আমি আমার আত্মার আত্মীয়দের কথা বলছি

এই লেখাটির ক্ষেত্রে আমার প্রথম প্রেরণা ও অনুসন্ধান ছিল গবেষক সাজিদ হোসেনের গবেষণাগ্রন্থ একাত্তরের যুদ্ধশিশু: কতটা ভালোবাসায় কতটা অবহেলায় বইটি। যুদ্ধশিশুদের ছবিগুলোও তাঁর গ্রন্থ থেকেই নেয়া।   ঘড়ির কাঁটাও মাঝে মাঝে পেছনে ঘুরে; সভ্যতার দীপ্র দুপুরে নামে মধ্যযুগীয় অন্ধকার। সে-ই অন্ধকারে রাজপথে নামে দানব, হুঙ্কারে আতঙ্কিত হয় চারদিক, নেমে আসে মৃত্যু-তুহিন এক প্রকট প্রলয়। ১৯৪৭…

রবীন্দ্রনাথ— আধুনিক নন, রোম্যান্টিক

রবীন্দ্রনাথের নাকি দুই রূপ— আত্ম-উদ্বোধিতো এবং আত্মঘাতী। আত্ম-উদ্বোধিতো রবীন্দ্রনাথের রূপ ধরা পড়ে নানা রঙে, বনে জঙ্গলে, মাঠে ঘাটে— মোট কথা বাঙালি যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই পাওয়া যাবে আত্ম-উদ্বোধিতো রবীন্দ্রনাথকে। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের আত্মঘাতী রূপের সন্ধান পাওয়া দুষ্কর। এর প্রধান কারণ সম্ভবত এই যে— রবীন্দ্রনাথ একমাত্র বাঙালি, যিনি সারাজীবন নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে বাঙলা সাহিত্যকে করেছেন ঋদ্ধ এবং…

যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা….

এই লেখাটিকে নানাভাবে সাজানো যেতো। কারণ এই ‘নানাভাবের’ বিন্যাস লেখাটি দাবি করে। হতে পারতো- সাতচল্লিশ সালের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত হওয়া দুটি রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ক্যামিস্ট্রি সম্বলিত একটি বর্ণনা, এখানে থাকতে পারতো চৈতন্যলোকের সাথে সাক্ষাৎ মানবতাবাদের একটি যৌগিক কাঠামোর বিন্যাস এবং নিঃসন্দেহে, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ যে একটি অসাধারণ অসাম্প্রদায়িক আখ্যানকেন্দ্রীক এক অনন্য মহাকাব্য- তার একটা সবিস্তারে বর্ণনা এখানে…

মেসিময় দিনটি ছিল ওকাম্পোর কবিতার মতোই

এমনটাই যেনো হবার কথা ছিলো! হাজার হাজার মাইল দূরের দেশ আর্জেন্টিনা থেকে আসবেন মেসি। বাঙালি তাঁকে বরণ করে নেবে তার হাজার বছরের ঐতিহ্যগত আতিথেয়তায়। মেসি তাঁর অনবদ্য জাদুতে মুগ্ধ করবেন বাঙালিকে, সেইসাথে মুগ্ধ হবেন বাঙালির ফুটবল উন্মাদনা আর মেসির জন্যে তুলে রাখা ভালোবাসার আবির মেখে। মেসি কিংবা আজকের আর্জেন্টিনা বাঙালির এই অসামান্য আয়োজনে যারপরনাই মোহিত।…

অজিত রায়: নয়ন সম্মুখে তুমি নাই

উপসংহার .. ..আশি, উনআশি, আটাশি, সাতাশি.. ..পঞ্চান্ন, চুয়ান্ন.. ..সাতচল্লিশ.. ..বাইশ, একুশ, কুড়ি, ঊনিশ, আঠারো.. ..সাত, ছয়, পাঁচ, চার, তিন, দুই, এক। এক। এক।.. ..এক। ছায়াপিণ্ড উত্তর দিলো- এক নয়; শূন্য। লাইফ সার্পোট সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কথাটির পুনরাবৃত্তি করলো আরও কয়েকজন।‘ লাইফ সার্পোট’। দুইটি দীর্ঘশ্বাস। একটি দীর্ঘ; অন্যটি ছোটো- অতো দীর্ঘ নয়। হি ইজ নো মোর-…

শুভ জন্মদিন মহানায়ক

বেঁচে থাকলে আজ তিনি পঁচাশি বছরে পা দিতেন। তখন কেমন দেখাতো তাঁকে? তিনি কী বুড়ো হয়ে যেতেন? চুলে পাক ধরতো? শরীরে মেদের উপস্থিতি নিয়েও পর্দার সামনে দাঁড়িয়ে নিরন্তর আওড়াতেন নায়ক কিংবা নায়িকার পিতার সংলাপ? তারপর স্যুটিং ফ্লোরের ব্যস্ততা সেরে বাড়ি ফিরতেন। ক্লান্তি-শ্রান্তি নিয়ে শরীর এলিয়ে দিতেন শোবার ঘরের ইজি চেয়ারে। চোখ আলতো বুজে আসতো- অমনি…

শহিদ রুমী: আমার ফ্ল্যাশব্যাকে, আমার প্রত্যাশায়

একটি বিশেষ স্টাইলে নিজের তোলা একটি ছবি বাঁধিয়ে রাখার খুব ইচ্ছে আমার। কোমরে হাত, ঘাড়টা আমার ডান হাতের দিকে বাঁকানো। অবশ্য ছবিটা যিনি দেখবেন, তার মনে হবে আমি বাঁ দিকে ঘাড় কাত করে রেখেছি। ছবিটার উপরে অ্যামবুশ করে লিখে রাখা হবে জীবনানন্দ দাশের সে-ই অনন্য কবিতার পঙক্তি, আবার আসিবো ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়.. ..…

নক্ষত্রের তলে শুয়ে ঘুমায়েছে যে জন

শান্তি নিকেতনের বাতাসটা কেমন? ওখানকার বাতাসে কি রবীন্দ্রনাথ মিশে থাকেন? ওখানকার বৃষ্টিতে, কিংবা রোদের অ্যানাটমি জুড়ে কি রবিঠাকুরের নিবিড় বসত? রবীন্দ্রনাথ উপনিষদের দর্শনে সাহিত্যচর্চা করতেন। বোধ করি তিনি সে জন্যই বলে গিয়েছিলেন, ‘তোমারে যা দিয়েছিনু, তা তোমারি দান। গ্রহণ করেছো যতো, ঋণী ততো করেছো আমায়.. ..’। কবিগুরুর কোনো অভিযোগ ছিলো না কারও বিরুদ্ধে। তাই বুঝি…

মিশুক মুনীর: তুমি রবে নীরবে

এমন একটি লেখা লেখার ইচ্ছে আমার ছিলো না। নিঃসঙ্গ বাতায়নের সাথে গুবাক তরুর সারির কথোপকথন আর কখনো হবে না। এ-ও এক ট্র্যাজিডি- গ্রীক ট্র্যাজিডির সাথে সামঞ্জস্য; কেবল ভাগ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়- কিংবা এরও বাইরের কিছু। আমি জানি না, ক্যামেরার কোন অ্যাঙ্গেলে কথা বলতে ভালোবাসতেন আশফাক মুনীর মিশুক। জীবনের ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে তিনি কী কোনোদিন…

মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদ: নিঃসঙ্গ সময়ের সারথি

এমন একটি লেখা লেখার ইচ্ছে আমার ছিলো না। নিঃসঙ্গ বাতায়নের সাথে গুবাক তরুর সারির কথোপকথন আর কখনো হবে না। এ-ও এক ট্র্যাজিডি- গ্রীক ট্র্যাজিডির সাথে সামঞ্জস্য; কেবল ভাগ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়- কিংবা এরও বাইরের কিছু। আমি জানি না, ক্যামেরার কোন অ্যাঙ্গেলে কথা বলতে ভালোবাসতেন আশফাক মুনীর মিশুক। জানি না সেলুলয়েডের সাথে কেমন প্রেম ছিলো তারেক…

জ্বলছে ইংল্যান্ড, ফাঁসিতে ঝুলন্ত ক্ষুদিরাম: দাবার ছকটা ইতিহাসের

পেরিয়ে যাবার একটি ব্যাকরণ আছে, অতিক্রম করে যাবার একটি নিয়ম আছে। আবার কখনো কখনো এমন হয়েছে অতিক্রম করে গিয়েও নিজেকে ধরে রাখা যাচ্ছে না। ফিরে আসতে হচ্ছে গান গাইতে গাইতে। ওই যে গান আছে না- ফিরে চল ফিরে চল মাটির টানে.. .. কয়েকটি সত্য আছে, মুখোমুখি হওয়া যায় না। তখন আমরা বলি- ওভাবে নয়, একটু…

নির্বাক হলেন প্রথম সবাক বাঙলা চলচ্চিত্রের শিল্পী আমিনুল হক

ফিল্ম  রিভিউ ম্যগাজিনে একবার একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছিলো- যার একটি অংশের বাঙলা তরজমা করলে দাঁড়ায়- পরিচালক অনেকাংশেই চলচ্চিত্রের মূল-কাঠামোতে দৃষ্টি রাখেন, এতে ছোটো ছোটো অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টি দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয় না। ওই কাজটি একজন দক্ষ অভিনয়-শিল্পী করে থাকেন। এই জাতীয় অভিনয় শিল্পীরাই পরিচালকের ফরমায়েশ পেরিয়ে আরও কয়েক কদম এগিয়ে আসেন- এবং কার্যতই এতে…

জ্ঞান-সাধনার সমার্থে এক মহৎ বাঙালি

এ বছর বর্ষাটা বেশ জেঁকে বসেছে। একেবারে আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি-জলের গান। আকাশ অন্ধকার করে, মেঘলা গলির কিনারা ঘেঁষে বৃষ্টি এসে নামছে আমাদের প্রাত্যহিক বারান্দায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যা থেকে রাত্রি। তারপর রাত্রির সুগভীর সুনশান ভেদ করে আবার শুরু হয় বৃষ্টি। এ যেনো পুরো সময় জুড়ে থাকা বৃষ্টির সাহানা সুর- আলিঙ্গন…

নীলিমা ইব্রাহিম: বাঙালির নিভৃত নিরঞ্জনা

এক আকাশের দিকে তাকালে ‘সাঙান গগনে ঘোর ঘনঘটা’র কথাই মনে হয়। এ যে আষাঢ় মাস, বর্ষা ঋতু- সে আর পঞ্জিকার পাতা খুলে বলতে হয় না। প্রকৃতিই সময়ের দর্পন হয়ে দেখা দেয়। বর্ষা বাঙালির প্রাণের ঋতু- অনেকভাবেই ভেবেছি কথাটা; সত্যিই এ ঋতু আমাদের ফসলের ঋতু, রবীন্দ্রনাথের ঋতু, পদাবলীর ঋতু আর অবশ্যই কালিদাসের ঋতু। নানা বাঁকে বর্ষা…

আত্মমগ্নতার নিবিড়তায় দোল খায় কিবরিয়ার ক্যানভাস

সময়টা ১৯২৯। ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিচারে ভারতীয় উপমহাদেশ তখন নানা ঘাত-প্রতিঘাতে উচ্চকিত। চেতনার শানিত অস্ত্রে একে একে তৈরি হচ্ছে ভারতবর্ষের প্রতিটি ঘর, প্রতিটি পরিবার। ইংরেজ শাসনের করালগ্রাস থেকে মুক্ত হবার এক দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা সারা ভারতীয় উপমহাদেশকে তখন মাতিয়ে রেখেছে নানা তরঙ্গে। সেই উদ্বেল তরঙ্গের দোলাতেই গুনে গুনে আঠারো বছর পর, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়।…