শ্রদ্ধেয় আনিসুজ্জামান স্যার: আমি প্রতিবাদ করছি

গত একুশে আগস্টে দৈনিক জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় একটি চমৎকার আলাপচারিতার বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যারের সঙ্গে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সব্যসাচী বসু রায়ের আলাপচারিতাই ঢাকার কোন প্রত্যাশাই পূরণ করেনি দিল্লী শিরোনামে উঠে এসেছে পত্রিকাটির পাতায়। নিঃসন্দেহে একটি প্রাণবন্ত আলাপচারিতার ছবি স্পষ্ট ভেসে ওঠে প্রকাশিত সংবাদটির মাধ্যমে। জানা যায়, এই আলাপচারিতাটি প্রথমে প্রকাশিত…

বিভ্রমটা কোথায়- দৃষ্টিতে, চিন্তায় না নৈতিকতায়?

এক সুসময় আর দুঃসময় হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। খটকা লাগলো? মনে হলো, এটা কী করে হয়? হয়, কখনও কখনও হয়। যখন পুড়ে যায় সবকিছু, বিধ্বস্ত হয় সভ্যতার নিটোল ভিত্তি, তখন বৃষ্টির স্রোতেই তা সবুজ হয় আবার, গড়ে ওঠে মানুষের আবাস। তখন কেউ কেউ স্বস্তিবোধ করেন, আবার কেউ কেই আছেন, ভাবেন- এ আবার বানের লক্ষণ নয়…

বাঙলা নববর্ষ: ব্রাত্যজনের ভাবনা

নববর্ষ এলেই আমার মধ্যে এক প্রগাঢ় ভাবনার উদয় হয়। আমি ভাবতে শুরু করি- বাঙালির নববর্ষ আসলে বাঙালির চৌকাঠে কতোটা আপন হয়ে আসে। মানে, কতোটা তা উৎসবের, কতোটা তা উদযাপনের, আর কতোটাই বা তার চর্চার। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি যেটুকু বুঝি, তাতে সংস্কৃতি আমার কাছে একটি বড়ো ধারণা। একই সঙ্গে তার মধ্যে যে গভীর বাঙময়ী প্রত্যয়…

‘কেনো’ এবং ‘কেনো নয়’

আমরা সম্ভবত বিনির্মানবাদের জগতে বসবাস করি। অভিমতটি ব্যক্তিগত বলেই এ সম্বন্ধে আমার যুক্তি হলো— সভ্যতার এমন একটি বিন্দুতে আমরা অবস্থান করছি, যেখানে দাঁড়িয়ে আমাদের চিন্তার সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী কোনো ভবিষ্যত আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এর মানে এই নয় যে— একেবারেই ভিন্ন একটি ভবিষ্যত আমরা দেখতে পাই না বা দেখা হবে না তবে আপাত দৃষ্টিতে আমরা পূর্ববর্তী…

উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ

জানি না, এখনও খবরটি জাতীয় গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কি না। দেশে নানা বিতর্ক চলছে, এসবের ফাঁকে এই খবর চাপা পড়ে গেলেও আশ্চর্য হব না। তবে নাগরিক হিসেবে, একজন ব্লগার হিসেবে নিজের কাছে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। ঠিক যেমন পারিনি এর আগে, যখন মানবাধিকার লঙ্ঘন করে গ্রেফতার করা হয়েছিল চারজন ব্লগারকে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে…

অতএব, রক্ষকই অবশেষে ভক্ষক

ঠিক আভিধানিক অর্থকে মাথায় রেখে এখানে ‘রক্ষক’ কিংবা ‘ভক্ষক’ শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছে আস্থার মাপকাঠি বিবেচনা করে। বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিশেবে আমি কতোটা আস্থা রাখতে পারি আমার রাষ্ট্র কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোর উপর? এ প্রশ্নটি খুঁজতে গিয়েই লেখাটির সূত্রপাত। চারপাশে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো বিষয়ই হতে পারতো এ লেখার প্রভাবক, কিন্তু গত…

এই লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে না

কারও ভালো লাগার দায় থেকে লেখাটি লিখছি না। ভালো যে লাগবে না, তা তো শিরোনামেই আমি উল্লেখ করেছি। বাঙলা নববর্ষ নিয়ে ভাবতে গেলে আমার মনে হয়, আমাদের নববর্ষ উদযাপনের ধারটি বদলে যেতে পারতো। বাঙালির ইতিহাস কেবল উদযাপনের নয়, বাঙালির ইতিহাস এক গভীর দার্শনিক চিন্তার ইতিহাস। বাঙালির সবটুকু মহিমান্বিত ধারায় এক অভূতপূর্ব চিন্তারেখা খেলা করে। সেই…

পঁচিশে মার্চ ১৯৭১

দৃষ্টিজুড়ে আলো থাকলেই অন্ধকার ঘুচায় না। আঁধারেরও একটা রঙ আছে, তারও একটা সত্তা আছে। ওইটুকু বাদ দিলে যে নিকষ ভয়ঙ্কর রাত্রির পর্দা নামে, তাতে ভয় ধরে; ভয়ার্ত মনের মধ্যে বাসা বাধে শব্দেরা; শব্দগুলোর কান্না পায়, চিৎকার করে কাঁদে, কেবল কাঁদে আর কাঁদে; ইতিহাসের পনেরো খণ্ডে শব্দগুলো আমার বুলেট হয়ে যায়। আমি তোমাদের বিস্তীর্ণ ব্যস্ত জীবনে…

জেনোসাইডের নীরব সাক্ষী

আমার কী নাম? নামফলক দেখে হয়তো বলে দিতে পারবে অনেকেই। কেউ কেউ কপাল কুঁচকে বলবেন- পাথরের আবার নাম! জড় পদার্থের নামের কী দরকার? কিন্তু আমি কি কেবলই জড় পদার্থ? কেবলই কি এক অসাড় চলৎশক্তিহীন পাথর আমি? কেউ কী কখনো আমার পাশ দিয়ে যাবার সময় একবার ফিরে তাকিয়েছো? একবার ভেবে দেখেছো- আমি আসলে কথা কইতে জানি,…

যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা….

এই লেখাটিকে নানাভাবে সাজানো যেতো। কারণ এই ‘নানাভাবের’ বিন্যাস লেখাটি দাবি করে। হতে পারতো- সাতচল্লিশ সালের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত হওয়া দুটি রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ক্যামিস্ট্রি সম্বলিত একটি বর্ণনা, এখানে থাকতে পারতো চৈতন্যলোকের সাথে সাক্ষাৎ মানবতাবাদের একটি যৌগিক কাঠামোর বিন্যাস এবং নিঃসন্দেহে, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ যে একটি অসাধারণ অসাম্প্রদায়িক আখ্যানকেন্দ্রীক এক অনন্য মহাকাব্য- তার একটা সবিস্তারে বর্ণনা এখানে…

নীলিমা ইব্রাহিম: বাঙালির নিভৃত নিরঞ্জনা

এক আকাশের দিকে তাকালে ‘সাঙান গগনে ঘোর ঘনঘটা’র কথাই মনে হয়। এ যে আষাঢ় মাস, বর্ষা ঋতু- সে আর পঞ্জিকার পাতা খুলে বলতে হয় না। প্রকৃতিই সময়ের দর্পন হয়ে দেখা দেয়। বর্ষা বাঙালির প্রাণের ঋতু- অনেকভাবেই ভেবেছি কথাটা; সত্যিই এ ঋতু আমাদের ফসলের ঋতু, রবীন্দ্রনাথের ঋতু, পদাবলীর ঋতু আর অবশ্যই কালিদাসের ঋতু। নানা বাঁকে বর্ষা…

শিক্ষায় বাণিজ্যিকীকরণ

মনীষী সক্রেটিস শিক্ষার সংজ্ঞায় বলেছিলেন, ভেতরের সম্ভাবনাকে বাইরে নিয়ে আসার মাধ্যমে মিথ্যার অপনোদন এবং সত্যের বিকাশ। অর্থাৎ সামগ্রিক অর্থেই শিক্ষা হলো পদ্ধতিগত জ্ঞানলাভের একটি প্রক্রিয়া, যা বিকশিত ব্যক্তিত্ব এবং মানবিক বোধের পরিপূর্ণ প্রকাশ অব্যাহত রাখে। যে কোনো জাতি গঠনে শিক্ষা, বিশেষত উচ্চশিক্ষা, এক অপরিহার্য উপাদান। তবে এ উচ্চশিক্ষার প্রকৃতি ও উপযোগিতাই নির্ধারণ করবে একটি জাতি…

তাজউদ্দীন আহমদ: জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

ভূমিকার আগের অধ্যায় ২৩ জুলাই। ১৯২৫ সাল। কেমন ছিলো সেদিনের রূপ? সেদিন কি বৃষ্টি ছিলো, কিংবা গরম, রোদের বাড়াবাড়ি সেদিনের মানুষের কাছ কি একটু বেশি মনে হয়েছিলো? অথবা সেদিনের সেই দিনটিতে শাপলার জলে খেলা করেছিলো শালুক, ম্রিয়মান সন্ধ্যায় দহলিজে বসে কেউ কি আপন মনে নিবিড় প্রার্থনায় মগ্ন ছিলো? সেদিনের দৃশ্যে সবুজের সাথে গাঢ় লালের একটি…

আমার ভাষার চলচ্চিত্র

বনে আছে দ্বন্দ্বের বিন্যাস, নাগরিকতার সঙ্গে লৌকিক জীবনের। কোনো মানুষই ঠিক সে-অর্থে অখণ্ড নয়, প্রত্যেকের মধ্যেই আছে অপূর্ণতা। এ অপূর্ণতাকে প্রেক্ষণবিন্দুতে রেখেই শিল্পসৃষ্টি আর সেই সৃষ্টিকে ধারণ করা। বৃহৎ অর্থে শিল্পের এ বিশাল আকাশ জুড়ে থাকা রঙধনুর সবচেয়ে উজ্জ্বল রঙটি হয়তো চিহ্নিত করা যাবে না, কিন্তু ভাবনার পরিসীমাটা যদি বাঙালি সমাজ আর বাঙালি মধ্যবিত্তের মানসপট…

সেই মায়েদের মা দিবস

মা দিবস শেষ হলো। দিবস উদযাপন অত্যন্ত আনন্দঘন একটি বিষয়। বিভিন্ন দিবসের বিভিন্ন প্রতিপাদ্য- বাঙালি নানাভাবে সেসব দিবস উদযাপন করে থাকেন, গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার পরীক্ষার্থীরা এসব দিবসের প্রতিপাদ্য মুখস্থ করে রাখেন, দিবসকে কেন্দ্র করে হাল আমলের টি-শার্ট, পোস্টার, শুভেচ্ছা কার্ড আরও কতো কী! গণমাধ্যমগুলোতে বিশেষ দিবসের বিশেষ সংবাদ, বিশেষ অনুষ্ঠান। মানে সবকিছু মিলিয়ে উৎসবমুখর জাতির উৎসবের…