ফিফথ কলামিস্ট সংক্রান্ত বিপদ সঙ্কেত

১৯৩৮ সালের কথা। তখন আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য ফিফথ কলাম এন্ড দ্য ফার্স্ট ফরটি নাইন স্টোরিস প্রকাশিত হয়। ফিফথ কলাম হেমিংওয়ের একমাত্র নাটকের নাম যেটি লেখা হয়েছিলো স্পেনের গৃহযুদ্ধ চলার সময়ে। মাদ্রিদ শহরে তখন বোমা পড়ছে। এ ঘটনারও দু বছর আগে অর্থ্যাৎ ১৯৩৬ সালে স্পেনের জাতীয়তাবাদী সামরিক অধিকর্তা এমিলো মোলা ‘ফিফথ কলাম’ শব্দটি প্রথম…

শ্রদ্ধেয় আনিসুজ্জামান স্যার: আমি প্রতিবাদ করছি

গত একুশে আগস্টে দৈনিক জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় একটি চমৎকার আলাপচারিতার বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যারের সঙ্গে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সব্যসাচী বসু রায়ের আলাপচারিতাই ঢাকার কোন প্রত্যাশাই পূরণ করেনি দিল্লী শিরোনামে উঠে এসেছে পত্রিকাটির পাতায়। নিঃসন্দেহে একটি প্রাণবন্ত আলাপচারিতার ছবি স্পষ্ট ভেসে ওঠে প্রকাশিত সংবাদটির মাধ্যমে। জানা যায়, এই আলাপচারিতাটি প্রথমে প্রকাশিত…

বাঙলা নববর্ষ: ব্রাত্যজনের ভাবনা

নববর্ষ এলেই আমার মধ্যে এক প্রগাঢ় ভাবনার উদয় হয়। আমি ভাবতে শুরু করি- বাঙালির নববর্ষ আসলে বাঙালির চৌকাঠে কতোটা আপন হয়ে আসে। মানে, কতোটা তা উৎসবের, কতোটা তা উদযাপনের, আর কতোটাই বা তার চর্চার। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি যেটুকু বুঝি, তাতে সংস্কৃতি আমার কাছে একটি বড়ো ধারণা। একই সঙ্গে তার মধ্যে যে গভীর বাঙময়ী প্রত্যয়…

অতএব, রক্ষকই অবশেষে ভক্ষক

ঠিক আভিধানিক অর্থকে মাথায় রেখে এখানে ‘রক্ষক’ কিংবা ‘ভক্ষক’ শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছে আস্থার মাপকাঠি বিবেচনা করে। বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিশেবে আমি কতোটা আস্থা রাখতে পারি আমার রাষ্ট্র কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোর উপর? এ প্রশ্নটি খুঁজতে গিয়েই লেখাটির সূত্রপাত। চারপাশে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো বিষয়ই হতে পারতো এ লেখার প্রভাবক, কিন্তু গত…

শূন্যলোকের অনন্ত রথে শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ

চলে যাবার জন্যে কোনো সমীকরণ লাগে না; কেউ কেউ চলে যান একেবারে নিভৃতে, কারও কাছে কোনো অভিযোগ পেশ না করেই। কেউ কেউ আছেন, চলে গেলে বৃষ্টি হয়, ঝুম বৃষ্টি- কারও কারও অন্তর্ধানে তৃষিত চোখে হাহাকার নামে; কেউ কেউ আছেন, যাবার আগে পিছন ফিরে তাকান না, আবার কেউ কেউ পিছনেই ফিরে থাকেন- যেনো যেতে হলেও পেছন…

‘শব্নম’: বিরহিনী নিশীথিনীর অশ্রুশিশির

ভালোবাসার বৃষ্টি নাকি ভেজায়। মানে ভিজতে হয়। চেতনার রঙে সবুজ পান্নার শরীরে জমে ভালোবাসার শিশির; হৃদয়জ এবং তার চেয়েও বেশি কিছু, কিন্তু মোহনীয় নয়- মোহ নেই সে-ই ভালোবাসার প্রবাদ শরীরে। এমন ভালোবাসার নির্যাস পেতে হলে হৃদয়কে ‘হৃদয়’ করে গড়ে তুলতে হয়। কেবল হৃদয় হলেই হয় না, তাকে দার্শনিক করে গড়ে তুলতে হয়, কখনো ছাঁচে ফেলে,…

গানের ঝর্ণাতলায়: সুচিত্রা মিত্র

বছরটা কেটে গেলো। কান্না-হাসির দোলায় দোলে অঞ্জলি। এ অঞ্জলি জীবনের কাছে কতক অর্থহীন, কতক নিরর্থক। অর্থগুলো নিছক হারায় স্বপ্নহীনতায়, আবার নিরর্থকেরা কেবলই আনাগোনা করে, চোখের করতলে নামিয়ে আনে শিশির ঝরা নিভৃত রাত্রি। প্রণয়-ব্যাথার ছন্দে মৃদু বেজে যায় আপ্ত প্রহেলিকার মতো রবি ঠাকুরের গান- ‘এবার নীরব করে দাও হে তোমার মুখর কবিরে’। মনে প্রশ্ন জাগে- কবি…

অজিত রায়: নয়ন সম্মুখে তুমি নাই

উপসংহার .. ..আশি, উনআশি, আটাশি, সাতাশি.. ..পঞ্চান্ন, চুয়ান্ন.. ..সাতচল্লিশ.. ..বাইশ, একুশ, কুড়ি, ঊনিশ, আঠারো.. ..সাত, ছয়, পাঁচ, চার, তিন, দুই, এক। এক। এক।.. ..এক। ছায়াপিণ্ড উত্তর দিলো- এক নয়; শূন্য। লাইফ সার্পোট সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কথাটির পুনরাবৃত্তি করলো আরও কয়েকজন।‘ লাইফ সার্পোট’। দুইটি দীর্ঘশ্বাস। একটি দীর্ঘ; অন্যটি ছোটো- অতো দীর্ঘ নয়। হি ইজ নো মোর-…

শুভ জন্মদিন মহানায়ক

বেঁচে থাকলে আজ তিনি পঁচাশি বছরে পা দিতেন। তখন কেমন দেখাতো তাঁকে? তিনি কী বুড়ো হয়ে যেতেন? চুলে পাক ধরতো? শরীরে মেদের উপস্থিতি নিয়েও পর্দার সামনে দাঁড়িয়ে নিরন্তর আওড়াতেন নায়ক কিংবা নায়িকার পিতার সংলাপ? তারপর স্যুটিং ফ্লোরের ব্যস্ততা সেরে বাড়ি ফিরতেন। ক্লান্তি-শ্রান্তি নিয়ে শরীর এলিয়ে দিতেন শোবার ঘরের ইজি চেয়ারে। চোখ আলতো বুজে আসতো- অমনি…

শহিদ রুমী: আমার ফ্ল্যাশব্যাকে, আমার প্রত্যাশায়

একটি বিশেষ স্টাইলে নিজের তোলা একটি ছবি বাঁধিয়ে রাখার খুব ইচ্ছে আমার। কোমরে হাত, ঘাড়টা আমার ডান হাতের দিকে বাঁকানো। অবশ্য ছবিটা যিনি দেখবেন, তার মনে হবে আমি বাঁ দিকে ঘাড় কাত করে রেখেছি। ছবিটার উপরে অ্যামবুশ করে লিখে রাখা হবে জীবনানন্দ দাশের সে-ই অনন্য কবিতার পঙক্তি, আবার আসিবো ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়.. ..…

নক্ষত্রের তলে শুয়ে ঘুমায়েছে যে জন

শান্তি নিকেতনের বাতাসটা কেমন? ওখানকার বাতাসে কি রবীন্দ্রনাথ মিশে থাকেন? ওখানকার বৃষ্টিতে, কিংবা রোদের অ্যানাটমি জুড়ে কি রবিঠাকুরের নিবিড় বসত? রবীন্দ্রনাথ উপনিষদের দর্শনে সাহিত্যচর্চা করতেন। বোধ করি তিনি সে জন্যই বলে গিয়েছিলেন, ‘তোমারে যা দিয়েছিনু, তা তোমারি দান। গ্রহণ করেছো যতো, ঋণী ততো করেছো আমায়.. ..’। কবিগুরুর কোনো অভিযোগ ছিলো না কারও বিরুদ্ধে। তাই বুঝি…

মিশুক মুনীর: তুমি রবে নীরবে

এমন একটি লেখা লেখার ইচ্ছে আমার ছিলো না। নিঃসঙ্গ বাতায়নের সাথে গুবাক তরুর সারির কথোপকথন আর কখনো হবে না। এ-ও এক ট্র্যাজিডি- গ্রীক ট্র্যাজিডির সাথে সামঞ্জস্য; কেবল ভাগ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়- কিংবা এরও বাইরের কিছু। আমি জানি না, ক্যামেরার কোন অ্যাঙ্গেলে কথা বলতে ভালোবাসতেন আশফাক মুনীর মিশুক। জীবনের ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে তিনি কী কোনোদিন…

মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদ: নিঃসঙ্গ সময়ের সারথি

এমন একটি লেখা লেখার ইচ্ছে আমার ছিলো না। নিঃসঙ্গ বাতায়নের সাথে গুবাক তরুর সারির কথোপকথন আর কখনো হবে না। এ-ও এক ট্র্যাজিডি- গ্রীক ট্র্যাজিডির সাথে সামঞ্জস্য; কেবল ভাগ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়- কিংবা এরও বাইরের কিছু। আমি জানি না, ক্যামেরার কোন অ্যাঙ্গেলে কথা বলতে ভালোবাসতেন আশফাক মুনীর মিশুক। জানি না সেলুলয়েডের সাথে কেমন প্রেম ছিলো তারেক…

জ্বলছে ইংল্যান্ড, ফাঁসিতে ঝুলন্ত ক্ষুদিরাম: দাবার ছকটা ইতিহাসের

পেরিয়ে যাবার একটি ব্যাকরণ আছে, অতিক্রম করে যাবার একটি নিয়ম আছে। আবার কখনো কখনো এমন হয়েছে অতিক্রম করে গিয়েও নিজেকে ধরে রাখা যাচ্ছে না। ফিরে আসতে হচ্ছে গান গাইতে গাইতে। ওই যে গান আছে না- ফিরে চল ফিরে চল মাটির টানে.. .. কয়েকটি সত্য আছে, মুখোমুখি হওয়া যায় না। তখন আমরা বলি- ওভাবে নয়, একটু…

নির্বাক হলেন প্রথম সবাক বাঙলা চলচ্চিত্রের শিল্পী আমিনুল হক

ফিল্ম  রিভিউ ম্যগাজিনে একবার একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছিলো- যার একটি অংশের বাঙলা তরজমা করলে দাঁড়ায়- পরিচালক অনেকাংশেই চলচ্চিত্রের মূল-কাঠামোতে দৃষ্টি রাখেন, এতে ছোটো ছোটো অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টি দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয় না। ওই কাজটি একজন দক্ষ অভিনয়-শিল্পী করে থাকেন। এই জাতীয় অভিনয় শিল্পীরাই পরিচালকের ফরমায়েশ পেরিয়ে আরও কয়েক কদম এগিয়ে আসেন- এবং কার্যতই এতে…