গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের রাজনীতি

সম্প্রতি কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরায় প্রচারিত একটি ডকুড্রামা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান ও তার পরিবারকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই ডকুড্রামাতে প্রধানমন্ত্রীকেও যুক্ত করা হয়েছে নানাভাবে। কিন্তু ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ মূলধারার গণমাধ্যমেও আল–জাজিরার নির্মিত এই ডকুড্রামার নানা মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তির সমালোচনা হচ্ছে তথ্য-প্রমাণসহ। যদিও জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যে কোনো গণমাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানের কপিরাইট…

বিপন্নতাকে কৃষ্ণচূড়ায় পাল্টে ফেলার দশক

বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে গত শতাব্দীর ষাটের দশক এক অবিস্মরণীয় গণজাগরণের দশক। মূলত এই দশকের আলোতেই রচিত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর অলোকসামান্য ঘটনা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। পৃথিবীব্যাপী মুক্তিকামী মানুষের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সর্বকালের এক অখণ্ড অনুপ্রেরণা। বাংলার মানুষের মুক্তিসংগ্রামের যে বীজ সাংস্কৃতিক ভূমিতে রোপিত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর প্রথম পর্বে, তার রাজনৈতিক বিকাশ প্রাপ্তির সময় হিসেবে চিহ্নিত…

এই বাংলার ইতিহাস আপনারা জানেন না?

লেখার শিরোনামটি শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের দেয়া একটি সংবাদ শিরোনামের অংশ। ১৯৬৪ সালের ১৩ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রথম পাতা জুড়ে প্রকাশিত হয়েছিল ‘জুলুম প্রতিরোধ দিবসে’ আওয়ামী লীগের জনসমাবেশের একটি ছবি। জনসমুদ্রের সামনে বক্তব্য রাখছেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার ঠিক উপরেই উদ্ধৃতিচিহ্নের ভেতরে দুটো কমা ও দুটো হাইফেন সহযোগে শিরোনাম নির্ধারণ করেছিলেন সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন। জনসভায় দেয়া…

আওয়ামী লীগ, তুমি পথ হারাইয়াছো?

গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে খেলাফত যুব মজলিশ ঢাকা মহানগরীর এক অনুষ্ঠানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নামে স্থাপিত প্রতিকৃতি-ভাস্কর্য নিয়ে যে ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করেছে— তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ বা প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েনি। আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী দলের…

ধর্ষণের বিচার ও ধর্ষণ-মনস্তত্ত্বের চিকিৎসা

একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশে। রাজপথ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মূলধারার গণমাধ্যমসহ সবক্ষেত্রে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন মানুষ। করোনা মহামারীর সময়ে প্রতিটি সচেতন মানুষ যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করছেন। ইতোমধ্যে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে অপরাধীদের। এই পর্যন্ত চিত্রটি আমাদের পরিচিত। ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি বা কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের পরও একইভাবে সোচ্চার হয়েছিলেন…

‘মহানগর’: দেশভাগের প্রচ্ছন্ন পাঠ

“A women’s place is in the home”— সত্যজিৎ রায়ের মহানগর (১৯৬৩) চলচ্চিত্রে সুব্রত মজুমদারের [অভিনয়: অনিল চট্টোপাধ্যায়] এই সংলাপ বরাবরই সত্যজিৎ আলোচনায় তৎকালীন প্রেক্ষাপটের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা হিশেবে আলোচিত হয়েছে। এই আলোচনার যৌক্তিকতাও আছে। কিন্তু পঞ্চাশের দশকের কোলকাতার পটভূমিতে নির্মিত এই ছবিতে দেশভাগের যে প্রচ্ছন্ন পাঠ— তার ইঙ্গিতও বহন করে ছবিটির শুরুর দিকেই সুব্রত মজুমদারের এই…

রক্তাক্ত লাল নীল দীপাবলি

প্রতি বছর সাতাশে ফেব্রুয়ারি এলে একবার করে ফিরে যাই ২০০৪ সালে; খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিভাবান লেখক ও বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত মুখের সে-ই ছবিটির কথা মনে পড়ে। আজ ষোলো বছর পেরিয়ে গেলেও সেই রক্তের ধারা থামেনি; বরং অধ্যাপক আজাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও কতোগুলো নাম— রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ,…

জেলহত্যা পরবর্তী সংবাদভাষ্য: ইত্তেফাক ও অবজারভার

১৯৭৫ সালের তেসরা নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বাঙলার ইতিহাসে দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয় এই দিনে। বাঙলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম (১৯২৫-১৯৭৫), প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ (১৯২৫-১৯৭৫), মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী (১৯১৭-১৯৭৫) এবং…

সেই অবিনাশী উচ্চারণ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ যদি একটি মহাকাব্য হয়, তবে তার প্রবেশদ্বার হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সেই অবিনাশী উচ্চারণ। একটি মুখবন্ধ—যার মধ্যে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি স্তর-উপস্তর ব্যাখ্যা করা আছে; আছে নির্যাতিত হওয়ার খতিয়ান, নির্দেশনামা, করণীয় এবং অকরণীয়সমূহ। মাত্র ঊনিশ মিনিটের এই পারাবারপ্রতিম ভাষণে জাতির জনক আসলে রচনা করেছিলেন আমাদের স্বাধীনতার সংজ্ঞা, তাকে বিস্তৃত করেছিলেন ‘মুক্তি’র অভিধায়; এবং…

আমাদের শৈশবের পাহারাদার

অনেকের মতো আমিও জানি ফরিদুর রেজা সাগর একজন অসামান্য টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, শিশু সাহিত্যিক এবং দক্ষ সংগঠক। কিন্তু আমি বা আমার মতোন বুকপকেটে শৈশব নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষের দল যেটা জানে, সেটা অনেকেই জানেন না। ফরিদুর রেজা সাগর একটি ট্রাভেল এজেন্সি চালান। মধ্যবিত্ত স্কুলব্যাগ কাঁধে, মর্নিং শিফটের আধঘুমের ক্লাশে আমরা কতোবার তাঁর সঙ্গে বেড়াতে গেছি। এজন্য…

বিপন্নতাকে কৃষ্ণচূড়ায় পাল্টে ফেলার লড়াই

মানবসভ্যতার ইতিহাসে পড়েছি— লৌহ যুগ, তাম্র যুগ, প্রস্তর যুগ, নব্যপ্রস্তর যুগ— গোটা পৃথিবীতে এখন চলছে বিপন্নতার যুগ। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ…সব, সবটাই যেন বিপন্নতার কালো স্কার্ফে মুড়িয়ে দিয়েছে কোনো এক অন্ধ জাদুকর। সে নিজে অন্ধকার দেখতে পায় না বলে স্বীকার করে না আলোর অস্তিত্ব। ফলে বিপন্নতার রাত্রি ক্রমাগত গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে। বিপন্নতার এই…

মনীষার আলো: অভিজিৎ ভাবনা

সংশোধনী লেখাটি বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত হয়েছিলো ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে। সেখানে অভিজিৎ রায়ের জন্মসাল ভুলবশত ১৯৭২ লেখা হয়েছিলো। এর দায়-দায়িত্ব লেখক হিশেবে আমারই। পরবর্তীতে আমার সহযোদ্ধারা এই ভুলটি আমাকে ধরিয়ে দেন কিন্তু বিডিনিউজের প্রকাশিত লেখায় সেটি আর সংশোধন করা হয়নি। এখানে সেটি সংশোধন করা হলো। এই মারাত্মক ভুলের জন্য আমি পাঠকের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।…

ক্ষমাহীন নক্ষত্রের আগুন-স্থানাঙ্ক

এখনও মাথা উঁচু করে তাঁর পোর্ট্রেটের সামনে দাঁড়ালে আমাদের মনে পড়ে— এক সাগর রক্ত সংগ্রাম সাঁতরে পেরিয়ে তবুও কী বিষণ্ন স্বাধীনতার সৈকত! এবং এখনও তাঁর চশমার কাঁচেই আমাদের পড়ে নিতে হয় মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময়ের বিশ্বাস ও বিদ্রুপ; খুঁজে নিতে হয় বিজয় আর বিস্মৃতির অন্তবর্তী শব্দার্থ ও বাক্যরচনাসমূহ। তাঁর জীবনবৃত্তান্ত এ কারণেই নথিভুক্ত হয় আমাদের প্রজন্মের না-দেখা…

পনেরোই আগস্ট: ষড়যন্ত্রের পথ ধরে জন্ম নেয়া ট্র্যাজিডি

শিরোনামটি শুনে কিছুটা সিদ্ধান্তমূলক মনে হলেও, এই লেখাটি মূলত প্রশ্নমূলক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের পনেরোই আগস্ট। বাঙালির জাতির ইতিহাসে এর চেয়ে কলঙ্কজনক কোনো অধ্যায় নেই। বাঙালি জাতি যে একটি অকৃতজ্ঞ জাতি পনেরোই আগস্ট তার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ। এই লেখাটি মূলত সংকলনধর্মী। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট সেই নৃশংসতম রাত্রির প্রেক্ষাপট তৈরির পেছনে…

অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, ৫৭ ধারা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হকের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেছেন তাঁর সহকর্মী, একই বিভাগের অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ। বিভাগের প্রশাসনিক দ্বন্দ্বের জের ধরে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে—গণমাধ্যমসূত্রে এই তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। এর সংযুক্তি আরেকটি তথ্য হচ্ছে, মামলাটি দায়ের করার মাত্র তিনদিন আগেই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এই নিপীড়নমূলক ধারাটি…