ঠিক আভিধানিক অর্থকে মাথায় রেখে এখানে ‘রক্ষক’ কিংবা ‘ভক্ষক’ শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছে আস্থার মাপকাঠি বিবেচনা করে। বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিশেবে আমি কতোটা আস্থা রাখতে পারি আমার রাষ্ট্র কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোর উপর? এ প্রশ্নটি খুঁজতে গিয়েই লেখাটির সূত্রপাত। চারপাশে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো বিষয়ই হতে পারতো এ লেখার প্রভাবক, কিন্তু গত ৯ সেপ্টেম্বরে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাই এ লেখাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইন সংশোধন করে বাক-স্বাধীনতার উপর যে কালো পর্দা টেনে দেয়া হয়েছে, তার প্রথম অন্ধকার চার ব্লগারের বিরুদ্ধে আদালতের অভিযোগ গঠন। এই ব্লগারদেরকে গ্রেফতার এবং শেষ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে রাষ্ট্র ঠিক কী প্রমাণের চেষ্টা করছে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্মকে কটাক্ষ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তারপর এ অভিযোগকে কেন্দ্র করেই সংশোধন আনা হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি আইনে। কিন্তু যা ঘটে চলেছে, তা আদতে বাংলাদেশকে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে? সামনের দিকে, না কি পেছনে- মধ্যযুগের দিকে?
এ কথা ঠিক যে- স্বাধীনতার যেমন সত্য, তেমনি সত্য স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে পারার ক্ষমতা। বাক-স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। রাষ্ট্রের যেমন নাগরিকের বাক-স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করা উচিত, তেমনি নাগরিকেরও কর্তব্য তাঁর বাক-স্বাধীনতাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা। এখানে রাষ্ট্র ও নাগরিক- উভয়ের জন্যই সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা রয়েছে সংবিধানে। কিন্তু নাগরিকের ক্ষেত্রে কেবল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাই চূড়ান্ত নয়; কেননা নাগরিক শেষ পর্যন্ত ব্যক্তি মানসে সীমাবদ্ধ যা পরিচালিত হয় তাঁর বিবেক-বোধ ও মনন দ্বারা। ব্যক্তির নিজস্ব দর্শন থাকতে পারে, তার পক্ষে তিনি যুক্তিও দেখাতে পারেন। আর ব্লগ হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম, যেখানে সকলের মিথষ্ক্রিয়ায় একটি সুষ্ঠু আলোচনার প্লাটফর্ম তৈরি হয়। এ প্লাটফর্মটি অবশ্যই জ্ঞানভিত্তিক, সুচিন্তিত মতামতের সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়ানো এবং যুক্তিনির্ভর। এতে একদিকে যেমন পারস্পরিক যোগাযোগ একটি ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে, তেমনি এ আলোচনা থেকে উপকৃত হচ্ছে অন্যান্যরাও। এখানে একটি বিষয় বলে রাখা দরকার, ব্লগে একজন ব্লগার কেবল তার মতামত প্রকাশ করতে পারেন কিংবা ভিন্ন কোনো মতের সঙ্গে যৌক্তিক পন্থায় দ্বিমত প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু কোনো ব্লগার কিংবা ব্লগ কর্তৃপক্ষই তাদের নিজেদের চিন্তাকে অন্য কারোর উপর চাপিয়ে দেন না। পাশ্চাত্যে ব্লগ অনেকটাই ব্যক্তিগত ডায়রির মতো ব্যবহৃত হয়। বাঙলাদেশে যদিও কমিউনিটি ব্লগিং- এর চর্চাই জনপ্রিয়, তারপরও এখানে অনেকেরই রয়েছে ব্যক্তিগত ব্লগ। বাঙলাদেশে ব্লগ কনসেপ্টটি কেবল ব্যক্তিগত ডায়রির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাজনীতি, অর্থনীতি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন, সংস্কৃতিসহ নানা বিষয় নিয়ে কাজ করছেন বাঙলাদেশের ব্লগাররা। ব্লগের সবচেয়ে বড়ো সাফল্যটি চিহ্নিত করার সময় হয়তো এখনও আসেনি, কিন্তু নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দেয়া এবং মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির জাতীয়তাবাদ উন্মেষের প্রতিটি আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন মিথ্যাচারের জবাবে বাঙলা ব্লগ অপ্রতিম ভূমিকা পালন করে আসছে। বাঙলা ব্লগ এবং ব্লগাররা ঠিক কতোটুকু কার্যকর ভূমিকা পালন করছে প্রতিনিয়ত, তা আজকে হয়তো মানুষ বুঝে উঠতে পারছেন না, কিন্তু একদিন ঠিক বুঝবেন। সময় গেলে সাধন হয়তো হয় না, কিন্তু বাঙালির বোধদয় তো হয়!
এই ব্লগারদের গ্রেফতার করা এবং তাঁদেরকে আসামী করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পেছনে কতোটা রাজনৈতিক স্বার্থ খেলা করেছে বা এখনও করছে, তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে আমাদের সামনে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে ধর্মের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করার। অভিযোগটি আনা হয়েছে এমন সময়, যখন সারাদেশে সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে প্রজন্মের তীব্র গণ-আন্দোলনে বাঙলাদেশ এক অগ্নিগর্ভ ভিসুভিয়াস। ব্লগিং এবং অনলাইনের অভিজ্ঞতা যাঁদের আছে, তাঁরা প্রত্যেকেই জানেন- জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের অনলাইনে একটি সাধারণ পন্থা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষদের সরাসরি ‘নাস্তিক’, ‘মুরতাদ’ বলে চিহ্নিত করা। কেবল অনলাইনেই নয়, রাজপথের আন্দোলনেও তারা একই পদ্ধতি অনুসরণ করে। প্রসঙ্গত মনে করা যায়, উনিশশো একাত্তর সালে জামায়াতে ইসলামের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুরতাদ’, ‘ভারতীয় চর’, ‘অনুপ্রবেশকারী’ ইত্যাদি নানা ধরণের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। নব্বই দশকের প্রথমদিকে যখন শহিদ জননী জাহানারা ইমাম যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেন তখনও ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নেতা-কর্মীদের ‘নাস্তিক’ বলা হয়েছে। সুতরাং জামাত-শিবিরের এই অপচেষ্টাটি বহু পুরোনো। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হবার পরও একইভাবে সে-ই পুরোনো মিথ্যাচার শুরু করে। ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হয়। হেফাজতে ইসলাম নামের একটি উগ্রবাদী ধর্মান্ধ সংগঠন নানা সহিংস আষ্ফালন শুরু করে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি অনলাইন গণমাধ্যম চার ব্লগারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি সংগঠনের দাবির প্রেক্ষাপটেই রাজধানীর বিভিন্নস্থান থেকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয় ব্লগারদের। বিষয়টি কারোরই অজানা নয়। হেফাজতে ইসলামের মতো একটি সাম্প্রদায়িক জঙ্গী সংগঠনের দাবি হঠাৎ কী কারণে রাষ্ট্রের কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো, তা বোধগম্য নয়। রাষ্ট্র কী তবে অন্য কোনো অঙ্কের হিশেব কষতে ব্যস্ত?
‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’- এ বোধটি ছিলো মুক্তিযুদ্ধেও অন্যতম অনুপ্রেরণা। ধর্মের পবিত্রতা ব্যক্তির কাছে এবং নিঃসন্দেহে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস-আচার কিংবা পালনের উপর রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তেমনিভাবে ব্যক্তিও পারেন না অন্য কারও ব্যক্তিগত বিশ্বাসে আঘাত করতে। কিন্তু ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তি করার প্রশ্নে যদি কাউকে দায়ি, সেক্ষেত্রে তার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রয়োজন। আমরা স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই দেখতে পাচ্ছি, কীভাবে ইসলাম ধর্মকে নিয়ে ব্যাবসা করে, নানাভাবে ধর্মকে অবমাননা করেছে মওদুদী অপ-দর্শনপ্রসূত জামায়াতে ইসলাম, এমনকি ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (স)-কে নিয়েও মওদুদীর গ্রন্থে নানা বিভ্রান্তকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এরকম অনেকগুলো উদাহরণ দেয়া যাবে। কটূক্তি কিংবা বিভ্রান্তির প্রশ্নই যদি আসে, তবে এই মওদুদীর অপ-দর্শনপ্রসূত জামাত-শিবিরের এমনকি হেফাজতের বিচার কেনো হবে না?
ক্ষমতাসীন দল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নিজেকে প্রগতিশীল দল হিশেবে পরিচয় দেয়। সন্দেহ নেই, অতীতের নানা ইতিহাস তার এ প্রগতিশীল পরিচয়ই বহন করে। কিন্তু সম্প্রতি উগ্র ধর্মবাদী দলের কথায় আওয়ামী লীগের প্রগতির বিরুদ্ধে যে তৎপরতা, তা আমাদের হতাশ করে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এ দলটি কি তাহলে ভুলে গেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম একটি ছিলো অসাম্প্রদায়িক বাঙলাদেশ। যেখানে বাঙলাদেশের মানুষ- এ পরিচয়েই পরিচিত হবে প্রতিটি নাগরিক, কখনোই ধর্মের পরিচয়ে নয়। ব্লগারদের গ্রেফতারের জন্য সরকার একটি কমিটি গঠন করলো, কিন্তু প্রশ্ন হলো- এ কমিটিতে যারা ছিলেন বা এখনও আছেন, তারা ব্লগের কতোটুকু বোঝেন? ব্লগ বিষয়টি সম্বন্ধে তাদের ধারণা কতোটা স্বচ্ছ? কোনো আইটি বিশেষজ্ঞ, ব্লগার বা অনলাইন এক্টিভিস্টকে এ কমিটিতে রাখা হলো না কেনো? এটাও কি অন্ধত্বে আক্রান্ত হেফাজতে ইসলামেরই অযৌক্তিক দাবি? এক চোখে ব্লগারদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করেছে রাষ্ট্র। ব্লগারদের সঙ্গে কোনো আলোচনাতেই বসেনি রাষ্ট্র, জানতে চায়নি, কীসের ভিত্তিতে, কোন মতাদর্শে ব্লগগুলো চলে থাকে।
একটি বিষয় আমার বারবার মনে হচ্ছে; আমি চাই না আমার ধারণাটি সঠিক হোক। তারপরও চারপাশের দৃশ্যপট আমাকে বাধ্য করছে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে। ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ হয়তো মনে করে থাকতে পারে, যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষদের আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই, সেহেতু চোখ ফেরানো যাক হেফাজতে ইসলামের দিকে। এ কথা ঠিক যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রসূত বাঙলাদেশের জন্য কাজ করার পরিবেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কিছুটা হলেও নিশ্চিত থাকে। কিন্তু তাই বলে, জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে পুঁজি করে যদি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর নষ্ট-ভ্রষ্ট মতামতে কান দেয়, তবে এটাও তার মনে রাখা দরকার যে, জনগণ হয়তো অনন্যোপায়, কিন্তু নিরুপায় নয়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত জনগণের শতকরা হিশেব করলেই বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে যাবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্লগার শব্দটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব এবং সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বাঙলাদেশে ব্লগারদের নিয়ে সরকার যে হিশেব কষার খেলায় মেতে উঠেছে, তা প্রভাব পড়বে পরবর্তী যে কোনো সময়ে। আজকে ধর্মীয় অবমাননা বলে সরকার ব্লগারদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনে রাখা উচিত, ‘সরকার’ শব্দটি সব সময় একই অর্থ ধারণ করে না। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বিভৎস সময়ের কথা আমরা জানি। আমরা দেখেছি মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির মানুষ হিশেবে নিজের মত প্রকাশের জন্য কীভাবে মৌলবাদীদের ন্যাক্কারজনক আঘাতে আহত হতে হয়েছিলো প্রথিতযশা সাহিত্যিক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে। আজাদ স্যারের রক্তমাখা সে-ই ছবি সেদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রকাশিত নির্যাতনের দলিলগুলোতেও ছাপা হয়েছিলো। বর্তমান সরকার যদি ভুলে যায় মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্বের কথা, তবে তাঁদের পুনর্বার মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন- মত প্রকাশের পথে ব্যারিকেড দেয়া মানে প্রগতির পক্ষে দাঁড়ানো যে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির জন্যই হুমকিস্বরূপ।
রাজনৈতিক দল নির্বাচনের চিন্তা করবে, ভোটের চিন্তা করবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে জনগণ ভোট দেবে কিংবা যে দর্শনের পাটাতনে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক দল নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিশেবে প্রমাণ করবে, কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য কাজ করবে- সে-ই দর্শন ও জনগণকে বাদ দিলে কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। জামাত-শিবির-হেফাজতে ইসলামের মতো দেশবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলো একসাথে বাঙলাদেশ বিরোধী অপ-তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের দাবির প্রেক্ষিতে যখন ব্লগারদের গ্রেফতার করা হয়, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যখন দেখি- রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা সগর্বে নিজেদের হেফাজতপুষ্ট বলে দাবি কওে, তখন আমারও কিং লিয়ারের গ্লস্টারের মতো মনে হয়- ‘Tis the times’ plague, when madmen lead the blind.
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি; তুমি ভারসাম্যহীন হয়ো না, অন্ধদের প্রলাপ শুনে তুমি রক্ষক থেকে ভক্ষক হয়ে যেও না। স্বাধীনতার স্বপ্ন-লালিত বাঙলাদেশটির জন্য আমি তোমার চোখেই আমার স্বপ্নমাখা চোখ পেতেছি।