শহিদজননী: বাঙালির কোমল গান্ধার

কী অপূর্ব এই স্মরণমুহূর্ত! চারপাশের বেকায়দা সময়ে আমাদের হাবা যৌবন যখন গতপ্রায়, তখনই পৌরাণিক ফেরেশতার মতো ক্যালেন্ডারে নেমে আসে তেসরা মে—শহিদ জননী জাহানারা ইমামের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী—আমাদের স্থানাঙ্ক খুঁজে পাওয়ার দিন। কতগুলো নিবিড় বিষন্নতা আমাদের অলৌকিক শুভকামনার সঙ্গে উড়ে যায় তাঁর দিকে—তিনি গ্রহণ করেন, অথবা করেন না; কারণ তিনি তো জানেন—শহিদ রুমীর মতো আসমুদ্রহিমাচল হৃদয় আমাদের…

থামিল কালের চিরচঞ্চল গতি

আমাদের শাহীন রেজা নূর ভাইয়ের জাহাজটি এবার বন্দর ছেড়ে গেল। যাঁকে ঘিরে একদিন আবর্তিত হয়েছিল আমার মতো সামান্য কলমচির ঘোরলাগা বিকেল সন্ধ্যাগুলো, আজ তাঁর স্মৃতিসমগ্র ছড়িয়ে আছে চারপাশে— ব্যথাতুর বিষণ্ন, অথচ সদা হাস্যময়। কেননা তুড়ি মেরে জীবনকে তাড়িয়ে নেয়ার ডাকনামই তো ছিল শাহীন ভাই। এ কারণেই বুঝি বসন্তবরণের মাহেন্দ্রক্ষণে প্রকৃতি তাঁর জন্য রচনা করেছে এই…

শহিদ জননী, এই চিঠি তোমাকে আমার

শহিদ জননী, কী অলৌকিক সমাপতন! ১৯২৯ সালে যখন আপনি জন্ম নিচ্ছেন— বৈশাখে-নিদাঘে অখণ্ড ভারতবর্ষের মুর্শিদাবাদে; প্রায় তখনই এরিক মারিয়া রেমার্ক তাঁর কারুবাসনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট  উপন্যাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায়। আপনি তাহলে এই অমোঘ উপন্যাসটির সমবয়স্ক! হয়তো এ কারণেই পশ্চিম সীমান্তে হারিয়ে যাওয়া পল ব্যমারের প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহিদ রুমীর…

ক্ষমাহীন নক্ষত্রের আগুন-স্থানাঙ্ক

এখনও মাথা উঁচু করে তাঁর পোর্ট্রেটের সামনে দাঁড়ালে আমাদের মনে পড়ে— এক সাগর রক্ত সংগ্রাম সাঁতরে পেরিয়ে তবুও কী বিষণ্ন স্বাধীনতার সৈকত! এবং এখনও তাঁর চশমার কাঁচেই আমাদের পড়ে নিতে হয় মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময়ের বিশ্বাস ও বিদ্রুপ; খুঁজে নিতে হয় বিজয় আর বিস্মৃতির অন্তবর্তী শব্দার্থ ও বাক্যরচনাসমূহ। তাঁর জীবনবৃত্তান্ত এ কারণেই নথিভুক্ত হয় আমাদের প্রজন্মের না-দেখা…

শ্রদ্ধেয় আনিসুজ্জামান স্যার: আমি প্রতিবাদ করছি

গত একুশে আগস্টে দৈনিক জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় একটি চমৎকার আলাপচারিতার বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যারের সঙ্গে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সব্যসাচী বসু রায়ের আলাপচারিতাই ঢাকার কোন প্রত্যাশাই পূরণ করেনি দিল্লী শিরোনামে উঠে এসেছে পত্রিকাটির পাতায়। নিঃসন্দেহে একটি প্রাণবন্ত আলাপচারিতার ছবি স্পষ্ট ভেসে ওঠে প্রকাশিত সংবাদটির মাধ্যমে। জানা যায়, এই আলাপচারিতাটি প্রথমে প্রকাশিত…

একাত্তরের দিনগুলি: দগ্ধ ও কোমল মৃত্তিকার ইতিহাস

একটি দিনলিপি। প্রাত্যহিক জীবনের ভাষায় রচিত। বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ এক অর্জনের ইতিহাস এ দিনলিপির বিষয়বস্তু। এটি কোনো মহাকাব্য নয়; এর অন্তঃস্রোতে যখন তখন শিল্পের মহাবাদল নেমে আসেনি। এবং তারপরও- এটি সকল মহাকাব্যের অতীত, বান-ভাসানো এক মহার্ঘ শিল্পের প্রণয়োচ্ছ্বাসে ঋদ্ধ, বিদগ্ধ। বাঙলা ১৩৯২ সনের ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬) মাসে এটি প্রথম প্রকাশিত হয় এবং এখনও নতুন। বৈশাখ, ১৪১৭…