বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেরও প্রায় ছিয়াশি বছর আগে ব্রিটিশ আমলাদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় জনগণকে অপ্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। নব-প্রতিষ্ঠিত সেই সংগঠনের তরুণ নেতৃত্বের উদ্দেশে ব্রিটিশ আমলা অ্যালেন অক্টেভিয়ান হিউম একটি চিঠিতে লিখেছিলেন— “এদেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা বুঝতে পারছে না যে, তারা একটি জীবন্ত অগ্নিগিরির মুখে বসে আছে, এবং এই দেশে যদি একটি সর্বাত্মক কৃষক অভ্যুত্থান ঘটে তাহলে সেদিন এমন কোনো শক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না যে পারবে তাকে দমন করতে”। আমরা যদি ইতিহাসনিষ্ঠ হই, তবে হিউমের এই বক্তব্যের একটি প্রত্যুত্তর পাই স্বাধীন বাংলাদেশের গণ-পরিষদে ১৯৭৫ সালে দেয়া বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যের একটি অংশ থেকে। তিনি বলেছিলেন— “বাংলার গরীব ভালো, বাংলার কৃষক ভালো, বাংলার শ্রমিক ভালো। যদি কেউ খারাপ হয়, তবে খারাপ আমরা তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ। যত গোলমালের মূলে তারাই। যত অঘটনের মূলে তারাই। কারণ তারা ভোকাল শ্রেণি। তারা বক্তৃতা করেন, তারা কাগজে লেখেন”।
এই দুটো বক্তব্যের সূত্র থেকে অবিভক্ত ভারত, পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাঙলাদেশের রাজনীতিতে মধ্যবিত্তের একটি সুস্পষ্ট ধারণা আমরা পেতে পারি। স্বাধীন বাঙলাদেশে গত ৫০ বছরের রাজনৈতিক আলোচনা আবর্তিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে— এমনকি পঁচাত্তরের নির্মম ট্র্যাজিডির পর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিটি স্রোতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অলঙ্ঘ্যণীয় এবং অবশ্যম্ভাবী। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই বাঙলাদেশে বস্তুত দুটো ধারার রাজনীতি চালু আছে— একটি বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিসংগ্রামের দর্শনকেন্দ্রীক রাজনীতি; অন্যটি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনীতি। এই দুটো স্রোতের মধ্যেই গত ৫০ বছরে বাঙলাদেশের রাজনৈতিক দল-উপদলগুলো এসে মিশেছে, সেই মিলিত স্রোত কখনও স্থায়ী হয়েছে, কখনও ছিটকে গেছে; কিন্তু রাজনীতির এ দুটো ধারার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
বঙ্গবন্ধু কেবল বাঙলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল নায়কই নন; তিনি একইসঙ্গে এই রাষ্ট্রের চরিত্রটি কী হবে— তারও দার্শনিক ভাষ্যকার। বস্তুত এ কারণেই তাঁর ট্র্যাজিক মহাপ্রয়াণের পরও ঘাতকরা যুগপৎ তাঁকে ইতিহাস থেকে নিশ্চিহ্ন ও বিকৃত করার রাজনীতি করে যাচ্ছে। ঘাতকদের এ দুটো অপপ্রয়াসই কিন্তু লক্ষ্যণীয়— কেননা, ইতিহাস থেকে কাউকে মুছে ফেলতে চাইলে তাকে বিকৃত করার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু ঘাতকরা এখনও এ দুটো অপচেষ্টা সমান্তরালে চালিয়ে যাচ্ছে, কারণ তারা তো জানে বঙ্গবন্ধু বাঙলার মানুষের অমোঘ অমোচনীয় জন্মদাগ— তাঁকে কোনোদিন মুছে ফেলা যাবে না। ফলে তাঁকে ও তাঁর দর্শনকে বিকৃত করার অপরাজনীতি তারা এখনও করে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু নির্মাণ করেছিলেন বাঙলাদেশ রাষ্ট্রের ধারণা— এই কথাটি যতটা সরলভাবে আমরা বলে থাকি, ততটা হূদয় দিয়ে উপলব্ধি করি না। স্বাধীন বাঙলাদেশের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির বাইরেও রাজনীতি ও জনমনস্তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ নানা অনুষঙ্গগুলো তিনি যেভাবে চিহ্নিত করেছিলেন, বস্তুত তার ওপরই আমাদের রাষ্ট্র ও জীবনকাঠামো দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি আমাদের জাতীয় জীবনের নানা ক্ষেত্রে ঘটমান সংকটগুলোর মূল কারণও হলো বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত বা সংজ্ঞায়িত কক্ষপথ থেকে সরে গিয়ে বাঙলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোর বিকৃতি ঘটানো।
বাঙলার মধ্যবিত্ত শ্রেণির কথা বললে আমাদের আলোচনায় আসেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, শিবনাথ শাস্ত্রী, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ আলোকিত ব্যক্তিবর্গের নাম। আলোচনাটিকে আরেকটু সামনে টানলে সেখানে কাজী আবদুল ওদুদ, মীর মশাররফ হোসেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন তাঁদের নামও উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধার সঙ্গে। বাঙালি মধ্যবিত্তের বিকাশ পর্যায়টি ধরা হয় বিশ শতকের সূচনালগ্ন থেকে, যখন বঙ্গভঙ্গবিরোধী রাজনৈতিক ধারা ভারতবর্ষের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। এই মধ্যবিত্তের আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই ১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করেছিল বটে, কিন্তু আমার মতে, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিটিকে তারা একইসঙ্গে জনগণ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পেরেছিল। ১৮৮৫ সালে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা এবং তারপর ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা— মূলত বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্তকে দু দলে ভাগ করে ফেলে। ফলে এই শিক্ষিত মধ্যবিত্তই বঙ্গভঙ্গ রদের মাত্র ৩৬ বছরের মাথায় দেশভাগের মূল দাবিদার হয়ে ওঠে।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর হিন্দু মধ্যবিত্ত ধারণার আদলেই মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণিটি বিস্তার লাভ করে। ইংরেজি শিক্ষা, সংবাদপত্র প্রকাশ ও রাজনৈতিক সংগঠনে ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়েই সমাজে তারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণিটি নিঃসন্দেহে বাঙলার মুক্তিসংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছিল। ষাটের দশকের রাজনৈতিক বিস্তারের সঙ্গে সাংস্কৃতিক প্রবাহের যে অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছিল, তার এক অসামান্য মহীরূহ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।
এ তো গেল নেতৃত্বের ধারা বা আন্দোলনের উপরিতল। কেবল এইটুকুকে কেন্দ্র করেই স্বাধীন বাঙলাদেশে আমরা মধ্যবিত্তের সংজ্ঞায়ন করেছি, তার ভূমিকা প্রত্যাশা করেছি এবং কখনো কখনো ব্যর্থ হয়ে তাকে সুবিধাবাদী বলেছি। কিন্তু এই প্রশ্নটি সবচেয়ে জরুরি, যাদের আমরা আজও মধ্যবিত্তের মর্যাদায় আসীন করছি, সত্যিই কি তারা প্রকৃত মধ্যবিত্ত শ্রেণি? এই প্রসঙ্গে আমার উত্তর হলো— না; আমরা প্রকৃত মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে কখনো চিহ্নিতই করিনি; উল্টো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার পরও আমরা প্রতিদিন মধ্যবিত্তের প্রকৃত রূপটিকে অস্বীকার করেছি নিজেদের স্বার্থেই। বাঙলার অন্তত দুশো বছরের ইতিহাস যদি চিন্তা করি, তাহলে পরিস্কার বোঝা যায়— একমাত্র দুজন বাঙালি বাঙলার প্রকৃত মধ্যবিত্ত শ্রেণিটিকে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন— একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; অন্যজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আমি বাঙলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে অস্বীকার করছি না, কেননা ইউরোপিয় নবজাগরণের অনেক প্রভাবই এই শ্রেণিটির ওপর পড়েছিল এবং তারা গড়ে তুলেছিল একটি সচেতন সাংস্কৃতিক বলয়। যে সময় নগরকেন্দ্রীক বাঙলায় দেবেন ঠাকুর, রামমোহন রায় বা বিদ্যাসাগরের হাত ধরে নবজাগরণ ঘটছে; সে সময় আরেকটি নবজাগরণ ঘটেছিল বাঙলার গ্রামীণ জনপদে লালন সাঁইয়ের হাত ধরে। কোলকাতার নগরকেন্দ্রীক নবজাগরণের সংবাদ কুষ্টিয়া জানতো না, কুষ্টিয়ার মৃত্তিকা-সংলগ্ন নবজাগরণের সংবাদও পৌঁছুয়নি কোলকাতায়। এ দুটো স্বতন্ত্রভাবে বিকশিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুর নামটি ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তৎকালীন পূর্ব বাঙলায় মধ্যবিত্তের বিকাশ— আমার মতে— প্রকৃত প্রস্তাবে ঘটেছিল কৃষকের হাত ধরে। এখানে তেভাগার আন্দোলন হয়েছে, হয়েছে শ্রমিক আন্দোলন এবং পূর্ববঙ্গের কৃষকই ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে প্রজাসত্ব আইনের বাতিল চেয়েছিল। এই দাবি কিন্তু তৎকালীন নির্বাচনে মূল প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছিল। এ কারণেই পূর্ববঙ্গের কৃষক আন্দোলনে বাউল, সূফী, ফকির, দরবেশ, সন্ন্যাসীরা যুক্ত হয়েছিলেন, কখনও কখনও নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ভাষাকেন্দ্রীক যে সাংস্কৃতিক নবজাগরণ ঘটেছিল, যার মাধ্যমে ১৯৬১ সালের প্রতিবাদী রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদযাপন করেছিল বাঙালি— তার সঙ্গে কৃষক আন্দোলনভিত্তিক মধ্যবিত্ত শ্রেণিটির সাংস্কৃতিক যোগাযোগ থাকলেও কোনো রাজনৈতিক যোগাযোগ ছিল না। অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দর্শনের আলোতে এই যোগাযোগটি তৈরি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফলে বাঙলার মধ্যবিত্তের ‘শিক্ষিত’ ও ‘ব্রাত্য’ শ্রেণিতে বিকাশমান দুটো মধ্যবিত্ত ধারার মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুর নাম যদি হয় রবীন্দ্রনাথ, তবে রাজনৈতিক সেতুটির নাম বঙ্গবন্ধু।
আর এ কারণেই স্বাধীন দেশের গণ-পরিষদে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ‘গণতন্ত্র’ নয়, ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সোচ্চার বক্তব্য দিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন, প্রকৃত মধ্যবিত্ত আসলে শোষিত, কেননা সমাজে তারা ব্রাত্য; শিক্ষিত মধ্যবিত্ত কোনো-না-কোনোভাবে রাষ্ট্রের মূল স্রোতের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। তিনি জানতেন, সিএসপি অফিসাররা স্বাধীন দেশে বিসিএস অফিসার হবে; পাকিস্তানের সামরিক আমলাতন্ত্র পোষাক বদলে বাঙলাদেশের সামরিক আমলাতন্ত্রে নাম লেখাবে— কিন্তু বাঙলার বাউল-কৃষক-শ্রমিক জন্ম থেকেই বাঙলার মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত, সুতরাং তাঁদের জিনতত্ত্বে স্বার্থগত বিবর্তনের কোনো ইতিহাস নেই।
সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কতটা দূর পর্যন্ত দেখেছিলেন, সেটা ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতাগুলো থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। তিনি বারবার ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন, কেননা, তিনি জানতেন পাশ্চাত্যের অনুকরণে প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র আদতে অভিজাততন্ত্রকেই প্রতিষ্ঠিত করে। জনগণ সেখানে কেবল ব্যালট পেপারে সিল মারা পর্যন্তই দায়িত্ব পালন করতে পারেন— সেও পাঁচ বছরে একবার। পঁচাত্তরের পর বাঙলাদেশে আমরা গণতন্ত্রের নামে সামরিকতন্ত্র, মোল্লাতন্ত্র, আমলাতন্ত্র ও মুৎসুদ্দিতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে দেখেছি। জনগণ ভোট দিয়েছে বটে কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তার কোনো অংশগ্রহণই ছিল না; উল্টো ‘গণতন্ত্র আছে কী নেই’ এই তর্কে গড়ে উঠেছে এনজিও, এসেছে বিদেশি নানা সংস্থার অনুদান। এই গণতন্ত্রের বিষয়ে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের আগ্রহ প্রবল, কারণ এর মাধ্যমেই অভিজাততন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ঘটে। এই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বড়ো বিচিত্র শ্রেণি। তারা মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিল, বাহাত্তরের সংবিধানকে সাধুবাদ জানিয়েছিল— আবার পঁচাত্তরের পর অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদ যখন যথাক্রমে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে— তখন তার সঙ্গেও মিশে যেতে পেরেছিল। কিন্তু প্রকৃত মধ্যবিত্ত যাঁরা— বাঙলার কৃষক-শ্রমিক-বাউল-সূফী-ফকির-সন্ন্যাসী— তাঁরা আজও প্রান্তিক হলেও উচ্চকিত, ক্ষীণ হলেও আদর্শিক প্রশ্নে সত্য। ফলে গত ৫০ বছরে মৌলবাদী অপশক্তির আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তুতেই পরিণত হয়েছে তাঁরা। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সন্তর্পনে নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে পেরেছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের সংকটের একটি বড়ো কারণ মধ্যবিত্ত সম্পর্কে আমাদের চিন্তা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরে গেছে। আমরা শিক্ষিত শ্রেণির কদরই সমাজে বাড়িয়েছি, বস্তুত তেলে মাথায় তেল ঢেলেছি; কারণ তার সঙ্গে আপোসরফা করাটা সহজ। যে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে বঙ্গবন্ধু চিহ্নিত করেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে আপোস চলে না। এ কারণেই আজও আমাদের সংকটের উদ্ধারমন্ত্র উচ্চারিত হয় লালনের আখড়া থেকে, বিজয় সরকারের গান শাহ আবদুল করিমের সঙ্গে মিশে পৌঁছে যায় উকিল মুন্সীর দাওয়ায়। সে দাওয়ার কোনো দরজা-জানলা নেই। কেবলই আকাশ। বাঙলার আকাশ। বাঙলার মানুষের জন্য আকাশ।