সত্যজিতের মেঘদূতেরা

এই মুহূর্তে সত্যজিৎ রায়ের জনঅরণ্য (১৯৭৫) ছবিটির নায়ক সোমনাথের কথাই মনে পড়ছে। সোমনাথ ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন এবং এটাই সম্ভবত ইতিহাসের অনন্য কৌতুক যে, সত্তর দশকে কোলকাতা শহরের প্রখ্যাত লোডশেডিং তার ডিগ্রিটিকে অবান্তর করে দিয়েছিল। দৃশ্যের এইটুকু ভাষ্য— আমার মতে— সত্যজিৎ রায়ের পক্ষে চূড়ান্ত রাজনৈতিক বক্তব্য। কিংবা মনটাকে সত্যজিতের সৃষ্টির সঙ্গে আরেকটু টেনে যদি ষাটের দশকে…

Details

মদন তাঁতির মুদ্রাদোষ

খ্রিস্টের রক্ত তখনও করবী ফুলের মতো লাল হয়ে জ্বলে ওঠেনি। মৃত্যু তার ঊরু বিস্তার করেছে লন্ডন, প্যারিস, বার্লিন, কোলকাতা অথবা ঢাকায়। কবিতার কয়েকটি পঙক্তিতে লোরকা নিজের ভবিতব্য দেখতে পেলেন স্পেনে— তখন ১৯৪২ সাল; রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রস্থানের পথে পথে পড়ে আছে সাহিত্যের নৈশবিজ্ঞপ্তি, ইতিহাস প্রবেশ করছে বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীর নিদারুণ মন্তাজে। আর কিছুদিন বাদেই ইউরোপের ভূগোল থেকে মুছে…

Details

থামিল কালের চিরচঞ্চল গতি

আমাদের শাহীন রেজা নূর ভাইয়ের জাহাজটি এবার বন্দর ছেড়ে গেল। যাঁকে ঘিরে একদিন আবর্তিত হয়েছিল আমার মতো সামান্য কলমচির ঘোরলাগা বিকেল সন্ধ্যাগুলো, আজ তাঁর স্মৃতিসমগ্র ছড়িয়ে আছে চারপাশে— ব্যথাতুর বিষণ্ন, অথচ সদা হাস্যময়। কেননা তুড়ি মেরে জীবনকে তাড়িয়ে নেয়ার ডাকনামই তো ছিল শাহীন ভাই। এ কারণেই বুঝি বসন্তবরণের মাহেন্দ্রক্ষণে প্রকৃতি তাঁর জন্য রচনা করেছে এই…

Details

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের রাজনীতি

সম্প্রতি কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরায় প্রচারিত একটি ডকুড্রামা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান ও তার পরিবারকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই ডকুড্রামাতে প্রধানমন্ত্রীকেও যুক্ত করা হয়েছে নানাভাবে। কিন্তু ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ মূলধারার গণমাধ্যমেও আল–জাজিরার নির্মিত এই ডকুড্রামার নানা মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তির সমালোচনা হচ্ছে তথ্য-প্রমাণসহ। যদিও জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যে কোনো গণমাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানের কপিরাইট…

Details

বিপন্নতাকে কৃষ্ণচূড়ায় পাল্টে ফেলার দশক

বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে গত শতাব্দীর ষাটের দশক এক অবিস্মরণীয় গণজাগরণের দশক। মূলত এই দশকের আলোতেই রচিত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর অলোকসামান্য ঘটনা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। পৃথিবীব্যাপী মুক্তিকামী মানুষের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সর্বকালের এক অখণ্ড অনুপ্রেরণা। বাংলার মানুষের মুক্তিসংগ্রামের যে বীজ সাংস্কৃতিক ভূমিতে রোপিত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর প্রথম পর্বে, তার রাজনৈতিক বিকাশ প্রাপ্তির সময় হিসেবে চিহ্নিত…

Details

এই বাংলার ইতিহাস আপনারা জানেন না?

লেখার শিরোনামটি শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের দেয়া একটি সংবাদ শিরোনামের অংশ। ১৯৬৪ সালের ১৩ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রথম পাতা জুড়ে প্রকাশিত হয়েছিল ‘জুলুম প্রতিরোধ দিবসে’ আওয়ামী লীগের জনসমাবেশের একটি ছবি। জনসমুদ্রের সামনে বক্তব্য রাখছেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার ঠিক উপরেই উদ্ধৃতিচিহ্নের ভেতরে দুটো কমা ও দুটো হাইফেন সহযোগে শিরোনাম নির্ধারণ করেছিলেন সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন। জনসভায় দেয়া…

Details

আওয়ামী লীগ, তুমি পথ হারাইয়াছো?

গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে খেলাফত যুব মজলিশ ঢাকা মহানগরীর এক অনুষ্ঠানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নামে স্থাপিত প্রতিকৃতি-ভাস্কর্য নিয়ে যে ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করেছে— তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ বা প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েনি। আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী দলের…

Details

ধর্ষণের বিচার ও ধর্ষণ-মনস্তত্ত্বের চিকিৎসা

একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশে। রাজপথ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মূলধারার গণমাধ্যমসহ সবক্ষেত্রে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন মানুষ। করোনা মহামারীর সময়ে প্রতিটি সচেতন মানুষ যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করছেন। ইতোমধ্যে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে অপরাধীদের। এই পর্যন্ত চিত্রটি আমাদের পরিচিত। ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি বা কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের পরও একইভাবে সোচ্চার হয়েছিলেন…

Details

জীবনাধিক জীবন

ছবিটির দিকে তাকাই এবং আবিষ্কার করি দেবব্রত বিশ্বাসকে। শিশির মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্নেহাংশু আচার্য, কনক বিশ্বাস ও অন্যান্যদের সঙ্গে তাঁর এই বসে থাকার ভঙ্গিমাই আমাদের কাছে মেলে ধরে দেবব্রত বিশ্বাসের যাবতীয় ইশতেহার। এই ইশতেহার কারিগরের নয়; বরং দ্রষ্টার বিশৃঙ্খলা ও কিমিতি, মৃত্যু ও শূন্যতা, পাপ ও প্রজ্ঞান একই সুরে নিবেদিত হয়েছে অসীমের…

Details

নিখিলের লাশ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের ভাঙা মেরুদণ্ড

নিখিল তালুকদারের পিতার নাম নীলকান্ত তালুকদার। কিন্তু নীলকান্ত তালুকদারের পিতার নাম আমরা জানি না, কিন্তু নিখিল তালুকদার নিশ্চয়ই তাঁর ঠাকুরদার নাম জানতেন। আমাদের পক্ষে সেই নামটি আর জেনে নেয়া সম্ভব নয়; উল্টো ঠিকুজি-কুষ্ঠিসমেত নিখিল তালুকদারকে এই মুহূর্তে মাটিচাপা দিতে পারলেই আমাদের স্বস্তিলাভ সম্ভব। আমাদের আরামদায়ক রাষ্ট্রীয় জীবনের আলুলায়িত রোজনামচায় নিখিল তালুকদার একটি অস্বস্তির নাম। বলছি…

Details

শহিদ জননী, এই চিঠি তোমাকে আমার

শহিদ জননী, কী অলৌকিক সমাপতন! ১৯২৯ সালে যখন আপনি জন্ম নিচ্ছেন— বৈশাখে-নিদাঘে অখণ্ড ভারতবর্ষের মুর্শিদাবাদে; প্রায় তখনই এরিক মারিয়া রেমার্ক তাঁর কারুবাসনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট  উপন্যাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায়। আপনি তাহলে এই অমোঘ উপন্যাসটির সমবয়স্ক! হয়তো এ কারণেই পশ্চিম সীমান্তে হারিয়ে যাওয়া পল ব্যমারের প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহিদ রুমীর…

Details

‘মহানগর’: দেশভাগের প্রচ্ছন্ন পাঠ

“A women’s place is in the home”— সত্যজিৎ রায়ের মহানগর (১৯৬৩) চলচ্চিত্রে সুব্রত মজুমদারের [অভিনয়: অনিল চট্টোপাধ্যায়] এই সংলাপ বরাবরই সত্যজিৎ আলোচনায় তৎকালীন প্রেক্ষাপটের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা হিশেবে আলোচিত হয়েছে। এই আলোচনার যৌক্তিকতাও আছে। কিন্তু পঞ্চাশের দশকের কোলকাতার পটভূমিতে নির্মিত এই ছবিতে দেশভাগের যে প্রচ্ছন্ন পাঠ— তার ইঙ্গিতও বহন করে ছবিটির শুরুর দিকেই সুব্রত মজুমদারের এই…

Details

রক্তাক্ত লাল নীল দীপাবলি

প্রতি বছর সাতাশে ফেব্রুয়ারি এলে একবার করে ফিরে যাই ২০০৪ সালে; খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিভাবান লেখক ও বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত মুখের সে-ই ছবিটির কথা মনে পড়ে। আজ ষোলো বছর পেরিয়ে গেলেও সেই রক্তের ধারা থামেনি; বরং অধ্যাপক আজাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও কতোগুলো নাম— রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ,…

Details

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ঢাকার বাইরের প্রথম সংকলন

বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ব্যাপ্ত ইতিহাস বর্তমানে নানা বইপত্রে স্থান পাচ্ছে। একটা সময় পর্যন্ত ধারণা করা হতো রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-কেন্দ্রীক; বড়ো জোর কিছু শহরকেন্দ্রীক আন্দোলন। কিন্তু গত এক দশকের গবেষণায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের নানামুখী দলিল-দস্তাবেজ পর্যালোচনা করে বাঙালির আত্মপরিচয় উন্মেষের এই প্রথম আন্দোলনের সঙ্গে বাঙলার নানাপ্রান্তের মানুষের অংশগ্রহণের দিকগুলো উঠে এসেছে। ভাষা আন্দোলনের আটষট্টি বছর…

Details

তৎকালীন সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

ওই মহামানব আসে… — ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গানটি রচনা করেছিলেন। খ্রিষ্টিয় পঞ্জিকা অনুযায়ী তারিখটি ছিলো— ১৪ এপ্রিল, ১৯৪১— অর্থাৎ রবীন্দ্র প্রয়াণের ঠিক ১১৬ দিন আগে। বিদায় বেলার জানালায় দাঁড়িয়ে ভৈরবী রাগের এই গানটি তবে রবীন্দ্রনাথের ভবিষ্যত-দর্শন? কেননা, গানটি রচনার প্রায় ৩০ বছর পর এর একটি অলৌকিক দৃশ্যায়ন ঘটেছে সদ্য স্বাধীন বাঙলাদেশে। ১৯৭২…

Details