ফিফথ কলামিস্ট সংক্রান্ত বিপদ সঙ্কেত

১৯৩৮ সালের কথা। তখন আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য ফিফথ কলাম এন্ড দ্য ফার্স্ট ফরটি নাইন স্টোরিস প্রকাশিত হয়। ফিফথ কলাম হেমিংওয়ের একমাত্র নাটকের নাম যেটি লেখা হয়েছিলো স্পেনের গৃহযুদ্ধ চলার সময়ে। মাদ্রিদ শহরে তখন বোমা পড়ছে। এ ঘটনারও দু বছর আগে অর্থ্যাৎ ১৯৩৬ সালে স্পেনের জাতীয়তাবাদী সামরিক অধিকর্তা এমিলো মোলা ‘ফিফথ কলাম’ শব্দটি প্রথম…

বাঙলা নববর্ষ: ব্রাত্যজনের ভাবনা

নববর্ষ এলেই আমার মধ্যে এক প্রগাঢ় ভাবনার উদয় হয়। আমি ভাবতে শুরু করি- বাঙালির নববর্ষ আসলে বাঙালির চৌকাঠে কতোটা আপন হয়ে আসে। মানে, কতোটা তা উৎসবের, কতোটা তা উদযাপনের, আর কতোটাই বা তার চর্চার। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি যেটুকু বুঝি, তাতে সংস্কৃতি আমার কাছে একটি বড়ো ধারণা। একই সঙ্গে তার মধ্যে যে গভীর বাঙময়ী প্রত্যয়…

পঁচিশে মার্চ ১৯৭১

দৃষ্টিজুড়ে আলো থাকলেই অন্ধকার ঘুচায় না। আঁধারেরও একটা রঙ আছে, তারও একটা সত্তা আছে। ওইটুকু বাদ দিলে যে নিকষ ভয়ঙ্কর রাত্রির পর্দা নামে, তাতে ভয় ধরে; ভয়ার্ত মনের মধ্যে বাসা বাধে শব্দেরা; শব্দগুলোর কান্না পায়, চিৎকার করে কাঁদে, কেবল কাঁদে আর কাঁদে; ইতিহাসের পনেরো খণ্ডে শব্দগুলো আমার বুলেট হয়ে যায়। আমি তোমাদের বিস্তীর্ণ ব্যস্ত জীবনে…

জেনোসাইডের নীরব সাক্ষী

আমার কী নাম? নামফলক দেখে হয়তো বলে দিতে পারবে অনেকেই। কেউ কেউ কপাল কুঁচকে বলবেন- পাথরের আবার নাম! জড় পদার্থের নামের কী দরকার? কিন্তু আমি কি কেবলই জড় পদার্থ? কেবলই কি এক অসাড় চলৎশক্তিহীন পাথর আমি? কেউ কী কখনো আমার পাশ দিয়ে যাবার সময় একবার ফিরে তাকিয়েছো? একবার ভেবে দেখেছো- আমি আসলে কথা কইতে জানি,…

একাত্তরের নারী: অশ্রুবিন্দু ও অগ্নিশিখা

উনিশ শো একাত্তর সালের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধকে নানাভাবে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা এবং অপচেষ্টা— দুটোই হয়েছে বিগত সময়গুলোতে। বলতে দ্বিধা নেই, এখনও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বা এ সম্বন্ধীয় আলোচনা পৌঁছোতে পারেনি আমাদের কাঙ্ক্ষিত জিজ্ঞাসার স্তরে। আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের নানাদিকের আলোচনা চেয়ে একটি ফরমায়েশী আলোচনাই হয়েছে সবখানে। স্বাধীনতার এতো বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-চলচ্চিত্র-সাহিত্য বা অন্য যে কোনো…

নীলিমা ইব্রাহিম: বাঙালির নিভৃত নিরঞ্জনা

এক আকাশের দিকে তাকালে ‘সাঙান গগনে ঘোর ঘনঘটা’র কথাই মনে হয়। এ যে আষাঢ় মাস, বর্ষা ঋতু- সে আর পঞ্জিকার পাতা খুলে বলতে হয় না। প্রকৃতিই সময়ের দর্পন হয়ে দেখা দেয়। বর্ষা বাঙালির প্রাণের ঋতু- অনেকভাবেই ভেবেছি কথাটা; সত্যিই এ ঋতু আমাদের ফসলের ঋতু, রবীন্দ্রনাথের ঋতু, পদাবলীর ঋতু আর অবশ্যই কালিদাসের ঋতু। নানা বাঁকে বর্ষা…

তাজউদ্দীন আহমদ: জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

ভূমিকার আগের অধ্যায় ২৩ জুলাই। ১৯২৫ সাল। কেমন ছিলো সেদিনের রূপ? সেদিন কি বৃষ্টি ছিলো, কিংবা গরম, রোদের বাড়াবাড়ি সেদিনের মানুষের কাছ কি একটু বেশি মনে হয়েছিলো? অথবা সেদিনের সেই দিনটিতে শাপলার জলে খেলা করেছিলো শালুক, ম্রিয়মান সন্ধ্যায় দহলিজে বসে কেউ কি আপন মনে নিবিড় প্রার্থনায় মগ্ন ছিলো? সেদিনের দৃশ্যে সবুজের সাথে গাঢ় লালের একটি…

সেই আটটি স্মারক ডাকটিকেট

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ- এ যেনো এক মহীরূহ। নানা বর্ধিষ্ণু সীমা-পরিসীমা তার। ইতিহাসের অলি-গলি ঘুরে যখনই কেউ এসে পড়বেন এই অনন্য অধ্যায়ে- বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে তখনই তার অবস্থা দাঁড়াবে ‘প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি’র মতো, ফলে ‘অকারণ পুলকে’ তিনি খুঁজে ফিরবেন ‘স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি’। উনিশশো একাত্তর এমনই এক ইতিহাস, ‘পুরাতনী তুমি নিত্য নবীনা’ বাঙালির আত্মজ অহঙ্কারের সাথে…

পঁচিশে মার্চ ১৯৭১: জেনোসাইডের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। তাই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ বা ‘বাঙালি এথনিক ক্লিনজিং’ শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে। ওইদিন সকালবেলা একটি সামরিক হেলিকপ্টারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জানজুয়া, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ এবং মেজর জেনারেল…

চৈত্রের চিঠি

অনেকদিন আগে, সম্ভবত আমার কৈশোরের জীবন জুড়ে থাকা বাগানের কোনো এক গাছের নিচে আমি একটি ছায়া দেখেছিলাম। বিমূর্ত মানবীর ছায়া। আমি শহরে বড়ো হওয়া ছেলে, তাও খোদ রাজধানী। আমার কাছে কৈশোর মানে স্কুল ছুটির পর আম্মার জন্যে মাঠের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা, দুরন্তপনা মানে সহপাঠী বন্ধুর সাদা শার্টে কলম দিয়ে আঁচড় কাটা, আমার বিষণ্ন চোরাগলির শহুরে…

স্বাধীনতার ৩৫ বছর- প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির আলকেমি

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে বাঙালি জাতির চেতনায় স্বাধীনতার যে বীজ উপ্ত হয়েছিলো তার মহীরুহ রূপান্তর ঘটে ১৯৭১ সালে, নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। অধিকার আদায়ের দৃপ্ত শপথে, দেশকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হিংস্র কবল থেকে রক্ষা করার জন্য; সেদিন ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলেছিলো বাঙালি; অস্ত্র…