মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদ: নিঃসঙ্গ সময়ের সারথি

এমন একটি লেখা লেখার ইচ্ছে আমার ছিলো না। নিঃসঙ্গ বাতায়নের সাথে গুবাক তরুর সারির কথোপকথন আর কখনো হবে না। এ-ও এক ট্র্যাজিডি- গ্রীক ট্র্যাজিডির সাথে সামঞ্জস্য; কেবল ভাগ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়- কিংবা এরও বাইরের কিছু। আমি জানি না, ক্যামেরার কোন অ্যাঙ্গেলে কথা বলতে ভালোবাসতেন আশফাক মুনীর মিশুক। জানি না সেলুলয়েডের সাথে কেমন প্রেম ছিলো তারেক…

নীলিমা ইব্রাহিম: বাঙালির নিভৃত নিরঞ্জনা

এক আকাশের দিকে তাকালে ‘সাঙান গগনে ঘোর ঘনঘটা’র কথাই মনে হয়। এ যে আষাঢ় মাস, বর্ষা ঋতু- সে আর পঞ্জিকার পাতা খুলে বলতে হয় না। প্রকৃতিই সময়ের দর্পন হয়ে দেখা দেয়। বর্ষা বাঙালির প্রাণের ঋতু- অনেকভাবেই ভেবেছি কথাটা; সত্যিই এ ঋতু আমাদের ফসলের ঋতু, রবীন্দ্রনাথের ঋতু, পদাবলীর ঋতু আর অবশ্যই কালিদাসের ঋতু। নানা বাঁকে বর্ষা…

এক নীল ছোঁয়া কিংবদন্তীর অন্তর্ধান

আকাশটা খুব মেঘলা। বেশ কিছুদিন ধরেই। রোদ আর এই বৃষ্টির এক খামখেয়ালি সময়। বাতাসটা বেয়াড়া, কখনো বা শান্ত। কিন্তু এই মাত্র যে বাতাসটা ছুঁয়ে গেলো- তা শান্তও নয়, আবার অশান্তও বলা যায় না। এ যেনো এক খবর নিয়ে এসেছে। তার করতলে জমে আছে সীমানা পেরোনো দীর্ঘশ্বাস। কণ্ঠস্বর ক্ষীণ। ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু এক ঝোলায় যেনো কার চিঠি…

হঠাৎ এক আশ্চর্য বিকেল

লেখার কতোটুকু ফরমায়েশি আর কতোটুকু আয়েশি? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া ভার। তবে এর মাঝেও একটি সান্ত্বনা এই যে- মানুষ কিছু প্রশ্নের কোনো উত্তর প্রত্যাশা করে না। যেমন, ছোটোগল্প আসলে কতো ছোটো? কিংবা মনেরও কি মন আছে? তাই লেখা যেমনই হোক- তার উৎসমূলের হিসেব খুঁজতে যাওয়াটা বোধ হয় উচিত হবে না- কারণ এটি রবীন্দ্রনাথের লেখা…

তাজউদ্দীন আহমদ: জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

ভূমিকার আগের অধ্যায় ২৩ জুলাই। ১৯২৫ সাল। কেমন ছিলো সেদিনের রূপ? সেদিন কি বৃষ্টি ছিলো, কিংবা গরম, রোদের বাড়াবাড়ি সেদিনের মানুষের কাছ কি একটু বেশি মনে হয়েছিলো? অথবা সেদিনের সেই দিনটিতে শাপলার জলে খেলা করেছিলো শালুক, ম্রিয়মান সন্ধ্যায় দহলিজে বসে কেউ কি আপন মনে নিবিড় প্রার্থনায় মগ্ন ছিলো? সেদিনের দৃশ্যে সবুজের সাথে গাঢ় লালের একটি…

সেই আটটি স্মারক ডাকটিকেট

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ- এ যেনো এক মহীরূহ। নানা বর্ধিষ্ণু সীমা-পরিসীমা তার। ইতিহাসের অলি-গলি ঘুরে যখনই কেউ এসে পড়বেন এই অনন্য অধ্যায়ে- বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে তখনই তার অবস্থা দাঁড়াবে ‘প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি’র মতো, ফলে ‘অকারণ পুলকে’ তিনি খুঁজে ফিরবেন ‘স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি’। উনিশশো একাত্তর এমনই এক ইতিহাস, ‘পুরাতনী তুমি নিত্য নবীনা’ বাঙালির আত্মজ অহঙ্কারের সাথে…

মুক্তিযুদ্ধের চিত্র ও ভাস্কর্যশিল্প

আকাশের কোনো সূচীপত্র নেই, বস্তুত লাগেও না; কোথায় তার শুরু, কোথায় শেষ— তার কোনো ইতিহাস নেই। আকাশের কেবল আছে বিশালতা, অপরূপ সৌন্দর্য, অনন্য অখণ্ডতা; প্রাণময় মহৎ কোনো অনুভূতির মতো আকাশটা কখনো বিবর্ণ আবার কখনো রঙিন আর উচ্ছ্বল অর্থদ্যোতনায় ঋদ্ধ। এই আকাশের মতোই বাঙালির ইতিহাস— ঐশ্বর্যমণ্ডিত, অবিস্মরণীয় ও প্রবাদপ্রতিম। বাঙালি জাতি, বাঙলা ভাষা ও বাঙলাদেশ— একই…

সেই মায়েদের মা দিবস

মা দিবস শেষ হলো। দিবস উদযাপন অত্যন্ত আনন্দঘন একটি বিষয়। বিভিন্ন দিবসের বিভিন্ন প্রতিপাদ্য- বাঙালি নানাভাবে সেসব দিবস উদযাপন করে থাকেন, গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার পরীক্ষার্থীরা এসব দিবসের প্রতিপাদ্য মুখস্থ করে রাখেন, দিবসকে কেন্দ্র করে হাল আমলের টি-শার্ট, পোস্টার, শুভেচ্ছা কার্ড আরও কতো কী! গণমাধ্যমগুলোতে বিশেষ দিবসের বিশেষ সংবাদ, বিশেষ অনুষ্ঠান। মানে সবকিছু মিলিয়ে উৎসবমুখর জাতির উৎসবের…

পঁচিশে মার্চ ১৯৭১: জেনোসাইডের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। তাই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ বা ‘বাঙালি এথনিক ক্লিনজিং’ শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে। ওইদিন সকালবেলা একটি সামরিক হেলিকপ্টারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জানজুয়া, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ এবং মেজর জেনারেল…

আসন্ন নির্বাচন: যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের লড়াই

আজকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সংবাদপত্রে এমনকি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের মধ্যেও যে কথাটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় তা হলো, এবারের নির্বাচনে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের অংশগ্রহণ। জীবনে প্রথমবার ভোটার হতে পারার আনন্দ, দায়িত্ববোধ এবং আসন্ন নির্বাচনে এ বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে একজন নতুন ভোটার হিসেবে লেখাটি লিখছি। আমি জানি, আমার মতো অনেকেরই হয়তো আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে এক রোমাঞ্চকর…

ডিইউডিএসের নতুন নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশা

‘অবশেষে’ গত ২৯ মে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এখানে ‘অবশেষে’ শব্দটি ব্যবহৃত হলো, কেননা এ নির্বাচনটি নিয়ে বিগত দুই সপ্তাহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে যে প্রশ্ন-সন্দেহ আর অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিলো, তা সম্ভবত আগে কখনোই দেখা যায়নি। অন্যদিকে ডিইউডিএস’এর প্রধান সমন্বয়কারী ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যার অনুপস্থিত, সুতরাং যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেছেন…

এবারের সংগ্রাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সংগ্রাম

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বপ্ন আর প্রত্যাশার ভিত্তিতে বাঙলাদেশ নামক স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্ম হয়েছিলো, আজ স্বাধীনতার ৩৭ বছর পরও সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ হয়নি, উপরন্তু এ অপ্রাপ্তির সমীকরণে যোগ হয়েছে কিছু ন্যাক্কারজনক চলক, যা কিনা এখন আমাদের সমগ্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেই উপহাস করে চলেছে। বাঙালির স্বাধীনতা অর্জন কেবল নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধই নয়, বরং দীর্ঘ…

শিল্পী হায়দার হোসেনকে বলছি

শিল্পী হায়দার হোসেনের গাওয়া ‘৩০ বছর’ গানটি শুনে তার ফাইস্যা গেছি অ্যালবামের গানগুলো এক বন্ধুর কাছ থেকে চেয়ে নিই। অ্যালবামের গানগুলোর মধ্যে ‘শব্দার্থ’ গানটি শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। এ গানের কিছু লাইন শুনে ‘৩০ বছর’ গানের শিল্পী হায়দার হোসেনকে কেবল হায়দার হোসেন মনে হয়। এ গানের একস্থানে তিনি বলেছেন,   শহিদ কাকে বলে… হউক সে…

স্বাধীনতার ৩৫ বছর- প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির আলকেমি

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে বাঙালি জাতির চেতনায় স্বাধীনতার যে বীজ উপ্ত হয়েছিলো তার মহীরুহ রূপান্তর ঘটে ১৯৭১ সালে, নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। অধিকার আদায়ের দৃপ্ত শপথে, দেশকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হিংস্র কবল থেকে রক্ষা করার জন্য; সেদিন ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলেছিলো বাঙালি; অস্ত্র…