শিল্পী হায়দার হোসেনের গাওয়া ‘৩০ বছর’ গানটি শুনে তার ফাইস্যা গেছি অ্যালবামের গানগুলো এক বন্ধুর কাছ থেকে চেয়ে নিই। অ্যালবামের গানগুলোর মধ্যে ‘শব্দার্থ’ গানটি শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। এ গানের কিছু লাইন শুনে ‘৩০ বছর’ গানের শিল্পী হায়দার হোসেনকে কেবল হায়দার হোসেন মনে হয়। এ গানের একস্থানে তিনি বলেছেন,
শহিদ কাকে বলে… হউক সে হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান/ কোনো আততায়ীর হাতে যায় যদি তার প্রাণ…আখিরাতে কী হবে তা নিয়ে কে ভাবে…
অর্থাৎ তিনি একটি ধর্মীয় পার্থক্যের ইঙ্গিত করেছেন। কিন্তু কেনো? ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষাধিক বাঙালি শহীদ হয়েছেন- তাঁরা যে কোনো ধর্মের হতে পারেন, কিন্তু তাঁদের অমর আত্মত্যাগের মহিমাকে আমরা কি শহীদের মর্যাদা দেবো না? এমন সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে একজন শিল্পী ভাবতে পারেন!
গানটির আরেক স্থানে তিনি মুক্তমনের মানুষদের সম্পর্কে বলেছেন,
…ভাবখানা যেনো তারা জ্ঞানের বোদ্ধা, ধর্মের বিধি নিষেধ করে না তোয়াক্কা, আযান যার কানে সুমধুর বানী নয়, মুক্তমনের তারাই তো পরিচয়।
এ বক্তব্য কেবল যে গ্রহণযোগ্য নয়, তা-ই না, এমন নিকৃষ্টজনক সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী বক্তব্য ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকদের ফতোয়ার মতো প্রতিবাদযোগ্য। হায়দার হোসেন সম্ভবত ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ আর ‘ধর্মহীনতার’ পার্থক্য বোঝেন না। আর একজন ব্যক্তি মানুষের বিশ্বাস অবিশ্বাসকে প্রশ্ন করার আপনি কে? ধর্ম বিশ্বাস বা অবিশ্বাস যে কোনো ব্যক্তির একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়, সেটা হায়দার হোসেন এত বড়ো শিল্পী হয়েও জানেন না?
এছাড়া এ গানের আরেকটি কথা এরকম যে,
মনের ভাবখানা অকপট প্রকাশে, কোনো কমিনি যদি মাথার দাম হেঁকে বসে…
এ উস্কানিমূলক বক্তব্যটি কাদের জন্যে? আপনি কি তবে মৌলবাদীদের কতল করার সন্ত্রাসীপনায় ঘি ঢালতে চাইছেন?
আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জানাতে চাই, বাঙলা গান আমাদের মনের বারান্দায় দুর্লভ এক চিলতে রোদ। নতুন একটি গানের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। আজো আমাদের হৃদয়ে জাগ্রত আছে সেই গানের কথা, “…আমরা সবাই বাঙালি”। আপনার প্রতি অনুরোধ বাঙালির সঙ্গীতে বিভক্তির সীমারেখা এঁকে দেবেন না। সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাঙলা সঙ্গীতের সুবিশাল জগতকে প্রত্যক্ষ করা যায় না।