আদর্শচ্যুত বাংলা একাডেমি

১৯২৯ সালে এরিক মারিয়া রেমার্কের ‘অল কোয়াইট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ বইটি নিষিদ্ধ করেছিল জার্মানির নাৎসী সরকার। কালো আইনে দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করেছিল ব্রিটিশ সরকার। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ‘নারী’ এবং তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ নিষিদ্ধ করা হয় যথাক্রমে ১৯৯২ ও ১৯৯৩ সালে– বিএনপির শাসনামলে। এছাড়াও বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বাজেয়াপ্ত করা হয় অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘অঘোষিত যুদ্ধের ব্লু প্রিন্ট’ । সম্প্রতি…

বইমেলা খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন

অমর একুশে বইমেলা বাঙালির এক অলৌকিক পবিত্র আয়োজন। একুশের সূর্যমুখী চেতনাকে ধারণ করে বইমেলা আমাদের মাথা নত না করার এক দৃপ্ত প্রত্যয়। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা উদ্বেল হই বইমেলার তরঙ্গে, আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে নতুন বইয়ের প্রতীক্ষা। সারা বছর এই একটি মেলার জন্য কেবল লেখক-প্রকাশকরাই নন; আগ্রহ নিয়ে বসে থাকেন সারাদেশের নানা প্রান্তের মানুষ। গণমাধ্যম…

টকের জ্বালায় দেশ ছাড়লাম, তেঁতুল তলায় বাস

লেখার শিরোনামটি আসলে আমাদের বর্তমান অবস্থারই একটি প্রবচনিক রূপ, সাম্প্রতিক বাঙলাদেশের চালচিত্র। ‘কোথায় দাঁড়িয়ে বাঙলাদেশ?’— এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। মনে হচ্ছে, আমরা প্রত্যেকেই যেনো বাস করছি একটি দুঃস্বপ্নের মধ্যে, ভয়াল মেঘমালার নিচে আমাদের ত্রস্ত চলন। ২০১৫ সালের অর্ধেকও শেষ হয়নি, অথচ তিনজন ব্লগার ও লেখককে হত্যা করা হলো নৃশংসভাবে। ২৬…

ফিফথ কলামিস্ট সংক্রান্ত বিপদ সঙ্কেত

১৯৩৮ সালের কথা। তখন আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য ফিফথ কলাম এন্ড দ্য ফার্স্ট ফরটি নাইন স্টোরিস প্রকাশিত হয়। ফিফথ কলাম হেমিংওয়ের একমাত্র নাটকের নাম যেটি লেখা হয়েছিলো স্পেনের গৃহযুদ্ধ চলার সময়ে। মাদ্রিদ শহরে তখন বোমা পড়ছে। এ ঘটনারও দু বছর আগে অর্থ্যাৎ ১৯৩৬ সালে স্পেনের জাতীয়তাবাদী সামরিক অধিকর্তা এমিলো মোলা ‘ফিফথ কলাম’ শব্দটি প্রথম…

শ্রদ্ধেয় আনিসুজ্জামান স্যার: আমি প্রতিবাদ করছি

গত একুশে আগস্টে দৈনিক জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় একটি চমৎকার আলাপচারিতার বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যারের সঙ্গে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সব্যসাচী বসু রায়ের আলাপচারিতাই ঢাকার কোন প্রত্যাশাই পূরণ করেনি দিল্লী শিরোনামে উঠে এসেছে পত্রিকাটির পাতায়। নিঃসন্দেহে একটি প্রাণবন্ত আলাপচারিতার ছবি স্পষ্ট ভেসে ওঠে প্রকাশিত সংবাদটির মাধ্যমে। জানা যায়, এই আলাপচারিতাটি প্রথমে প্রকাশিত…

বিভ্রমটা কোথায়- দৃষ্টিতে, চিন্তায় না নৈতিকতায়?

এক সুসময় আর দুঃসময় হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। খটকা লাগলো? মনে হলো, এটা কী করে হয়? হয়, কখনও কখনও হয়। যখন পুড়ে যায় সবকিছু, বিধ্বস্ত হয় সভ্যতার নিটোল ভিত্তি, তখন বৃষ্টির স্রোতেই তা সবুজ হয় আবার, গড়ে ওঠে মানুষের আবাস। তখন কেউ কেউ স্বস্তিবোধ করেন, আবার কেউ কেই আছেন, ভাবেন- এ আবার বানের লক্ষণ নয়…

বাঙলা নববর্ষ: ব্রাত্যজনের ভাবনা

নববর্ষ এলেই আমার মধ্যে এক প্রগাঢ় ভাবনার উদয় হয়। আমি ভাবতে শুরু করি- বাঙালির নববর্ষ আসলে বাঙালির চৌকাঠে কতোটা আপন হয়ে আসে। মানে, কতোটা তা উৎসবের, কতোটা তা উদযাপনের, আর কতোটাই বা তার চর্চার। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি যেটুকু বুঝি, তাতে সংস্কৃতি আমার কাছে একটি বড়ো ধারণা। একই সঙ্গে তার মধ্যে যে গভীর বাঙময়ী প্রত্যয়…

‘কেনো’ এবং ‘কেনো নয়’

আমরা সম্ভবত বিনির্মানবাদের জগতে বসবাস করি। অভিমতটি ব্যক্তিগত বলেই এ সম্বন্ধে আমার যুক্তি হলো— সভ্যতার এমন একটি বিন্দুতে আমরা অবস্থান করছি, যেখানে দাঁড়িয়ে আমাদের চিন্তার সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী কোনো ভবিষ্যত আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এর মানে এই নয় যে— একেবারেই ভিন্ন একটি ভবিষ্যত আমরা দেখতে পাই না বা দেখা হবে না তবে আপাত দৃষ্টিতে আমরা পূর্ববর্তী…

অতএব, রক্ষকই অবশেষে ভক্ষক

ঠিক আভিধানিক অর্থকে মাথায় রেখে এখানে ‘রক্ষক’ কিংবা ‘ভক্ষক’ শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছে আস্থার মাপকাঠি বিবেচনা করে। বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিশেবে আমি কতোটা আস্থা রাখতে পারি আমার রাষ্ট্র কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোর উপর? এ প্রশ্নটি খুঁজতে গিয়েই লেখাটির সূত্রপাত। চারপাশে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো বিষয়ই হতে পারতো এ লেখার প্রভাবক, কিন্তু গত…

এই লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে না

কারও ভালো লাগার দায় থেকে লেখাটি লিখছি না। ভালো যে লাগবে না, তা তো শিরোনামেই আমি উল্লেখ করেছি। বাঙলা নববর্ষ নিয়ে ভাবতে গেলে আমার মনে হয়, আমাদের নববর্ষ উদযাপনের ধারটি বদলে যেতে পারতো। বাঙালির ইতিহাস কেবল উদযাপনের নয়, বাঙালির ইতিহাস এক গভীর দার্শনিক চিন্তার ইতিহাস। বাঙালির সবটুকু মহিমান্বিত ধারায় এক অভূতপূর্ব চিন্তারেখা খেলা করে। সেই…

পঁচিশে মার্চ ১৯৭১

দৃষ্টিজুড়ে আলো থাকলেই অন্ধকার ঘুচায় না। আঁধারেরও একটা রঙ আছে, তারও একটা সত্তা আছে। ওইটুকু বাদ দিলে যে নিকষ ভয়ঙ্কর রাত্রির পর্দা নামে, তাতে ভয় ধরে; ভয়ার্ত মনের মধ্যে বাসা বাধে শব্দেরা; শব্দগুলোর কান্না পায়, চিৎকার করে কাঁদে, কেবল কাঁদে আর কাঁদে; ইতিহাসের পনেরো খণ্ডে শব্দগুলো আমার বুলেট হয়ে যায়। আমি তোমাদের বিস্তীর্ণ ব্যস্ত জীবনে…

সেই মায়েদের মা দিবস

মা দিবস শেষ হলো। দিবস উদযাপন অত্যন্ত আনন্দঘন একটি বিষয়। বিভিন্ন দিবসের বিভিন্ন প্রতিপাদ্য- বাঙালি নানাভাবে সেসব দিবস উদযাপন করে থাকেন, গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার পরীক্ষার্থীরা এসব দিবসের প্রতিপাদ্য মুখস্থ করে রাখেন, দিবসকে কেন্দ্র করে হাল আমলের টি-শার্ট, পোস্টার, শুভেচ্ছা কার্ড আরও কতো কী! গণমাধ্যমগুলোতে বিশেষ দিবসের বিশেষ সংবাদ, বিশেষ অনুষ্ঠান। মানে সবকিছু মিলিয়ে উৎসবমুখর জাতির উৎসবের…

আসন্ন নির্বাচন: যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের লড়াই

আজকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সংবাদপত্রে এমনকি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের মধ্যেও যে কথাটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় তা হলো, এবারের নির্বাচনে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের অংশগ্রহণ। জীবনে প্রথমবার ভোটার হতে পারার আনন্দ, দায়িত্ববোধ এবং আসন্ন নির্বাচনে এ বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে একজন নতুন ভোটার হিসেবে লেখাটি লিখছি। আমি জানি, আমার মতো অনেকেরই হয়তো আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে এক রোমাঞ্চকর…

এবারের সংগ্রাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সংগ্রাম

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বপ্ন আর প্রত্যাশার ভিত্তিতে বাঙলাদেশ নামক স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্ম হয়েছিলো, আজ স্বাধীনতার ৩৭ বছর পরও সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ হয়নি, উপরন্তু এ অপ্রাপ্তির সমীকরণে যোগ হয়েছে কিছু ন্যাক্কারজনক চলক, যা কিনা এখন আমাদের সমগ্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেই উপহাস করে চলেছে। বাঙালির স্বাধীনতা অর্জন কেবল নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধই নয়, বরং দীর্ঘ…

স্বাধীনতার ৩৫ বছর- প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির আলকেমি

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে বাঙালি জাতির চেতনায় স্বাধীনতার যে বীজ উপ্ত হয়েছিলো তার মহীরুহ রূপান্তর ঘটে ১৯৭১ সালে, নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। অধিকার আদায়ের দৃপ্ত শপথে, দেশকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হিংস্র কবল থেকে রক্ষা করার জন্য; সেদিন ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলেছিলো বাঙালি; অস্ত্র…