নববর্ষ এলেই আমার মধ্যে এক প্রগাঢ় ভাবনার উদয় হয়। আমি ভাবতে শুরু করি- বাঙালির নববর্ষ আসলে বাঙালির চৌকাঠে কতোটা আপন হয়ে আসে। মানে, কতোটা তা উৎসবের, কতোটা তা উদযাপনের, আর কতোটাই বা তার চর্চার। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি যেটুকু বুঝি, তাতে সংস্কৃতি আমার কাছে একটি বড়ো ধারণা। একই সঙ্গে তার মধ্যে যে গভীর বাঙময়ী প্রত্যয় আছে, তা আমাকে আলোড়িতো করে সব সময়। বাঙালি বা বাঙলার মানুষ- যে নামটাই ব্যবহার করি না কেনো, আমি আসলে একটি মহৎ ও প্রাণময়ী দর্শন-প্রেক্ষিত সাংস্কৃতিক জাতিকেই বুঝি, যার মধ্যে বোধ ও মননের একটি দুর্বার আয়োজন আছে। বাঙলার মানুষ আবহমানকাল থেকেই স্বপ্ন-ভালোবাসা আর পূর্ণতার ক্যানভাসে নিজেদের রঙিন করেছে। ভাবতে দোষ নেই, সেই রঙিন ক্যানভাসটাই তার জীবনের আলো। জাতি হিশেবে বাঙালি অর্জন করেছে কিছু মহৎ অনুভূতি, অর্জন করেছে কিছু দার্ঢ্য ইতিহাস। এই অনুভূতি আর ইতিহাসের ফ্রেমে বাঙলার মানুষকে বিচার করলেই দেখা যাবে, একটি গৌরবান্বিত অতীতকে সে তার বক্ষপিঞ্জরে ভালোবেসে রেখেছে। যত্নে লালন করেছে। এই ভালোবাসা আর যত্নই বাঙালির ধর্ম। এই ভালোবাসা আর যত্নই বাঙালির প্রাণ-ভোমরা। আবহমান বাঙলার ঐতিহ্য-লালিত সাংস্কৃতিক সুবাতাস বাঙলাদেশের জন্য একটি প্রেরণা, একটি অহঙ্কার। আমাদের সামনের পথ কিংবা অতীতের সংগ্রাম- এসব কিছুই আমরা পেয়েছি আমাদের অতীতের আকর থেকে। জাতি হিশেবে তাই আমরা যতোটা সমৃদ্ধ, ততোটা আমরা ভাবতে পারি না। প্রশ্ন হতে পারে- কেনো? উত্তরটা খুব সহজ; কারণ দিনে দিনে আমরা আসলে ছোটো হয়ে যাচ্ছি- চিন্তায়-ভাবনায়-মানসিকতায়, আমরা আসলে খুব ছোটো হয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন। আমাদের চলার পথে যে আবেগ আর অনুভূতির সারাৎসার বিরাজ করে, তা একদিকে অর্জন করেছে চলতি সময়ের অর্থহীনতা, অন্যদিকে বিচ্যুত হচ্ছে যাবতীয় আকাঙ্ক্ষাবোধ হতে। আমাদের স্বপ্নগুলো এখন বড়োজোর একটা এপার্টমেন্টের ছাদ স্পর্শ করতে পারে, আকাশ আমাদের আর হাতছানি দেয় না, আমাদের ভাবনাগুলো এখন হিমেল ভল্টে বন্দী, চিন্তার সুরসুতার সাথে আর তার সখ্য হয় না। আমাদের প্রেরণা এখন প্রতিদিনের না, গুণে গুণে কয়েকদিনের হয়েছে মাত্র। নববর্ষই কেবল নয়, যে কোনো জাতীয় উৎসব এখন ক্যালেন্ডারের পাতায় বন্দী। একদিনের বাঙালি হবার দুর্বার আয়োজনে আমরা এতোটাই হাস্যকর হয়ে যাচ্ছি যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের নাম দিতে পারে- ‘ক্লাউন’।
এই সঙ্কটটা আসলে কোথায়? আমার মনে হয়েছে, পুরো সঙ্কটের মূল হলো আমাদের অস্থিরমতি আর দ্বিচারিতা। আমরা আধুনিকতার সংজ্ঞাটা জানি না, বা বুঝি না; একই সঙ্গে জানি না আমাদের উৎসবের দর্শন প্রকৃত প্রস্তাবে আসলে কি। চিন্তা করাটা আমাদের ধাঁতে নেই। যা আছে, তা কেবল পালন। এই যে চিন্তার দীনতা, এর একটি বড়ো নেতিবাচক প্রভাব আমরা প্রত্যক্ষ করছি প্রতিমুহূর্তে। চলার পথে, রাজনীতিতে, সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতিতে এই যে চিন্তার দীনতা, তার ফলই হলো মৌলবাদের উত্থান। আমরা হঠাৎ হঠাৎ ভাবি, একদিনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, একদিনের জন্য আমরা একতারা-দোতারা, পাঞ্জাবি নিয়ে হৈ চৈ ফেলে দেই- আবার সেই একই অসাড়তা। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। দিনটি পেরোলে আমরা আমার আমাদের নির্জীবতায় ফিরে যাচ্ছি। আমাদের ভাবনার জগতে পড়ছে মস্ত তালা। কিন্তু এর একটা উল্টো চিত্র আছে। সেই চিত্রটি হলো, মৌলবাদীদের চিত্র। একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে, মৌলবাদীরা সারা বছর ধরেই মুক্তিযুদ্ধ, নববর্ষ, শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ- ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে যাচ্ছেতাই বলে বেড়াচ্ছে, সুযোগ সময় মতো এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষদের উপর আক্রমণ করছে। আর আমরা নির্দিষ্ট একটি বা দুটি দিবসে তাদের বিরুদ্ধে দু একটি বাঁধানো বুলি আওড়াচ্ছি। সেটাও আজকাল কমে এসেছে। নববর্ষ উদযাপনের সবচেয়ে বড়ো অনুষ্ঠানটি হয় রমনার বটমূলে, ছায়ানটের উদ্যোগে। এই বটমূলের অনুষ্ঠানেই ভয়ানকভাবে মৌলবাদীরা হামলা চালিয়েছিলো। সেই ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলো মানুষ, আহত হয়েছিলো মানুষ- আর চিরদিনের জন্য মথা নত হয়েছে আমাদের; আমরা, যারা মনে করি- এই রাষ্ট্রে কোনো অধিকার নেই এইসব মৌলবাদী অপশক্তির, এই কুৎসিত হায়নাদের। রমনার বটমূলের এই হামলা কিন্তু কেবলই একটি অনুষ্ঠানের ওপর হামলা নয়। এটি আমার চেতনার আকাশে শকুনের ওড়াওড়ি জানান দেয়। এই শকুনগুলো ক্রমশ বড়ো হচ্ছে, সংখ্যায় বাড়ছে। এরা আমাদের সবটুকু নীল আকাশ এদের কালো থাবায় আটকে দিতে চাইছে। আমরা কি সে খবর রাখছি? আমাদের চোখে কি সে ভয়ানক দৃশ্যটি ধরা পড়ছে?
অনেকেই একটি কথা বলে থাকেন- জামাত-শিবির তো ক্ষমতায় নেই, তারা কোণঠাসা হয়ে আছে। এই তত্ত্বটি যাদের আমার ধারণা তারা সকলেই বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কারণটা বলছি। স্বাধীনতার পরে জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় ছিলো খুব কম সময়। সত্যি বলতে, এরা একটি অপাঙক্তেয় বর্বর উচ্ছিস্ট থেকে ক্রমশ ক্ষমতার মসনদে গিয়েছে আমাদের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দীনতার সুযোগে। ক্ষমতায় গিয়ে এরা দেখিয়েছে এদের আসল রূপ। জঙ্গিবাদের অভিশাপ, মৌলবাদের উত্থানকে একেবারে রাষ্ট্রীয় কাজে রূপান্তরিত করেছিলো তারা। কিন্তু এছাড়াও, যখন তারা ক্ষমতার বাইরে ছিলো, তখন কিন্তু এরা চুপ করে বসে থাকেনি। সাপ যেমন শীতল, তেমনি শীতলতায় এই সব সারমেয়রা আমাদের ছোবল দেবার জন্য অপেক্ষায় থেকেছে এবং সুযোগ পেলেই ছোবল মেরেছে। জামাত-শিবির সারা বছরই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধাচরণ করে নানা অপপ্রচার চালায়। বিভিন্ন মাহফিলে, বিভিন্ন সমাবেশে এরা আমাদের সাংস্কৃতিক মূল বিষয়গুলো নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে বসে এরা পহেলা বৈশাখ সম্বন্ধে নানা বাজে কথা বলে থাকে। এগুলো প্রতিরোধ করতে হবে এবং করতে হবে আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়েই। কেবল একদিনের উৎসব পালন করেই এগুলো নিশ্চিহ্ন হবে না। প্রয়োজন সার্বক্ষণিক চর্চা। আমাদের কাজে, আমাদের প্রেরণায়, আমাদের জীবনাচরণে এগুলোকে রাখতে হবে একেবারে ধ্রুব সত্যের মতো। আমি বাঙালি- এই বড়ো সত্যটাই আমার শক্তি। এই শক্তিটাই আমার সমস্ত আয়োজনের উৎসকথা। এই শক্তিটাকে লালন করা জরুরী, কেবল একটি নির্দিষ্ট দিনেই নয়, প্রতিদিন।
একটু খেয়াল করে দেখা যাক, ঠিক কি কি কারণে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক মননকে প্রতিদিন লালন না করে কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। প্রথমত, আমাদের উৎসবগুলো হয়ে গেছে সংগঠন-কেন্দ্রীক। অর্থাৎ বিভিন্ন সংগঠন তাদের মতো করে উৎসবের স্বত্ব নিয়ে নিচ্ছে। এর সঙ্গে এসে জুটেছে বিভিন্ন মিডিয়া। সবকিছুতেই কেবল নিজেদের মধ্যে বিষয়টি ধরে রাখার একটি বাতিকগ্রস্থতা। সংগঠন উৎসবের দার্শনিক বিষয়টি দেখে না, তার তা দেখার দরকারও নেই। কারণ প্রতিটি সংগঠন নিজেদের দর্শনের আলোকে নিজেদের কর্ম-পদ্ধতি ঠিক করে। উৎসব যখন ব্যক্তির আচারে আসে, তখন সেখানে একটি বড়ো দর্শনের প্লাটফর্ম তৈরি হয়। না, আমি বলছি না যূথবদ্ধতার বাইরে গিয়ে কথা বলতে হবে। আমি বলছি, ব্যক্তির চিন্তার ধারায় সিক্ত হবার মতো একটি জায়গা থাকতে হবে। তা না থাকলেই বিপদ। মৌলবাদের চাষ প্রথমে হয় ব্যক্তির মধ্যে, ব্যক্তি থেকে একটি সংগঠনের মাধ্যমে তা ছড়ায় বিষবাষ্পের মতো সমস্ত সমাজে। সুতরাং আলোকিতো যে দর্শন, যে দর্শন আমার চেতনার, তারও চর্চা হতে হবে ব্যক্তির মননে, পরে তা সংগঠনের হাত ধরলো কি ধরলো না, সেটি গুরুত্বপূর্ণ না। বরং ব্যক্তি সেই চর্চাটা প্রতিদিন করছে কি না, সেটাই দেখার বিষয়। নববর্ষ কিংবা আমাদের অন্যান্য জাতীয় উৎসবগুলোর যে দর্শন, তা নিয়ে আলোচনা করে না আমাদের সংগঠনগুলো। কারণ অতো সময় তার নেই। তার আরও নানা কাজ আছে। নানা কর্মসূচী আছে। কিন্তু ব্যক্তি এখানে গভীরে প্রবেশ করতে পারে। তার পক্ষেই সম্ভব এর মাধ্যমে একটি চেতনাগত পরিবর্তন আনার, প্রথমে নিজের, এবং পরে অন্যের। সংগঠনকে নানা হিশেব কষতে হয়, ব্যক্তির হিশেব কষতে হয় না। যেমন ধরা যাক, রমনার বটমূলে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের কেনো স্মরণ করা হয় না, তার একটি ব্যাখ্যা হয়তো ছায়ানট দিতে পারবে। কিন্তু সে ব্যাখ্যাটা গ্রহণযোগ্য হবে না আমার কাছে, বা ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই। কিন্তু আমার মতে, এই দিনটিতে তাঁদের স্মরণ করতে হবে, মৌলবাদকে মনে করিয়ে দিতে হবে- তোমার যে হিংস্রতা, তা আমি মনে রেখেছি, আমি তার জবাব দেবার জন্যই এসেছি রমনার বটমূলে। প্রতিমুহূর্তে লড়াই করতে হবে মৌলবাদের দর্শনের সঙ্গে। প্রতিমুহূর্তে লড়াই করতে হবে চেতনা আর চিন্তার ক্ষুরধারা দিয়ে। যতোক্ষণ তা না হবে, ততোক্ষণ কেউ না কেউ লিখবে- আমাদের মেমোরিটা আসলে গোল্ডফিশ মেমোরি।
এই সংস্কৃতির ধারাটাই আমার মূলধারা। বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ করেছে, কেবল সম্মুখসমরই নয়- এর একটি বড়ো অংশ হলো বাঙালির সাংস্কৃতিক উদ্বোধন। মুক্তিযুদ্ধ তাই আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক লড়াইয়ের নাম, আমার দার্শনিক লড়াইয়ের নাম, আমার চেতনার লড়াইয়ের নাম। এ সত্যের চেয়ে বড়ো কিছু নেই। কেবল উদযাপন কখনও কোনো লড়াইয়ের স্মারক হতে পারে না। উদযাপন-সার হলে বুঝতে হবে, আমাদের পথটা ঠিক হচ্ছে না। আমাদের লড়াইটা নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনাচরণে বাঙালির গভীর দর্শনের ইতিহাস লালন করলে দেখা যাবে, এমনিতেই মৌলবাদীরা ভীত হয়ে পড়ছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে যদি সে চর্চাটা অব্যাহত থাকে, তাহলে দেখা যাবে- আমাদের মধ্যে একটি ঐক্য স্থাপিত হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার ঐক্য, জনপ্রতিনিধির সঙ্গে জনমানুষের ঐক্য, প্রশাসনের সঙ্গে তৃণমূলের ঐক্য, রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতির ঐক্য। সে ঐক্যের মূল ভিত হলো- আমার সংস্কৃতি, আমার ইতিহাস, আমার দর্শন, আমার মুক্তিযুদ্ধ। মৌলবাদীরা এই ঐক্যের কাছে নস্যি। কারণ তাদের যে ঐক্য, তা কেবলই দর্শনভিত্তিক না, সেখানে অর্থনৈতিক বিষয় আছে, সেখানে বোমা-বারুদের বিষয় আছে, সেখানে জঙ্গীবাদের বিষয় আছে। অতএব সকলে যদি সেই অপশক্তিগুলো কীটসম বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে পারে, তবেই দেখা যাবে- সারা বাঙলায় এদের আর কেউ নেই। অর্থমন্ত্রী যদি বলেন- ইসলামী ব্যাঙ্ক জঙ্গী তৎপরতায় অভিযুক্ত; তবেই জনগণের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর ঐক্য স্থাপিত হবে। তখন মন্ত্রণালয় হয়ে উঠবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিতে বলিয়ান শহিদ মিনার। ছায়ানট যদি বলে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সকল কূপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে, সকল অপশক্তিকে রবীন্দ্রনাথের সূর্যমুখী গান দিয়েই মোকাবেলা সম্ভব, তখন তারাই ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে স্মরণ করবে সেই বোমাহামলায় নিহত স্বজনদের। তারা আমারই স্বজন, আমারই সহযোদ্ধা। মৌলবাদে আজ সে আক্রান্ত, কাল তো আমিও আক্রান্ত হতে পারি। সুতরাং আমার তো দার্শনিক ভিত্তিতে আস্থা রাখতে হবে। সেই আস্থার জায়গা সম্প্রসারিত হবে আমাদের সকলের ঐক্যে। সেই পর্বতসম ঐক্যের সামনে মৌলবাদ কিছুই না, কিচ্ছু না।
অনেক ফাল্গুনে আমরা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়েছি, হয়েছি বহুগুণ। আসছে নববর্ষে আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো। বাঙলার সংস্কৃতি, বাঙলার গভীর দার্শনিক চিন্তা, বাঙলার ইতিহাস, বাঙলার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা হাতে হাত রেখে যে ঐক্য গড়ে তুলবো- তারই আরেক নাম হবে- বাঙলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাঙলাদেশ।