বাহাত্তরের দশই জানুয়ারি: স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাষণ

১৯৭১ সালের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধ যদি বাঙলার মানুষের আত্মার অহংকার হয়, তবে তার নথিভুক্ত বিবরণী হতে পারে বাহাত্তরের দশই জানুয়ারি— বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। কেবল স্বাধীন রাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছিলেন এজন্যই নয়, এর সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত দীর্ঘ নয়মাসের গণ-মানুষের সশস্ত্র সংগ্রামের কালানুক্রমিক খতিয়ান। ১৯৭২ সালের ০৭ জানুয়ারি রাতে পাকিস্তানের ফরেন অফিস থেকে জরুরিভাবে বঙ্গবন্ধু ও ড.…

বইমেলা খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন

অমর একুশে বইমেলা বাঙালির এক অলৌকিক পবিত্র আয়োজন। একুশের সূর্যমুখী চেতনাকে ধারণ করে বইমেলা আমাদের মাথা নত না করার এক দৃপ্ত প্রত্যয়। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা উদ্বেল হই বইমেলার তরঙ্গে, আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে নতুন বইয়ের প্রতীক্ষা। সারা বছর এই একটি মেলার জন্য কেবল লেখক-প্রকাশকরাই নন; আগ্রহ নিয়ে বসে থাকেন সারাদেশের নানা প্রান্তের মানুষ। গণমাধ্যম…

ফিফথ কলামিস্ট সংক্রান্ত বিপদ সঙ্কেত

১৯৩৮ সালের কথা। তখন আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য ফিফথ কলাম এন্ড দ্য ফার্স্ট ফরটি নাইন স্টোরিস প্রকাশিত হয়। ফিফথ কলাম হেমিংওয়ের একমাত্র নাটকের নাম যেটি লেখা হয়েছিলো স্পেনের গৃহযুদ্ধ চলার সময়ে। মাদ্রিদ শহরে তখন বোমা পড়ছে। এ ঘটনারও দু বছর আগে অর্থ্যাৎ ১৯৩৬ সালে স্পেনের জাতীয়তাবাদী সামরিক অধিকর্তা এমিলো মোলা ‘ফিফথ কলাম’ শব্দটি প্রথম…

বাঙলা নববর্ষ: ব্রাত্যজনের ভাবনা

নববর্ষ এলেই আমার মধ্যে এক প্রগাঢ় ভাবনার উদয় হয়। আমি ভাবতে শুরু করি- বাঙালির নববর্ষ আসলে বাঙালির চৌকাঠে কতোটা আপন হয়ে আসে। মানে, কতোটা তা উৎসবের, কতোটা তা উদযাপনের, আর কতোটাই বা তার চর্চার। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি যেটুকু বুঝি, তাতে সংস্কৃতি আমার কাছে একটি বড়ো ধারণা। একই সঙ্গে তার মধ্যে যে গভীর বাঙময়ী প্রত্যয়…

‘কেনো’ এবং ‘কেনো নয়’

আমরা সম্ভবত বিনির্মানবাদের জগতে বসবাস করি। অভিমতটি ব্যক্তিগত বলেই এ সম্বন্ধে আমার যুক্তি হলো— সভ্যতার এমন একটি বিন্দুতে আমরা অবস্থান করছি, যেখানে দাঁড়িয়ে আমাদের চিন্তার সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী কোনো ভবিষ্যত আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এর মানে এই নয় যে— একেবারেই ভিন্ন একটি ভবিষ্যত আমরা দেখতে পাই না বা দেখা হবে না তবে আপাত দৃষ্টিতে আমরা পূর্ববর্তী…

অতএব, রক্ষকই অবশেষে ভক্ষক

ঠিক আভিধানিক অর্থকে মাথায় রেখে এখানে ‘রক্ষক’ কিংবা ‘ভক্ষক’ শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছে আস্থার মাপকাঠি বিবেচনা করে। বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিশেবে আমি কতোটা আস্থা রাখতে পারি আমার রাষ্ট্র কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোর উপর? এ প্রশ্নটি খুঁজতে গিয়েই লেখাটির সূত্রপাত। চারপাশে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো বিষয়ই হতে পারতো এ লেখার প্রভাবক, কিন্তু গত…

ডেভিড ম্যাকাচ্চন: আমার একাত্তরের সুহৃদ

কিছুদিন ধরে একজন মানুষ আমায় খুব ভাবিয়ে তুলেছেন। আমার চিন্তার ফ্রেমে বারবার একটি প্রশ্ন রেখে গেছেন— ‘আমি কী বলি নাই?’ তিনি বলেছিলেন, বহুদূরের কণ্ঠস্বরের ক্ষীণ সুরের পালে হাওয়া লাগিয়ে তিনি সত্যিই বলেছিলেন; বলেছিলেন— আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পূর্ব পাকিস্তান থাকবে না— এর ভেতরে একটি নূতন রাষ্ট্র নবজাতকের মতো চিত্কারে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করছে কিন্তু এইটুকু…

পঁচিশে মার্চ ১৯৭১

দৃষ্টিজুড়ে আলো থাকলেই অন্ধকার ঘুচায় না। আঁধারেরও একটা রঙ আছে, তারও একটা সত্তা আছে। ওইটুকু বাদ দিলে যে নিকষ ভয়ঙ্কর রাত্রির পর্দা নামে, তাতে ভয় ধরে; ভয়ার্ত মনের মধ্যে বাসা বাধে শব্দেরা; শব্দগুলোর কান্না পায়, চিৎকার করে কাঁদে, কেবল কাঁদে আর কাঁদে; ইতিহাসের পনেরো খণ্ডে শব্দগুলো আমার বুলেট হয়ে যায়। আমি তোমাদের বিস্তীর্ণ ব্যস্ত জীবনে…

জেনোসাইডের নীরব সাক্ষী

আমার কী নাম? নামফলক দেখে হয়তো বলে দিতে পারবে অনেকেই। কেউ কেউ কপাল কুঁচকে বলবেন- পাথরের আবার নাম! জড় পদার্থের নামের কী দরকার? কিন্তু আমি কি কেবলই জড় পদার্থ? কেবলই কি এক অসাড় চলৎশক্তিহীন পাথর আমি? কেউ কী কখনো আমার পাশ দিয়ে যাবার সময় একবার ফিরে তাকিয়েছো? একবার ভেবে দেখেছো- আমি আসলে কথা কইতে জানি,…

শালপ্রাংসু মহীরূহ অথবা প্রেরণার মাস্টহেড

আজ ১০ ডিসেম্বর। একেবারে গুণে গুণে চল্লিশটি বছর আগে চলে যান। সময়কাল ১৯৭১ সাল। ১০ ডিসেম্বর। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাঙালি— একেবারে চেতনার অগ্নিগর্ভ মশাল জ্বালিয়ে বাঙালি তার স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনছে, জয় বাঙলা ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে দশদিক। একাত্তর সাল বাঙালির নির্ভিক প্রেরণার উৎস; কথাটাকে আরও একটু খোলাসা করা দরকার। বাঙালির আত্ম-পরিচয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামটি শুরু হয় অনেক আগে…

একাত্তরের নারী: অশ্রুবিন্দু ও অগ্নিশিখা

উনিশ শো একাত্তর সালের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধকে নানাভাবে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা এবং অপচেষ্টা— দুটোই হয়েছে বিগত সময়গুলোতে। বলতে দ্বিধা নেই, এখনও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বা এ সম্বন্ধীয় আলোচনা পৌঁছোতে পারেনি আমাদের কাঙ্ক্ষিত জিজ্ঞাসার স্তরে। আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের নানাদিকের আলোচনা চেয়ে একটি ফরমায়েশী আলোচনাই হয়েছে সবখানে। স্বাধীনতার এতো বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-চলচ্চিত্র-সাহিত্য বা অন্য যে কোনো…

আমি আমার আত্মার আত্মীয়দের কথা বলছি

এই লেখাটির ক্ষেত্রে আমার প্রথম প্রেরণা ও অনুসন্ধান ছিল গবেষক সাজিদ হোসেনের গবেষণাগ্রন্থ একাত্তরের যুদ্ধশিশু: কতটা ভালোবাসায় কতটা অবহেলায় বইটি। যুদ্ধশিশুদের ছবিগুলোও তাঁর গ্রন্থ থেকেই নেয়া।   ঘড়ির কাঁটাও মাঝে মাঝে পেছনে ঘুরে; সভ্যতার দীপ্র দুপুরে নামে মধ্যযুগীয় অন্ধকার। সে-ই অন্ধকারে রাজপথে নামে দানব, হুঙ্কারে আতঙ্কিত হয় চারদিক, নেমে আসে মৃত্যু-তুহিন এক প্রকট প্রলয়। ১৯৪৭…

যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা….

এই লেখাটিকে নানাভাবে সাজানো যেতো। কারণ এই ‘নানাভাবের’ বিন্যাস লেখাটি দাবি করে। হতে পারতো- সাতচল্লিশ সালের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত হওয়া দুটি রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ক্যামিস্ট্রি সম্বলিত একটি বর্ণনা, এখানে থাকতে পারতো চৈতন্যলোকের সাথে সাক্ষাৎ মানবতাবাদের একটি যৌগিক কাঠামোর বিন্যাস এবং নিঃসন্দেহে, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ যে একটি অসাধারণ অসাম্প্রদায়িক আখ্যানকেন্দ্রীক এক অনন্য মহাকাব্য- তার একটা সবিস্তারে বর্ণনা এখানে…

মেসিময় দিনটি ছিল ওকাম্পোর কবিতার মতোই

এমনটাই যেনো হবার কথা ছিলো! হাজার হাজার মাইল দূরের দেশ আর্জেন্টিনা থেকে আসবেন মেসি। বাঙালি তাঁকে বরণ করে নেবে তার হাজার বছরের ঐতিহ্যগত আতিথেয়তায়। মেসি তাঁর অনবদ্য জাদুতে মুগ্ধ করবেন বাঙালিকে, সেইসাথে মুগ্ধ হবেন বাঙালির ফুটবল উন্মাদনা আর মেসির জন্যে তুলে রাখা ভালোবাসার আবির মেখে। মেসি কিংবা আজকের আর্জেন্টিনা বাঙালির এই অসামান্য আয়োজনে যারপরনাই মোহিত।…

শহিদ রুমী: আমার ফ্ল্যাশব্যাকে, আমার প্রত্যাশায়

একটি বিশেষ স্টাইলে নিজের তোলা একটি ছবি বাঁধিয়ে রাখার খুব ইচ্ছে আমার। কোমরে হাত, ঘাড়টা আমার ডান হাতের দিকে বাঁকানো। অবশ্য ছবিটা যিনি দেখবেন, তার মনে হবে আমি বাঁ দিকে ঘাড় কাত করে রেখেছি। ছবিটার উপরে অ্যামবুশ করে লিখে রাখা হবে জীবনানন্দ দাশের সে-ই অনন্য কবিতার পঙক্তি, আবার আসিবো ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়.. ..…