করা আছে; আছে নির্যাতিত হওয়ার খতিয়ান, নির্দেশনামা, করণীয় এবং অকরণীয়সমূহ। মাত্র ঊনিশ মিনিটের এই পারাবারপ্রতিম ভাষণে জাতির জনক আসলে রচনা করেছিলেন আমাদের স্বাধীনতার সংজ্ঞা, তাকে বিস্তৃত করেছিলেন ‘মুক্তি’র অভিধায়; এবং…