১৬ আগস্ট ১৯৭৫: কী বলেছিল সেদিনের গণমাধ্যম?

পনেরোই আগস্ট ১৯৭৫। এক ঘোর কৃষ্ণপক্ষ নেমে এসেছিল বাঙলাদেশের বুকে। জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার যে নারকীয় ঘটনা সেদিন ঘটেছিল, তার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। কিন্তু পঁচাত্তর-পরবর্তী সময় থেকেই বাঙলাদেশে সবচেয়ে প্রচলিত কথা হচ্ছে, “কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল।” সন্দেহ নেই, এ কথাটির মাঝেই রয়েছে একটি বড়ো রকমের ফাঁকি। কারণ, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বেতার…

উদযাপনের পরাকাষ্ঠা, অনুভূতির দৃশ্যায়ন

বাংলার মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস পাঠে আমরা যতটা নিবিড় হই, ততই আবিষ্কার করি— কী অসামান্যতায় তা বিস্তৃত হয়েছিল পৃথিবীর মানবিক ইতিহাসের মানচিত্রে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর জেনোসাইডের বিরুদ্ধে অপারেশন জ্যাকপট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর সমুদ্রবন্দরে পাকিস্তানি জাহাজ অবরোধ, বাংলার মানুষের জন্য বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের বীরত্ব থেকে ফরাসি নাগরিক জ্যঁ ক্যুয়ের ভালোবাসা কিংবা স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে ম্যাডিসন স্কয়ার— বাংলার মুক্তিসংগ্রামের আলোকোজ্জ্বল…

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর: প্রকৃত মধ্যবিত্তের সন্ধানে

বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেরও প্রায় ছিয়াশি বছর আগে ব্রিটিশ আমলাদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় জনগণকে অপ্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। নব-প্রতিষ্ঠিত সেই সংগঠনের তরুণ নেতৃত্বের উদ্দেশে ব্রিটিশ আমলা অ্যালেন অক্টেভিয়ান হিউম একটি চিঠিতে লিখেছিলেন— “এদেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা বুঝতে পারছে না…

প্রজন্মের মননে গেরিলা তৎপরতার কলাকৌশল

বই না বলে গেরিলা অপারেশনের ম্যানুয়াল বলাই বরং ভালো— অন্তত আমার বিবেচনায়। তবে এই প্রচেষ্টা সম্মুখসমরে নয়, প্রজন্মের বিভ্রান্তিকর মগজে আর প্রায় ক্ষয়ে-যাওয়া মননের অলিতে-গলিতে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমরা বুঝি, গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের পায়ের তলার মাটি কেমন আলগা হয়ে গেছে। নরম পলিমাটির বদলে সেখানে ফাঁদ পেতেছে বিভ্রান্তির চোরাবালি। আশাবাদী অগ্রজেরা…

আওয়ামী লীগ, তুমি পথ হারাইয়াছো?

গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে খেলাফত যুব মজলিশ ঢাকা মহানগরীর এক অনুষ্ঠানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নামে স্থাপিত প্রতিকৃতি-ভাস্কর্য নিয়ে যে ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করেছে— তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ বা প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েনি। আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী দলের…

তৎকালীন সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

ওই মহামানব আসে… — ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গানটি রচনা করেছিলেন। খ্রিষ্টিয় পঞ্জিকা অনুযায়ী তারিখটি ছিলো— ১৪ এপ্রিল, ১৯৪১— অর্থাৎ রবীন্দ্র প্রয়াণের ঠিক ১১৬ দিন আগে। বিদায় বেলার জানালায় দাঁড়িয়ে ভৈরবী রাগের এই গানটি তবে রবীন্দ্রনাথের ভবিষ্যত-দর্শন? কেননা, গানটি রচনার প্রায় ৩০ বছর পর এর একটি অলৌকিক দৃশ্যায়ন ঘটেছে সদ্য স্বাধীন বাঙলাদেশে। ১৯৭২…

সেই অবিনাশী উচ্চারণ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ যদি একটি মহাকাব্য হয়, তবে তার প্রবেশদ্বার হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সেই অবিনাশী উচ্চারণ। একটি মুখবন্ধ—যার মধ্যে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি স্তর-উপস্তর ব্যাখ্যা করা আছে; আছে নির্যাতিত হওয়ার খতিয়ান, নির্দেশনামা, করণীয় এবং অকরণীয়সমূহ। মাত্র ঊনিশ মিনিটের এই পারাবারপ্রতিম ভাষণে জাতির জনক আসলে রচনা করেছিলেন আমাদের স্বাধীনতার সংজ্ঞা, তাকে বিস্তৃত করেছিলেন ‘মুক্তি’র অভিধায়; এবং…

পনেরোই আগস্ট: ষড়যন্ত্রের পথ ধরে জন্ম নেয়া ট্র্যাজিডি

শিরোনামটি শুনে কিছুটা সিদ্ধান্তমূলক মনে হলেও, এই লেখাটি মূলত প্রশ্নমূলক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের পনেরোই আগস্ট। বাঙালির জাতির ইতিহাসে এর চেয়ে কলঙ্কজনক কোনো অধ্যায় নেই। বাঙালি জাতি যে একটি অকৃতজ্ঞ জাতি পনেরোই আগস্ট তার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ। এই লেখাটি মূলত সংকলনধর্মী। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট সেই নৃশংসতম রাত্রির প্রেক্ষাপট তৈরির পেছনে…

তিনি আমাদেরই বঙ্গবন্ধু

কিছুদিন আগে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন স্যারের সম্পাদিত ও সংকলিত একটি বই পড়ছিলাম। ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শিরোনামের দুই খণ্ডের এই বইটির বিষয়বস্তু যেমন গুরুত্বপূর্ণ ও নতুন গবেষণার জন্যে অনুপ্রেরণামূলক, তেমনি নানাবিধ চিন্তা ও বিশ্লেষণে ঋদ্ধ তার ভূমিকা অংশটুকু। ভূমিকার শুরুর দিকে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তৃতার কথা উল্লেখ করে মামুন স্যার লিখেছেন— ‘…একবার…

সাতই মার্চ: অজেয় অর্কেস্ট্রা

৭ মার্চ ১৯৭১– সম্ভবত ইতিহাসের একমাত্র দিন, যা সংজ্ঞায়িত হয়েছে একটি মাত্র ভাষণের দ্বারা এবং বাংলার মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণই হয়ে আছে ইতিহাসের প্রবেশদ্বার। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তৎকালীন উপমহাদেশে বিরাজমান দুটো শক্তিশালী রাজনৈতিক দর্শনের বাইরে এসে এক নবতর রূপ লাভ করেছিল এবং কী আশ্চর্য, তা সমান্তরালে হেঁটে এসে উন্নীত হয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। ব্রিটিশ…

বাহাত্তরের দশই জানুয়ারি: স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাষণ

১৯৭১ সালের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধ যদি বাঙলার মানুষের আত্মার অহংকার হয়, তবে তার নথিভুক্ত বিবরণী হতে পারে বাহাত্তরের দশই জানুয়ারি— বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। কেবল স্বাধীন রাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছিলেন এজন্যই নয়, এর সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত দীর্ঘ নয়মাসের গণ-মানুষের সশস্ত্র সংগ্রামের কালানুক্রমিক খতিয়ান। ১৯৭২ সালের ০৭ জানুয়ারি রাতে পাকিস্তানের ফরেন অফিস থেকে জরুরিভাবে বঙ্গবন্ধু ও ড.…

এলিজি নয়, তাঁর সূর্যমুখী দর্শন ও আমাদের রাজনীতির বাস্তবতা

কী এক অলৌকিক সমাপতন! ১৯২০এর যে চৈত্রের দিনে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীর তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু, প্রায় তখনই মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে সত্যাগ্রহ আন্দোলন ভারতের শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হিসেবে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। বঙ্গবন্ধু তাহলে সত্যাগ্রহ দর্শনের সমবয়স্ক! আর তাই হয়তো বাংলার মানুষের জাতীয়তাবাদ উন্মেষের প্রতিটি আন্দোলনের বাঁক নির্মাণ করে একটি…

শ্রদ্ধেয় আনিসুজ্জামান স্যার: আমি প্রতিবাদ করছি

গত একুশে আগস্টে দৈনিক জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় একটি চমৎকার আলাপচারিতার বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যারের সঙ্গে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সব্যসাচী বসু রায়ের আলাপচারিতাই ঢাকার কোন প্রত্যাশাই পূরণ করেনি দিল্লী শিরোনামে উঠে এসেছে পত্রিকাটির পাতায়। নিঃসন্দেহে একটি প্রাণবন্ত আলাপচারিতার ছবি স্পষ্ট ভেসে ওঠে প্রকাশিত সংবাদটির মাধ্যমে। জানা যায়, এই আলাপচারিতাটি প্রথমে প্রকাশিত…

বিভ্রমটা কোথায়- দৃষ্টিতে, চিন্তায় না নৈতিকতায়?

এক সুসময় আর দুঃসময় হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। খটকা লাগলো? মনে হলো, এটা কী করে হয়? হয়, কখনও কখনও হয়। যখন পুড়ে যায় সবকিছু, বিধ্বস্ত হয় সভ্যতার নিটোল ভিত্তি, তখন বৃষ্টির স্রোতেই তা সবুজ হয় আবার, গড়ে ওঠে মানুষের আবাস। তখন কেউ কেউ স্বস্তিবোধ করেন, আবার কেউ কেই আছেন, ভাবেন- এ আবার বানের লক্ষণ নয়…

পঁচিশে মার্চ ১৯৭১

দৃষ্টিজুড়ে আলো থাকলেই অন্ধকার ঘুচায় না। আঁধারেরও একটা রঙ আছে, তারও একটা সত্তা আছে। ওইটুকু বাদ দিলে যে নিকষ ভয়ঙ্কর রাত্রির পর্দা নামে, তাতে ভয় ধরে; ভয়ার্ত মনের মধ্যে বাসা বাধে শব্দেরা; শব্দগুলোর কান্না পায়, চিৎকার করে কাঁদে, কেবল কাঁদে আর কাঁদে; ইতিহাসের পনেরো খণ্ডে শব্দগুলো আমার বুলেট হয়ে যায়। আমি তোমাদের বিস্তীর্ণ ব্যস্ত জীবনে…