জ্ঞান-সাধনার সমার্থে এক মহৎ বাঙালি

এ বছর বর্ষাটা বেশ জেঁকে বসেছে। একেবারে আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি-জলের গান। আকাশ অন্ধকার করে, মেঘলা গলির কিনারা ঘেঁষে বৃষ্টি এসে নামছে আমাদের প্রাত্যহিক বারান্দায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যা থেকে রাত্রি। তারপর রাত্রির সুগভীর সুনশান ভেদ করে আবার শুরু হয় বৃষ্টি। এ যেনো পুরো সময় জুড়ে থাকা বৃষ্টির সাহানা সুর- আলিঙ্গন…

নীলিমা ইব্রাহিম: বাঙালির নিভৃত নিরঞ্জনা

এক আকাশের দিকে তাকালে ‘সাঙান গগনে ঘোর ঘনঘটা’র কথাই মনে হয়। এ যে আষাঢ় মাস, বর্ষা ঋতু- সে আর পঞ্জিকার পাতা খুলে বলতে হয় না। প্রকৃতিই সময়ের দর্পন হয়ে দেখা দেয়। বর্ষা বাঙালির প্রাণের ঋতু- অনেকভাবেই ভেবেছি কথাটা; সত্যিই এ ঋতু আমাদের ফসলের ঋতু, রবীন্দ্রনাথের ঋতু, পদাবলীর ঋতু আর অবশ্যই কালিদাসের ঋতু। নানা বাঁকে বর্ষা…

আত্মমগ্নতার নিবিড়তায় দোল খায় কিবরিয়ার ক্যানভাস

সময়টা ১৯২৯। ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিচারে ভারতীয় উপমহাদেশ তখন নানা ঘাত-প্রতিঘাতে উচ্চকিত। চেতনার শানিত অস্ত্রে একে একে তৈরি হচ্ছে ভারতবর্ষের প্রতিটি ঘর, প্রতিটি পরিবার। ইংরেজ শাসনের করালগ্রাস থেকে মুক্ত হবার এক দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা সারা ভারতীয় উপমহাদেশকে তখন মাতিয়ে রেখেছে নানা তরঙ্গে। সেই উদ্বেল তরঙ্গের দোলাতেই গুনে গুনে আঠারো বছর পর, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়।…

এক নীল ছোঁয়া কিংবদন্তীর অন্তর্ধান

আকাশটা খুব মেঘলা। বেশ কিছুদিন ধরেই। রোদ আর এই বৃষ্টির এক খামখেয়ালি সময়। বাতাসটা বেয়াড়া, কখনো বা শান্ত। কিন্তু এই মাত্র যে বাতাসটা ছুঁয়ে গেলো- তা শান্তও নয়, আবার অশান্তও বলা যায় না। এ যেনো এক খবর নিয়ে এসেছে। তার করতলে জমে আছে সীমানা পেরোনো দীর্ঘশ্বাস। কণ্ঠস্বর ক্ষীণ। ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু এক ঝোলায় যেনো কার চিঠি…

‘কবি’- তারাশঙ্করের তর্পণ ও তপস্যার দর্পণ

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাঙলা কথাসাহিত্যের এক প্রাতঃস্মরণীয় নাম। একালে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের আগ্রাসী তৎপরতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে মানব অস্তিত্বকে; নৈরাজ্য-নৈরাশ্য-অনিশ্চয়তা-ক্লেদ-শঙ্কা আর মনস্তাপে বৃহদাংশ মানুষ খনন করেছে আত্মপ্রতারণার নির্বিঘ্ন বিবর। অপরদিকে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ইতিবাচক দৃষ্টান্ত অধিকার সতর্ক একাংশ মানুষকে করেছে আশাবাদে সন্দীপিত, প্রাণিত করেছে স্বপ্নময় আলোকময় ভবিষ্যত রচনায়। তবুও প্রত্যাশার বিপরীতে নিরাশার আধিপত্যই মহাসমরোত্তর বিশ্বমানসের প্রবল ও…

একাত্তরের দিনগুলি: দগ্ধ ও কোমল মৃত্তিকার ইতিহাস

একটি দিনলিপি। প্রাত্যহিক জীবনের ভাষায় রচিত। বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ এক অর্জনের ইতিহাস এ দিনলিপির বিষয়বস্তু। এটি কোনো মহাকাব্য নয়; এর অন্তঃস্রোতে যখন তখন শিল্পের মহাবাদল নেমে আসেনি। এবং তারপরও- এটি সকল মহাকাব্যের অতীত, বান-ভাসানো এক মহার্ঘ শিল্পের প্রণয়োচ্ছ্বাসে ঋদ্ধ, বিদগ্ধ। বাঙলা ১৩৯২ সনের ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬) মাসে এটি প্রথম প্রকাশিত হয় এবং এখনও নতুন। বৈশাখ, ১৪১৭…

তাজউদ্দীন আহমদ: জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

ভূমিকার আগের অধ্যায় ২৩ জুলাই। ১৯২৫ সাল। কেমন ছিলো সেদিনের রূপ? সেদিন কি বৃষ্টি ছিলো, কিংবা গরম, রোদের বাড়াবাড়ি সেদিনের মানুষের কাছ কি একটু বেশি মনে হয়েছিলো? অথবা সেদিনের সেই দিনটিতে শাপলার জলে খেলা করেছিলো শালুক, ম্রিয়মান সন্ধ্যায় দহলিজে বসে কেউ কি আপন মনে নিবিড় প্রার্থনায় মগ্ন ছিলো? সেদিনের দৃশ্যে সবুজের সাথে গাঢ় লালের একটি…

তিনি অর্থবহ: আমার অন্তর্লোকে, আমার কাব্য-পানশালায়

খুব দূর থেকে নন, কাছেই, আবার একেবারে কাছেও নন- যতোটা দূরত্ব থাকলে ‘দূর’টাকে মনে হয় প্রিয় ব্যালকনি আবার ‘কাছে’র অর্থ ধরা পড়ে চেনা অভিধানের চৌকাঠ পেরিয়ে, তিনি ততোটা দূরত্বে থেকেই এক মনে পাশা খেলে যান আমার মধ্যবিত্ত নাগরিক যৌবনের অগোছালো হৃদয় ঘরে; কখনো কবিতার স্নিগ্ধতায় তাঁর অতলস্পর্শী শব্দমাল্য আমাকে আহ্লাদে জড়ায় উদ্ভিন্নযৌবনা নারীর কাতরতায়, কখনো…

আমার ভাষার চলচ্চিত্র

বনে আছে দ্বন্দ্বের বিন্যাস, নাগরিকতার সঙ্গে লৌকিক জীবনের। কোনো মানুষই ঠিক সে-অর্থে অখণ্ড নয়, প্রত্যেকের মধ্যেই আছে অপূর্ণতা। এ অপূর্ণতাকে প্রেক্ষণবিন্দুতে রেখেই শিল্পসৃষ্টি আর সেই সৃষ্টিকে ধারণ করা। বৃহৎ অর্থে শিল্পের এ বিশাল আকাশ জুড়ে থাকা রঙধনুর সবচেয়ে উজ্জ্বল রঙটি হয়তো চিহ্নিত করা যাবে না, কিন্তু ভাবনার পরিসীমাটা যদি বাঙালি সমাজ আর বাঙালি মধ্যবিত্তের মানসপট…

সেই শুকতারাদের গল্প

মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে- ‘শুকতারা’ শব্দটির অর্থ কী? কোনো উত্তর খুঁজে পাই না। অভিধানের ভিতর থেকে যে অর্থটাই উঠে আসে- তাকেই বড্ডো বেশি নিরর্থক মনে হয়, মনে হয়- এর চেয়েও গভীর, এর চেয়েও প্রগাঢ় কোনো অর্থ যেনো কোথায় লুকিয়ে আছে। ১৫ অক্টোবর- বাঙলা আশ্বিনের শেষ- শরতের সায়াহ্নবেলা। প্রকৃতির চোখ হয়তো সে কথা বলে না, তবুও…

শিল্পী হায়দার হোসেনকে বলছি

শিল্পী হায়দার হোসেনের গাওয়া ‘৩০ বছর’ গানটি শুনে তার ফাইস্যা গেছি অ্যালবামের গানগুলো এক বন্ধুর কাছ থেকে চেয়ে নিই। অ্যালবামের গানগুলোর মধ্যে ‘শব্দার্থ’ গানটি শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। এ গানের কিছু লাইন শুনে ‘৩০ বছর’ গানের শিল্পী হায়দার হোসেনকে কেবল হায়দার হোসেন মনে হয়। এ গানের একস্থানে তিনি বলেছেন,   শহিদ কাকে বলে… হউক সে…